বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার ওপর নির্মিত ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
উত্তম-সুচিত্রা অভিনীত ছবি সাড়া জাগানো ছবি ‘সবার উপরে’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫৫ সালে। এ ছবিতে খুনের মিথ্যা অভিযোগে ও বানোয়াট সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ভুল বিচারের শিকার হন নিরপরাধ ছবি বিশ্বাস। ১২ বছর বিনা অপরাধে জেল খাটার পর উকিল পুত্রের জোর আইনি লড়াইয়ে বেকসুর খালাস পাওয়ার পর প্রশান্ত চ্যাটার্জির (অভিনয় ছবি বিশ^াস) মুখ থেকে উচ্চারিত হয়েছিল ‘ফিরিয়ে দাও আমার সেই বারোটি বছর’। দীর্ঘদিন পরও সেই অন্তর মথিত করা সংলাপটির কথা অনেকের মনে আছে। বাস্তবে বাংলাদেশের জোবেদ আলি জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর সে রকম কোনো দাবি করেননি। তবে তিনি আক্ষেপ করে বলেছেন, তার জীবনের হারানো ১৩টি বছর কে ফিরিয়ে দেবে! ভুল বিচার ও দ-ের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ আমলেও প্রতিকার হয়নি, পাকিস্তান আমলেও হয়নি। বাংলাদেশ আমলেও হয়েছে বলে জানা নেই। জোবেদ আলি অবশ্য ভুল বিচার নয়Ñসাতক্ষীরার তৎকালীন অতিরিক্ত দায়রা জজের অযৌক্তিক আচরণের শিকার হয়ে অকারণে এক যুগেরও বেশি সময় জেল খেটেছেন।
গত ৩ মার্চ কয়েকটি দৈনিকে প্রকাশিত জোবেদ আলির খবরটি অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। খবরে বলা হয়, মামলা থেকে খালাস পাবার পরও ১৩ বছর তাকে জেলে কাটাতে হয়েছে। উচ্চ আদালত থেকে প্রেরিত তার বেকসুর খালাসের আদেশ জেলা পর্যায়ের বিচারক কার্যকর করার জন্য জেলখানায় না পাঠিয়ে রেকর্ডরুমে পাঠিয়ে দেন। তা আর জেলখানায় পৌঁছেনি। ফলে জোবেদ আলিকে আরো একযুগেরও বেশি সময় জেলে থাকতে হয়। অবশেষে ২ মার্চ তিনি মুক্তি লাভ করেন।
জোবেদ আলি বিষয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া থানার কয়রা গ্রামে জোবেদ আলি বিশ^াসের প্রথম স্ত্রী ৮ বছরের লিলি ও ৫ বছরের রেক্সোনা নামের দুটি মেয়ে রেখে বিষপানে আত্মহত্যা করেন। তিনি পরে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। ১৯৯৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি দু’মেয়েকে নিয়ে তালা থানার মানিকহার গ্রামে তাদের নানা বাড়িতে যান। পরে তিনি তাদের স্থানীয় বাজারে নিয়ে যান ও বিস্কুট খাওয়ান। পরে শ^শুর বাড়ি ফিরলে বমি করতে করতে লিলি মারা যায়। তাকে বিষ মিশানো বিস্কুট খাইয়ে মেরে ফেলা হয়েছে বলে তাদের মামা অভিযোগ করার পরিপ্রেক্ষিতে ৬ সেপ্টেম্বর তালা থানা পুলিশ জোবেদ আলিকে আটক করে। সেই থেকে তিনি জেলে ছিলেন। সাড়ে ৬ বছর পর ২০০১ সালের ১ মার্চ তার যাবজ্জীবন জেল ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ২ বছর জেল দেয়া হয়। ইতোমধ্যে জোবেদ আলি জানতে পারেন যে জেলে থেকেও আপিল করা যায়। তখন তিনি তার দ-াদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে জেল আপিল করেন। এদিকে কারা নিয়ম অনুযায়ী তাকে সাতক্ষীরা থেকে যশোর জেলে পাঠানো হয়। অন্যদিকে হাইকোর্ট ২০০৩ সালের ১৯ মার্চ দেয়া রায়ে জোবেদ আলিকে নির্দোষ ঘোষণা করে এ হত্যা মামলা থেকে বেকসুর খালাস দেয়। ততদিন জেলে তার সাড়ে ৮ বছর হয়ে গেছে। ২৬ মার্চ হাইকোর্টের সে রায় সাতক্ষীরার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে এসে পৌঁছে। তৎকালীন অতিরিক্ত দায়রা জজ তাপস কুমার দে সে আদেশটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলে না পাঠিয়ে নথি রেকর্ড রুমে সংরক্ষণের নির্দেশ দেন। এ পর্যায়ের ঘটনা একটু অস্পষ্টতা ঘেরা। একটি পত্রিকা বলেছে, জোবেদ আলি হাইকোর্টের রায়ের পরই জানতে পারেন। অন্য পত্রিকার খবরে বলা হয়, ২০০৫ সালে তিনি তা জানতে পারেন ও জেল কর্তৃপক্ষকে জানান। তারপর তিনি ২০০৫ থেকে ২০১০ পর্যন্ত জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জেল আপিলের অবস্থা জানতে চেয়ে অতিরিক্তি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের কাছে ৮টি চিঠি দেন। কিন্তু কোনোটিরই সাড়া পাননি। এ পর্যায়েও তথ্যে অস্পষ্টতা দেখা যায়। একটি মানুষ জানেন যে তিনি খালাস পেয়েছেন, কিন্তু ছাড়া পাচ্ছেন না। এ যে কি দুঃসহ যন্ত্রণা তা শুধু ভুক্তভোগীই জানেন। কোনো উকিলের সাহায্য নিয়ে তাকে মুক্ত করা সহজ বিষয় ছিল, কিন্তু তা হয়নি। তাকে সাহায্য করার লোক না থাকায় বা ভাগ্য দোষে ২০০৩-এর মার্চ থেকে ২০১৬-এর মার্চ পর্যন্ত ১৩টি বছর তার জেলেই কেটেছে।
তিনি মুক্তি পেলেন কীভাবে? এ ব্যাপারে জানা যায় যে, সম্প্রতি তিনি জেল থেকে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পিপি জিল্লুর রহমানকে চিঠি দিয়ে তার দুর্ভাগ্যের বিষয়টি জানান। অতিরিক্ত পিপি খোঁজ নিয়ে বিষয়টির সত্যতা জানতে পারেন। তারপর ২৪ ফেব্রুয়ারি তিনি সাতক্ষীরার দ্বিতীয় অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে জোবেদ আলির মুক্তির আবেদন করেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি শুনানি হয়। বিচারক তাকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন। ২ মার্চ বিচারক তার মুক্তির নির্দেশ দিলে তিনি সেদিন ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফেরেন।
জোবেদ আলির অবস্থাটি মোটামুটি বোঝাতে এ দীর্ঘ বিবরণ দেয়া। জানা যায়, বিচারক আশরাফুল ইসলাম জোবেদ আলি এতদিন কীভাবে জেলে ছিলেন শুনে বিস্মিত হন। তিনি তার ব্যাপারে হাইকোর্টের আদেশ যথাযথ পালনে ত্রুটির জন্য হতাশা ব্যক্ত করেন। তিনি আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, “যার ভুল অথবা অবহেলার কারণে তাকে এতদিন কারাভোগ করতে হল তারও বিচার হওয়া দরকার।” এদিকে জোবেদ আলির ভাই ইয়ার আলি বলেন, উচ্চ আদালতে ভাইয়ের মামলা খারিজ হয়ে যাওয়ায় তিনি খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে রায়ের কপি জেলখানায় না আসায় তাকে মুক্ত করতে পারেননি। তিনি আদালতের বারান্দায় দীর্ঘদিন ঘোরাঘুরি করেও ভাইয়ের মুক্তির আদেশ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে না পেরে আশা ছেড়ে দেন। অন্যদিকে জোবেদ আলির মা এখনো বেঁচে। মুক্তির পর ছেলেকে কাছে পেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে তিনি বলেন, “যারা তোর জীবনের ১৩টি বছর নিয়ে গেল তাদের সাজা হওয়া উচিত।” আর জোবেদ আলির নিজের অনুভূতি হচ্ছে, “আমার জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো কে ফিরিয়ে দেবে?” তিনি আরো বলেন, ‘আমার প্রতি যারা অবিচার করেছে তাদের যেন শাস্তি হয়।’ তবে একটি দৈনিকের রিপোর্টে আছে যে যারা তাকে বিনা দোষে ১৩ বছর জেল খাটিয়েছে, জোবেদ আলি তাদের বিচারের ভার আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়েছেন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক একটি দৈনিককে বলেন, বিনা দোষে জোবেদ আলির ১৩ বছর কারাবন্দি থাকার ঘটনা ‘অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ ও দুঃখজনক। এ ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে তদন্ত করা হবে। আমি অবশ্যই এ ঘটনার তদন্ত করাব। যদি আদালতের কারো গাফিলতি থাকে তবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
জোবেদ আলিকে কি দুর্ভাগা বলা যায়? হ্যাঁ, তাই। এক ব্যক্তির কারণে তিনি এই দুর্ভাগ্যের শিকার হন। ঐ ব্যক্তি যে কাজটি করেছেন তা ভয়ঙ্কর নিন্দনীয় একটি কাজ। এক ভাগ্য বিড়ম্বিত মানুষকে তিনি শান্তি ও স্বস্তি থেকে, তথা জীবনের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন। এটি তার দায়িত্বে অবহেলা, ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা নাকি আর কিছু তা এখনো নির্নীত হয়নি।
জোবেদ আলি তার দুর্বিষহ ভোগান্তির ন্যায় বিচার পাবেন কিনা, আইন মন্ত্রী তার প্রতিশ্রুতি মোতাবেক তদন্ত করে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিকে শাস্তি দেবেন কিনা, তার কিছুই এখন নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে যে কথাটি বলা যায় তা হলো, আর কোনো মানুষ যাতে এ রকম পরিস্থিতির শিকার না হন সে জন্যই জোবেদ আলির উচিত মামলা করা।
জোবেদ আলি ব্যক্তির দোষে দুঃসহ ভোগান্তির শিকার হন। এ রকম আরো কত জন যে দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন, তাদের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে কত মূল্যবান বছর, তার খোঁজ কেউ রাখেনি। মাঝেমধ্যে পত্র-পত্রিকায় কিছু হতভাগ্যের খবর প্রকাশিত হলে তখন তা মানুষের নজরে আসে। অন্যথায় তা অগোচরেই রয়ে যায়। এ রকম একজন ফয়সাল আহম্মেদ। বিস্ফোরক মামলায় গ্রেফতার হয়ে ১০ বছর জেলে কাটানোর পর বেকসুর খালাস পায় সে। বিডিটুডে ডট নেট-এর খবরে বলা হয়, ২০০৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে ফয়সালকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঢাকা রেলওয়ে থানায় দায়ের করা বিস্ফোরক মামলায় জঙ্গি সংগঠন ‘জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ’র সদস্য সাজিয়ে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এরপর কয়েক দফা রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে আদালতের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে তাকে বাধ্য করে পুলিশ। উল্লেখ্য, কমলাপুর রেলস্টেশনে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট। যাহোক, ফয়সালের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ঢাকা জেলার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক সাইফুল ইসলাম ২০১৫ সালের ২৬ মে তাকে খালাস প্রদান করেন। ফয়সালের জীবন থেকে হারিয়ে যায় ১০টি বছর।
ফয়সাল বলেন, ‘যে বয়সে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে হেসে খেলে বেড়ানোর কথা সে বয়সে আমাকে বিনা অপরাধে গ্রেফতার করা হয়। কারাগারে নির্মম অত্যাচারের শিকার হতে হয়, পরিয়ে রাখা হয় ডা-াবেড়ি। গরিব বলে দেয়া হয়নি ঠিক মতো খাবার। কিছু বললে চালানো হতো নির্মম অত্যাচার। মুখ বুজে সকল অত্যাচার সহ্য করে আল্লাহর কাছে দোয়া করে বলেছি, হে আল্লাহ! আমাকে এ অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা কর।... দেশে গরিবের জন্য কোনো আইন নেই।’ তিনি আক্ষেপ করে শেষের যে কথাটি বলেছেন, সেটি বহু পুরনো সত্য। নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত কোনো পর্যায়েই গরিব লোকের জন্য মামলা চালানো সত্যিই অসম্ভব। সে আর্থিক সামর্থ্য তাদের নেই। পয়সা না থাকলে আইনের আশ্রয় নেয়া যায় না। ফলে ন্যায় বিচার তারা পায় না। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও এ পরিস্থিতি একই রকম রয়ে গেছে। কারো শিক্ষা-আদর্শই এক্ষেত্রে গরিবের উপকারে আসেনি। অন্যদিকে ফয়সালের মর্মভেদী প্রশ্ন সকল বিবেকমান মানুষকেই তাড়িত করে : ‘কি অপরাধ ছিল আমার। বিনা অপরাধে বছরের পর বছর আমাকে কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে। কে ফিরিয়ে দেবে আমার যৌবনের ১০ বছর?’
ফয়সালের এ প্রশ্নের জবাব যেমন মেলেনি, তেমনি জবাব মেলেনি বিনা অপরাধে কেন কারাগারে ২২ বছর কাটাতে হলো সিলেটের ফজলু মিয়াকে। ইত্যাদি নিউজ ২৪ ডট কমের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘১৯৯৩ সালের ১১ জুলাই সিলেট আদালত প্রাঙ্গণে ঘোরাফেরা করার সময় সন্দেহবশত ৫৪ ধারার আওতায় তাকে আটক করে পুলিশ। তারপর মানসিক ভারসাম্য হীন দেখিয়ে তাকে আদালতে চালান করে। তার স্থান হয় জেল হাজতে। ২০০২ সালে তাকে মুক্তির নির্দেশ দেয় আদালত। কিন্তু তিনি মুক্তি পাননি। অবশেষে সিলেট কারাগারের সুপার বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা ব্লাস্টের সহায়তা নিয়ে ২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবর ফজলু মিয়াকে মুক্ত করেন। জানা গেছে, ২২ বছরে তাকে ১৯৮ বার আদালতে হাজিরা দিতে হয়। তাকে যখন গ্রেফতার করা হয়েছিল তখন তিনি ছিলেন যুবক, বয়স ছিল ২৮ বছরের মতো। তিনি যখন মুক্তি পান তখন তিনি বৃদ্ধ।
ফয়সাল মুক্তি পেয়ে প্রশ্ন করেছিলেন, কী অপরাধ ছিল আমার? ফজলু মিয়া যেদিন মুক্তি পান সেদিন তিনি খুব অসুস্থ ছিলেন। তাই সাংবাদিকরা তার সাথে কথা বলতে পারেননি। তিনি কিছু বলেননি। তাছাড়া তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় কিছু বলতে পারতেনও না।
বিনা বিচারে জেলে থেকে ফজলু মিয়ার জীবনের একটা বড় সময় নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তিনি ক্ষতিপূরণ পাবেন কিনা, এ প্রশ্ন তোলে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সুলতানা কামাল তখন বলেছিলেন, ফজলু মিয়ার জীবনের সেই সময়গুলো কেউ ফেরত দিতে পারবে না। তারপরও কোনোভাবে তাকে যদি আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয়া যেত, কিন্তু এ ধরনের কোনো উদাহরণই তৈরি হয়নি।
এ ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছে। এসবে জন্য যারা দায়ী তাদের কখনো বিচার হয়নি। তাই বারবার এ রকম ঘটনা ঘটছে। যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া না হলে আবারো ঘটবে। জোবেদ আলির দুর্ভাগ্যের কথা আইনমন্ত্রী পর্যন্ত পৌঁছেছে। তিনি তদন্তের আশ^াস দিয়েছেন। হয়তো এর বিচার হতে পারে। আবার নাও হতে পারে। এ ব্যাপারে ফেসবুকেও কেউ কেউ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তবে ফয়সাল-ফজলুর খবর সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল পর্যন্ত পৌঁছেনি। বেশি প্রচার না হওয়ায় গণমানুষের সহানুভূতিও তেমন মেলেনি। তাদের কেউ কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি। জোবেদ আলিও পাবেন না বলেই ধরে নেয়া যায়। এ রকম ক্ষতিপূরণ দেয়ার কোনো আইন আমাদের দেশে নেই। কত আইন হয়েছে ও হচ্ছে, কিন্তু এ ব্যাপারে কারো দৃষ্টি পড়ে না। আগে কখনো কখনো কোনো কোনো ঘটনায় সরকার প্রধানকে ঘটনার শিকার অসহায়-বিপন্ন মানুষের প্রতি মানবিক সহায়তার হাত বাড়াতে দেখা গেছে। কিন্তু তার সদয় দৃষ্টি আগের দু’জনের উপর যেমন পড়েনি, তেমনি পরের জনের উপরও পড়ার সম্ভাবনা কম। প্রশ্ন হচ্ছে, রাষ্ট্রের কর্মচারীদের ভুল বা গাফলতিতে যাদের জীবনের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল, সে ভুলের দায়িত্ব কি রাষ্ট্রের নয়? তাদের জন্য রাষ্ট্র কী কিছু করবে না? কেন করবে না? কী বলেন রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা? শঙ্কা এই যে, কঠোর পদক্ষেপ না নিলে এ ধরনের অমানবিক ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
লেখক : সাংবাদিক
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।