Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইউএনও গাজী তারেক সালমান গ্রেফতার ঘটনায় মাঠ প্রশাসনে ক্ষোভ

ডিসি ও এসপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে

| প্রকাশের সময় : ২২ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পঞ্চায়েত হাবিব : বরগুনার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজী তারেক সালমানকে হেনস্তার ঘটনায় মাঠ প্রশাসনে কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রচÐ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। তারেকের বিরুদ্ধে করা মামলার বাদীকে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। অন্যদিকে রবিশালের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক ও প্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেছেন, ইউএনও হচ্ছেন উপজেলা পর্যায়ে সরকারের সবচেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তাকে কোনো শাস্তি দিতে হলে বা তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা কোনোরকম কিছু করতে হলে সরকারের অনুমোদন লাগে। এই ঘটনার জন্য বরিশালের ডিসি, এসপিকে দায়ী করে তিনি বলেন, পুলিশ যে ব্যবহার করেছে এই ছেলেটির (ইউএনও) সঙ্গে, যেভাবে তাকে নিয়ে গেছে, এ নিয়ে আমি ওখানকার ডেপুটি কমিশনার, পুলিশ সুপার, এদের প্রত্যেককে দায়ী করব। এদের বিরুদ্ধেও আমাদের বোধ হয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জেলা ও মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মাকছুুদুর রহমান পাটোয়ারী ইনকিলাবকে বলেন, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০১৭ এর আমন্ত্রণপত্রটি তৈরি করা করেছিল উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সেখানে দোষের কিছুই ছিল না। তার বিরুদ্ধে কারো অভিযোগ থাাকলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জানাতে পারত। তা না করে একজন নির্বাহী অফিসারকে এভাবে হয়রানি করা ঠিক হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন সেইভাবে আমরা ব্যবস্থা নিব। সেখানে প্রশাসনে কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, গাজী তারেক সালমান বর্তমানে বরগুনার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৬ সালের ২৬ মার্চ আগৈলঝাড়াতে একই দায়িত্ব পালনের সময় স্থানীয় এক শিশুর আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আমন্ত্রণপত্র ছাপিয়েছিলেন তিনি। এ ঘটনার এক বছর পর বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে আদালতে বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সৈয়দ ওবায়েদ উল্লাহ সাজু দÐবিধির ১৮৬০ এর ৫০১ ধারায় মামলা করলে বরিশালের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বিষয়টি আমলে নেন।
বুধবার সকালে তারেক সালমানের জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বরিশালের একটি আদালতের বিচারক। পরে অবশ্য তাকে জামিন দেয়া হয়। এরপর পুরো ঘটনাটি সামনে চলে আসে এবং একজন শিশুর আঁকা ছবি উপজেলা প্রশাসনের আমন্ত্রণপত্রে ব্যবহারের ঘটনায় এই মামলা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। গত বৃহস্পতিবার পত্রপত্রিকায় এই খবর দেখে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কর্মকর্তারাও বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান। ঘটনার পরপরই তারা বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আনেন। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক ও প্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিকৃত করার অভিযোগ এনে আগৈলঝাড়ার ভ‚তপূর্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজী তারেক সালমানের জামিন বাতিল করে তাকে টেনেহিঁচড়ে কোর্টহাজতে নিয়ে যাওয়ার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। গত বৃহস্পতিবার সংগঠনটির এক জরুরি সভায় বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়। সংগঠনটির মহাসচিব কবির বিন আনোয়ার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, একটি জামিনযোগ্য অপরাধের সিআর মামলায় সমনের প্রেক্ষিতে স্বেচ্ছায় হাজির হওয়া ব্যক্তির জামিন নামঞ্জুর করা সম্পূর্ণ নজিরবিহীন। বাদী ও অন্যান্য আইনজীবী একটি কল্পিত বিষয়ের ওপর আদালতে অরাজক পরিস্থিতি ও চাপ সৃষ্টি করে বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আদালতের প্রতি সম্মান জানিয়ে ১৯ জুলাই বুধবার গাজী তারেক সালমান আদালতে উপস্থিত হলে প্রথমে তার জামিন নামঞ্জুর করা হয় এবং তাকে জেলহাজতে নেয়ার সময় পুলিশ সদস্যরা তার ওপর বল প্রয়োগ করেন এবং তাকে টেনেহিঁচড়ে হাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। রাষ্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাকে আদালতের এমন নজিরবিহীন আদেশ দিয়ে জেলহাজতে পাঠানোসহ পুলিশের অবমাননাকর ও আইন বহির্ভূত আচরণ এবং বাদী ও অন্যান্য আইনজীবীর আদালতে চাপ প্রয়োগের ঘটনার তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে ওই সভায়। সভায় আদালতের দেয়া এমন আদেশ, পুলিশি আচরণ এবং তথাকথিত নামধারী স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহŸান জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
অপরদিকে বঙ্গবন্ধুর ছবি কার্ডে ছাপানো নিয়ে অতি উৎসাহী হয়ে ইউএনওর বিরুদ্ধে মামলা করা বরিশালের সেই নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গতকাল বিকেলে গণভবনে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা হয়। সভার পর সাজুর বিষয়ে দলের সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমকে জানান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ওবায়েদ উল্লাহ সাজুকে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না তা জানতে চেয়ে নোটিশ দেয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ জানিয়েছেন।



 

Show all comments
  • জাহিদ ২২ জুলাই, ২০১৭, ৩:০৮ এএম says : 0
    এই ষড়যন্ত্রকারীদেরকে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ