Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভোটবিহীন আতঙ্কিত সরকার মিছিল-বিক্ষোভ দেখলেই ভয় পায় : রিজভী

| প্রকাশের সময় : ২৩ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ভোটবিহীন হওয়ার কারণে সরকার সামান্য মিছিল ও বিক্ষোভেই আতঙ্কিত হয়ে ওঠে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি বলেন, আসলে বিনাভোটের সরকার বর্তমানে এতটাও আতঙ্কিত সামান্য মিছিল বা বিক্ষোভ দেখলেই ভয় পায়, আতকে ওঠে। বিরোধী দলের উপর দমন নিপীড়ন তো এখন নিত্য দিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু
সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবিতে সামান্য বিক্ষোভ করতে গেলে পুলিশ তাদের ওপরও হামলা করলো, গুলি করলো, বুলেট নিক্ষেপ করলো, লাটিচার্জ করলো-রক্তাক্ত হলো শিক্ষার্থীরা। গতকাল (শনিবার) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
দেশে এখন ভয়াবহ দুঃশাসন চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা এ কেমন ভয়াবহ দু:শাসনের মধ্যে বসবাস করছি। দেশটাকে বর্তমান সরকার কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবিতে সামান্য বিক্ষোভ করতে গেলে পুলিশ তাদের ওপর হামলা করলো, গুলি করলো, বুলেট নিক্ষেপ করলো, লাটিচার্জ করলো-রক্তাক্ত হলো শিক্ষার্থীরা। গণমাধ্যমে এসব ছবি প্রকাশিত হয়েছে। অথচ মামলা করল সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। অথচ যারা আক্রান্ত হলো, রক্তাক্ত হলো, আটক হলো পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টা মামলা করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিংবা সরকারের হুকুম ছাড়া এ মামলা করেনি পুলিশ।
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, রাজধানীর ৭টি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়ার পর দীর্ঘ দিন পেরিয়ে গেলেও পরীক্ষার তারিখ ও সময়সূচি ঘোষণা করা হয়নি। তারিখ ও সময়সূচি ঘোষণার দাবিতে শাহবাগে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাইলে পুলিশ তাদের উপর গুলি, লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। আবার এ ঘটনায় উল্টো পুলিশের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে শাহবাগ থানায় পুলিশ বাদী হয়ে দায়ের করা এ মামলায় ১২শ’ শিক্ষার্থীকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা প্রদান ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। এটি নজীরবিহীন এবং দেশকে অন্ধকারের গুহায় ঠেলে দেয়ার দৃষ্টান্ত।
তিনি বলেন, সেদিন পুলিশের হামলা, গুর্লি, লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেটে আহত হয়েছে প্রায় ২০জন শিক্ষার্থী। আটক করা হয়েছে ১৩জন কলেজ শিক্ষার্থীকে। এখনও পুলিশের গুলিতে তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমানের দুই চোখের মণি গলে গেছে। এখন সে দুই চোখে কিছুই দেখেনা বলে তার পরিবার গণমাধ্যমকে জানিয়েছে। সে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার বড় ভাই গণমাধ্যমকে বলেছেন গুলির আঘাতে তার দুই চোখের মণি গলে যাওয়াসহ চোখের আশপাশের অংশ ফুলে গেছে। বর্তমানে তিনি চোখ দিয়ে কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না। তার ভাই আরও জানায় ছোট বেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর বহু কষ্টে দিনমজুরি করে ওর লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছি। পড়াশোনা শেষে ভাল চাকুরি পেয়ে পরিবারের হাল ধরার কথা ছিল তার। কিন্তু পুলিশ ওর চোখ অন্ধ করে দিয়েছে, তার স্বপ্ন চুরমার করে দিয়েছে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে যৌক্তিক উল্লেখ করে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, অত্যন্ত ন্যায্য ও যুক্তিসংগত দাবিতে তারা আন্দোলন করছে। ৭টি কলেজকে ঢাবির অধীনে নয়া হলেও বছর পেরোনোর পরও তাদের পরীক্ষার খবর নেই। অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তাদের সহপাঠীরা মাস্টার্স পাশ করে যাচ্ছে অথচ তাদের জীবন ধ্বংসের মুখে। আসলে বর্তমান সরকার পরিকল্পিতভাবে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের খেলায় মেতে ওঠেছে। এখন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের অস্ত্রবাজি ও দখলবাজিতে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা মূমুর্ষ হয়ে পড়েছে। পত্রিকার পাতা খুললে বা টেলিভিশন খুললেই দেখি তাদের অস্ত্রবাজি আর খুনোখুনির দৃশ্য কিংবা ছাত্রীদের লাঞ্ছিত হওয়ার খবর। সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একই অবস্থা। আজকের পত্রিকাতেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে-বেগম রোকেয়া বিশ্বদ্যিালয়সহ দুটি পাবলিক বিশ্বদ্যিালয়ে তাদের ছেলেদের সংঘর্ষ ও মারামারির খবর। দু-তিন আগে সিলেট বিয়ানিবাজার কলেজে তাদের নিজেদের মধ্যে খুনাখুনিতে একজন নিহত হয়েছে।
শাহবাগে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা এবং মামলার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি’র পক্ষ থেকে আমি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ন্যাক্কারজনক পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে তাদের সকল ন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ করে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি এবং আটককৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তি দাবি করছি। আর সিদ্দিকুর রহমানসহ গুরুতর আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানাচ্ছি।
ক্রসফায়ার নিয়ে সরকার দলীয় এমপি’র মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে রিজভী বলেন, সরকার দলীয় একজন এমপি ক্রসফায়রে মানুষ হত্যার ঘোষণা কিভাবে করে। পাঁচজনকে ‘ক্রসফায়ারে’ দিয়ে হত্যা এবং আরও ১৪ জনের তালিকা করার যে ঘোষণা দিয়েছেন সাভারের সরকার দলীয় এমপি, তাতে বিরোধী রাজনীতিকেরা আতঙ্কে পড়েছেন। এখন সেই এমপি যতোই বক্তব্য প্রত্যাহার করুন না কেন, তিনি থলের বিড়াল বের করে দিয়েছেন। সরকারদলীয় একজন এমপির ক্রসফায়ারের তালিকা তৈরির ঘোষণায় এটি প্রমানিত হলো যে, এতোদিন ধরে বর্তমান সরকারের জীবনবিনাশী রক্ত আর লাশ ফেলার কর্মসূচির বিষয়ে বিরোধী দলের অভিযোগ যথার্থ। সরকারদলীয় এই এমপি’র ঘোষণায় সকল বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, বেআইনী গুম, খুনের সাথে বর্তমান সরকার প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। ধমক দিয়ে সেই এমপি’র বক্তব্য সরানো হলেও সত্যিকার মেসেজ জাতি পেয়ে গেছে। ভোটারবিহীন সরকার ক্ষমতাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে এভাবেই বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের তালিকা করে বিচারবর্হিভূত হত্যা ও নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়ে এসেছে। এটা জাতির সামনে আজ পরিস্কার। সরকারে এধরণের ভয়ঙ্কর ও নিষ্ঠুর ভয়াবহতার খবরে দেশবাসী এখন শিহরিত ও আতঙ্কিত।
বিএনপির সিনিয়র নেতা ও দলের স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যের উদ্ধৃত করে বিএনপি চেয়ারপার্সন, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এবং চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নিউজ সাইট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও কিছু অনলাইনে প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপি’র এই নেতা বলেন এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও অপপ্রচারমুলক। এ ব্যাপারে বিএনপি’র সংশ্লিষ্ট নেতারা প্রতিবাদও জানিয়েছেন। মূলত: সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি’র লোকেরা দলের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরী করার জন্য এ ধরণের মিথ্যা, ভিত্তিহীন মনগড়া অসত্য তথ্য প্রচার করছে বা বিভিন্ন অনলাইনে প্রকাশ করাচ্ছে। এসব বক্তব্যের সঙ্গে বিএনপি’র কোন নেতাদের সম্পর্ক নেই। বিএনপির কোন পর্যায়ের নেতা-কর্মী এ ধরণের অপপ্রচারকে বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা কয়েকদিন আগে বলেছেন নির্বাচনকে সামনে রেখে কত খেলা ঘটবে। এগুলো কি তাদেরই খেলা কি না এটা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার বিএনপিকে নানাভাবে বিপর্যস্ত করার জন্য বা দুর্বল করার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেছে কিন্তু কোন লাভ হয়নি। সরকারের অপচেষ্টা এখনও থেমে নেই। বিএনপির সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে অটুট বন্ধনে ঐক্যবদ্ধ। যতোই অপচেষ্টা করুন না কেন সেই ইস্পাতদৃঢ় ঐক্যে ছেদ ধরাতে পারবেন না।####

 

 



 

Show all comments
  • S. Anwar ২৩ জুলাই, ২০১৭, ৬:৪৬ এএম says : 0
    ভয় না পেয়ে আওয়ামী লীগের আর উপায় কি? কথায় বলে, "যার বাপকে কুমীরে খায় সে খেজুর দেখলেও ডরায়।"
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ