পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ অমাবশ্যার ‘জো’ ও ভরাবর্ষার প্রভাব
বিশেষ সংবাদদাতা, চট্টগ্রাম ব্যুরো : উত্তর বঙ্গোপসাগর উপকূল নদ-নদীর মোহনার বাঁকে বাঁকে এখন বিচরণ করছে রূপালী ইলিশের ঝাঁক। জেলেরা ইলিশের নৌকা ছুটিয়ে চলেছেন এখানে-সেখানে ইলিশ বিচরণের পয়েন্টগুলো বেছে বেছে। আর মহাখুশীতে জালভর্তি ইলিশ নিয়ে ফিরছেন ঘাটে। গতকাল (শনিবার) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে শুরু হয়েছে অমাবশ্যার ‘জো’। এর আগাম প্রভাব শুরু হয় আগের দিন (শুক্রবার) দুপুর থেকেই। সেই সাথে সাতই শ্রাবণে এসে ভরা বর্ষাকাল। গত দুয়েক সপ্তাহের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে বানের পানি ভাটির দিকে তীব্রবেগে নেমে আসার ফলে নদ-নদী টইটুম্বুর এবং মোহনায় পানির স্রোতও বেড়েছে। আর বর্ধিত প্রভাব যোগ হয়ে আছে সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র। যা বিগত ৩০ মে সংঘটিত হয় এবং বৃহত্তর চট্টগ্রাম উপকূলভাগ অতিক্রম করে।
সাগর উপকূল নদ-নদী মোহনা ও খাঁড়িতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ার প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে গতকাল বিশিষ্ট সামুদ্রিক বিজ্ঞানী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিশারিজ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. হোসেন জামাল ইনকিলাবকে জানান, সাগর ও নদ-নদী মোহনায় ইলিশ শিকারের জন্য এখনই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। প্রথমত গতকাল সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া অমাবশ্যার ভরা ‘জো’ বা জোয়ার শুরু হয়েছে। জো’র সক্রিয় প্রভাব থাকবে একটানা ৪ থেকে ৫ দিন পর্যন্ত। অমাবশ্যার ভরা ‘জো’তে ইলিশ ও বিভিন্ন প্রজাতির মাছের আনাগোনা বিশেষ করে ঝাঁক বেঁধে বিচরণ বেড়ে যায়। তাই এ সময়ে অন্যসময়ের চেয়ে বেশিহারে ইলিশ ধরা পড়বে। এখন ভরা বর্ষা মৌসুম হওয়ায় নদ-নদী ও মোহনায় উজানের দিক থেকে স্রোতে আসা নতুন পানির দিকে ইলিশের চলাচলও বেড়ে গেছে।
ড. হোসেন জামাল বলেন, যে কোন ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ¡াসের ক্ষয়ক্ষতির দিক যেমন অবশ্যই রয়েছে, তেমনি এ ধরনের দুর্যোগ সময়কালীন বঙ্গোপসাগর ও উপকূলের পানিতে ইলিশের ছোটাছুটি (মুভমেন্ট) অনেক বেড়ে যায়। কেননা তখন সাগরের উপরে ও তলদেশে খুব প্রবল স্রোত ও জোয়ার সৃষ্টি হয়। এর প্রাকৃতিক পরিবেশগত ফলাফলের দিক রয়েছে। এতে করে মাছের বিচরণ ও প্রজনন বৃদ্ধি পায়। মাছও আকারে বড় হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র একটি বর্ধিত প্রভাবও প্রাকৃতিকভাবে রয়ে যায়। সবকিছুই এবার ইলিশের বিচরণ, প্রজনন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য ইতিবাচক হয়ে উঠেছে।
এদিকে গতকাল চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গিবাজার ফিশারি ঘাটে এবং দেশের বিভিন্ন ফিশারিঘাটে, মাছের মোকামগুলোতে রীতিমতো ইলিশের হাট বসে। পাইকারি ইলিশ বিক্রি হয় প্রচুর। আজ (রোববার) ঘাটে ইলিশের নৌকা আরও বেশি হারে ভিড়তে পারে বলে প্রবীণ জেলেরা জানান। ডিপ সী ট্রলিংয়ে নিয়োজিত শিল্প-ট্রলার নাবিকদের সূত্রে জানা গেছে, সাগরে এখন প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। অনেক ইলিশ আকারেও বড়সড়। তবে সাগরে ইলিশের প্রাচুর্য থাকায় ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ট্রলার নৌযানযোগে অতীতের মতো আবারও ইলিশ চুরি বা লোপাটের আশঙ্কাও করছেন জেলেরা।
বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, ইলিশের বর্তমান উপযুক্ত মৌসুমে বঙ্গোপসাগরের ‘এলিফেন্ট পয়েন্ট’ টেকনাফ-সেন্টমার্টিন থেকে চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা, নোয়াখালীর রামগতি নিঝুমদ্বীপ, চর আলেকজান্ডার, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা হয়ে খুলনার কাছে ‘হিরণ পয়েন্ট’ দুবলার চর, রায়মঙ্গল পর্যন্ত অন্তত ৩৬টি বড় পয়েন্টে ইলিশ শিকার করা হচ্ছে। এরমধ্যে ২৫ থেকে ২৮টি পয়েন্ট হচ্ছে মোহনার কাছাকাছি নদ-নদী। তবে অব্যাহত ভরাট ও দূষণের পারিণতিতে ইলিশের পুরনো পয়েন্টগুলো কমে যাচ্ছে। আবার মা ইলিশ সংরক্ষণ ও জাটকা নিধন বন্ধের সুফল হিসেবে নতুন নতুন পয়েন্টে ইলিশ আহরণ বাড়ছে। ড. জামাল জানান, সাগর থেকে নদীর মিঠাপানির দিকে যতই ছুটে আসে ইলিশের স্বাদ, গুণগত মান, ঘ্রাণ এবং আকারে ততই উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।