বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
নাছিম উল আলম : নৌ পরিবহন বিধি বিধান যথাযথ অনুসরণ না করায় দেশের অভ্যন্তরীন ও উপক‚লীয় নৌপথে একের পর এক দুর্ঘটনায় জানমালের ব্যপক ক্ষতি অব্যাহত থাকলেও এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রতিকার মিলছে না। সব বিধি বিধানকে উপেক্ষা করে অভ্যন্তরীণ ও উপক‚লীয় নৌপথে ৯০ভাগ নৌযানই পাইলট বিহীনভাবে চলাচল করছে। তবে পাইলট সঙ্কটও মরাত্মক আকার ধারণ করায় কতৃপক্ষের এ সংক্রান্ত বিধিবিধান প্রয়োগে আগ্রহ কম। ফলে পণ্য ও জালানীবাহী নৌযানের দুর্ঘটনার সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে। একের পর এক দুর্ঘটনায় বিভিন্ন নৌপথে নির্বিঘœ নৌ চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএ দেশের প্রায় ৩হাজার ৮শ’ আড়াই হাজার কিলোমিটার অভ্যন্তরীণ ও উপক‚লীয় ৭২টি নৌপথে নৌযানসমূহের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করনে দায়িত্ব পালন করছে। এর মধ্যে প্রায় আড়াইহাজার কিলোমিটার দিবা-রাত্রী নেযান চলাচল উপযোগী। সমুদ্র পরিবহন অধিদফ্তর দেশের অভ্যন্তরীণ ও উপক‚লীয় নৌপথে চলাচলকারী নৌযানসমূহের নকশা অনুমোদন সহ এর নিরাপত্তারও কিছু বিষয় পর্যবেক্ষণ করে থাকে। তবে দেশের বিশাল নৌপথে পণ্য ও যাত্রীবাহী নৌযানগুলো বিআইডব্লিউটিএ’র বয়া-বাতি সহ সংকেতসমূহ অনুসরণ করে নির্দিষ্ট নৌপথে পরিচালন-এর জন্য কতৃপক্ষের পইলট গ্রহনের বাধ্যবাধকতার বিষয়টিও এখন বেশরিভাগ বেসরকারী নৌযান মালিক ও চালকগন অনুসরণ করেন না। দেশের ৭২টি নৌপথের মধ্যে ৯টি গুরুত্বপূর্ণ পথে পাইলট সার্ভিস গ্রহনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই অনসরণ করা হচ্ছে না। এসব গুরুত্বপূর্ণ নৌপথগুলো হচ্ছে- চট্টগ্রাম-চৌকিঘাটা/রামগতি, চাঁদপুর-চৌকিঘাটা/রামগতি, রামগতি/চৌকিঘাটা-বরিশাল, খুলনা-মংলা, মোংলা-ঘাশিয়াখালী-ঝালকাঠি, ঝালকাঠি-বরিশাল, চাঁদপুর-বরিশাল, চাঁদপুর-নারায়নগঞ্জ এবং ঢাকা-নারায়নগঞ্জ-ভৈরব। এছাড়াও ১৫এপ্রিল থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত মাওয়া-আরিচা, আরিচা-দৈখাওয়া ও ভৈরববাজার-জকিগঞ্জ নৌপথের বিআইডব্লিউটিএ’র পাইলট গ্রহনে বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
কিন্তু বেশীরভাগ বেসরকারী নৌযানসমূহ পাইলট গ্রহন না করায় দুর্ঘটনার সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এমনকি রাতের বেলা দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথে সব ধরনের পণ্যবাহী নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও তাও অনেক ক্ষেত্রেই পালিত হচ্ছে না। সা¤প্রতিককালে বেশীরভাগ নৌযানের কাপ্তানগণ নির্দিষ্ট হুইসাল পর্যন্ত প্রদান করেন না। এমনকি খোদ বিআইডব্লিউটিসি’র যাত্রীবাহী নৌযানের কাপ্তেনগন সা¤প্রতিককালে নৌপথে চলাচলরত অবস্থায় ও বিভিন্ন েেস্টশন ত্যাগ ও ভেড়ার সময় পর্যন্ত নির্দিষ্ট হুইসাল প্রদান করেন না বলেও সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে।
সর্বশেষ গত ১৪জুন বরিশাল নদী বন্দরের সামনে দুটি জ্বালানী ও পণ্যবাহী নৌযানের মুখোমুখি সংঘর্ষে নৌযান দুটির ব্যাপক ক্ষতি হয়। ওই দুর্ঘটনায় তেলবাহী নৌযান ‘এমটি ফজর’এর সম্মুখ ভাগ ও পোর্ট সাইডের বাল্ক ফেটে যাওয়ায় প্রায় ২০হাজার লিটার ডিজেল কির্তনখোলা নদীতে ছড়িয়ে পরে। ফলে কিতর্নখোলা নদীর মাছ সহ এর জলজ প্রাণী যথেষ্ঠ হুমকির মুখে পরে। তবে ভড়া বর্ষ মওশুমের প্রবল স্রোত ও বর্ষণের কারণে জীব বৈচিত্রের ক্ষতি কিছুটা হৃাস পায়। হাইস্পীড নেভিগেশনের পাইলটবিহীন বিহীন ক্লিঙ্কারবাহী নৌযান ‘এমভি মা-বাবার দোয়া’র সাথে ওই সংঘর্ষ ঘটে।
এর আগে গত ২২এপিল দুপুরে বরিশাল নদী বন্দরের অদুরে ঢাকাগামী ক্যাটামেরন ‘এমভি গ্রীনলাইন-২’ এর সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে ৫ শতাধিক টন কয়লা বোঝাই একটি কার্গো কির্তনখালা নদীতেই ডুবে যায়। ওই দুর্ঘটনায় অন্তত ৩০যাত্রী আহত হয়। গ্রীনলাইন-২’এর পোর্ট সাইডে ফাটল সৃষ্টি হলে নৌযানটির একপাশের খোলে পানি প্রবেশ করে অর্ধ নিমজ্জিত হয়। এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে যমুনা ডিপোর অদুরে কির্তনখোলা নদীতে নোঙরে থাকা জ্বালানী তেল বোঝাই নৌযান ‘এমটি এ্যাংকরেজ’এর মূল ইঞ্জিন চালু করার সময় এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে এর ৫ক্রু অগ্নিদগ্ধ হয়। পরে এদের একজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। দুর্ঘটনা কবলিত এসব কোন নৌযানেই বিআইডব্লিউটিএ’র পাইলট ছিলনা।
গতবছর ৪ জুলাই প্রত্যুশে বরিশাল বন্দরের অদুরে ঈদে ঘরমুখো যাত্রী বোঝাই বিআইডবিøউটিসি’র প্যাডেল নৌযান ‘মাহসুদ’এর ওপর বিপরীত দিক থেকে আসা বেসরকারী নৌযান ‘এমভি সুরভী’ আছড়ে পরলে লোয়ার ডেকের ক্রু-কেবিনে ভ্রমণরত ৫যাত্রী নিহত হয়। ওই দুর্ঘটনায় মাহসুদ’এর আরো অন্তত ২০যাত্রী আহত হয়। বেসরকারী নৌযানটিতে কোন পাইলট ছিলনা। দুর্ঘটনায় পিএস মাহসুদ-এর পোর্ট সাইডের লোয়ার ও আপর ডেক সহ প্যাডেলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
গত দেড় বছরে চাঁদপুরের ভাটিতে মেঘনা ও এর শাখা নদ-নদীতে আরো অন্তত ১০টি ছোট বড় নৌ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘেটনায় কয়েকটি পণ্যবাহী নৌযান ডুবেও গেছে। যারমধ্যে কয়েকটি ছিল ক্লিঙ্কার বোঝাই। ফলে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ পরিবর্তন সহ এর নব্যতা সংকটও বেড়েছে। এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ও দূর্ঘটনার শিকার কোন নৌযানেই বিআইডব্লিউটিএ’র পাইলট ছিল না। অথচ ১শটনের অতিরিক্ত পণ্য ও জ্বালানীবাহী যেকোন নৌযানই বিআইডব্লিউটিএ’র পাইলট নিয়ে চলাচলে বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এমনকি রাজধানী ঢাকার সাথ বরিশাল সহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নদী বন্দর ও নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীবাহী নৌযানগুলোও চলছে পাইলট ছাড়া। এসব নৌযনে এক হাজার থেকে ১২শ’ পর্যন্ত যাত্রী বহনের অনুমোদন দিয়েছে সমুদ্র পরিবহন অধিদফ্তর। কিন্তু বেশীরভাগ সময়ই এসব নৌযানগুলো ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নিয়েই চলাচল করছে। আর প্রতিদিন এ বিপুল সংখ্যক যাত্রী নিয়ে নৌযানগুলো চলাচল করছে বিধি বিধানের বাইরে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে। অথচ বিআইডবিøউটিএ’র পাইলট নিয়ে চলাচল নৌযানের নিরাপত্তার অন্যতম অনুসঙ্গ।
কিন্তু তার তোয়াক্কা করছে না বেসরকারী বেশীরভাগ নৌযানের মালিক ও চালকগন। এমনকি বিআইডবিøউটিএ ও সমুদ্র পরিবহন অধিদফ্তর এ বিধি বিধান প্রতিপালনেও খুব একটা সচেষ্ট নয় বলে জানা গেছে। ফলে সা¤প্রতিককালে শুধুমাত্র জ্বালানীবাহী নৌযান ছাড়া প্রায় সব পণ্যবাহী নৌযান এবং বেসরকারী নৌযানগুলো পাইলট গ্রহণ না করাকে রেওয়াজে পরিণত করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
তবে বিআইডবিøউটিএ’র পাইলট সংখ্যাও চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। সমুদ্র পরিবহন অধিদফ্তরের এক পরিসংখ্যান মতে দেশের অভ্যন্তরীণ ও উপক‚লীয় নৌপথে বর্তমানে নিবন্ধিত নৌযানের সংখ্যা প্রায় ১৩হাজার ৩শ’র মত। যার অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ নৌযানই পাইলট নিয়ে চলাচলে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু এ বিপুল সংখ্যক নৌযানের দিক নির্দেশনার জন্য বিআইডব্লিউটিএ’র পাইলট-এর অনুমোদিত পদ মাত্র ২৬৪টি। যার বিপরীতে কর্মরত আছেন ২৫৪জন। মূলত স্বাধীনতার পরে দেশের অভ্যন্তরীণ ও উপক‚লীয় নৌপথে সীমিত সংখ্যক সরকারী-বেসরকারী নৌযানের জন্য যে স্বল্প সংখ্যক পাইলট-এর পদ সৃষ্টি করা হয়েছিল, অনুমোদিত সে পদের ঘাটতি নিয়ে এখনো দেশের নৌপথে নিরাপদ নৌ চলাচলের দায়িত্ব পালন করছে বিআইডব্লিউটিএ। অথচ গত তিন দশকে দেশে নৌযানের সংখ্যা বেড়েছে অন্তত দশগুন। ফলে বেসরকারী নৌযানসমুহ পাইলট নিয়ে চলাচল করতে চাইলেও বিআইডব্লিউটিএ তা নিশ্চিত করতে পারছে না।
বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ তার উত্তর ব-দ্বীপ শাখা, আরিচা শাখা, উত্তর-পূর্ব ব-দ্বীপ শাখা, মধ্য ব-দ্বীপ শাখা, পূর্ব ব-দ্বীপ শাখা, দক্ষিন ব-দ্বীপ শাখা ও পশ্চিম ব-দ্বীপ শাখার ২৬টি পাইলট স্টেশন-এর বিভিন্ন বিট থেকে চলাচলরত নৌযানগুলোকে সিমিত কিছু পাইলট সুবিধা প্রদান করছে।
এ ব্যাপরে বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক নৌ পথ সংরক্ষন ও পরিচালন’র সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, দেশের অভ্যন্তরীন ও উপক‚লীয় নৌপথে যাত্রীবাহী এবং পণ্য ও জ্বালানীবাহী নৌযানগুলোর পাইলট সুবিধা নিয়ে চলাচলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে তা বেশীরভাগ নৌযানই পালন করছে না বলে তিনি স্বীকার করেন। তবে বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরীন ও উপক‚লীয় নৌপথে চলাচলরত বিপুল সংখ্যক নৌযানে পাইলট সার্ভিস প্রদানের সক্ষমতা বিআইডব্লিউটিএ’র রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাইলটের পদ কয়েকগুন বৃদ্ধির প্রস্তাব নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।