পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শফিউল আলম : প্রধানমন্ত্রীর নতুন নির্দেশনার পর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কার্যক্রম ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে। শুক্রবার শনিবার সাপ্তাহিক ছুটিসহ দিনরাত ২৪ ঘণ্টা (২৪/৭) খোলা রাখা হচ্ছে কাস্টমস ভবন। হলরুমে, বিভিন্ন সেকশনে শুল্কায়ন ফাইল ছাড়করণের জন্য অন্যদিনের মতো হাঁকডাক ও তাড়াহুড়া নেই। তবে সেবাগ্রহিতাদের মাঝে সাড়া বাড়ছে ধীরে ধীরে। নতুন নিয়মের ধারায় অভ্যস্ত করে তুলতে গিয়ে সেবাদানকারী ও গ্রহিতাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা-সঙ্কট, চেইন ওয়ার্কের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু সমন্বয়ের অভাব, কাস্টমসের জনবলের প্রকট ঘাটতি এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, ডিজিটাল বা আইটি খাতের প্রযুক্তিগত দুর্বলতা- এই চারটি প্রতিবন্ধকতা রয়েই গেছে। এসব কারণে সার্বক্ষণিক কাস্টম হাউস চালু রাখতে গিয়ে প্রথম প্রথম হোঁচট খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। শুল্কায়ন প্রক্রিয়া প্রত্যাশা অনুসারে দ্রæতায়িত ও গতিশীল করা সম্ভব হচ্ছে না। দেশের প্রধান চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরভিত্তিক একক বৃহৎ রাজস্ব আহরণকারী প্রতিষ্ঠান এই কাস্টম হাউস সদ্যবিদায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩৬ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা রাজস্বের যোগান দিয়েছে। বছর বছর বাড়ছে রাজস্ব আয়।
গত ২ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সচিবদের সভায় ১৭টি দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। এরমধ্যে শীর্ষে ছিল দেশের আদমানি-রফতানি বাণিজ্য গতিশীল করার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস সপ্তাহের পুরো সাতদিন ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার লক্ষ্যে অত্যাবশ্যকীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ জুলাই থেকে এনিয়ে পরপর তিন সপ্তাহে শুক্র-শনিবার চালু রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস এবং তিন শিফটে ২৪ ঘণ্টা ধরে চলছে কাস্টমস কার্যক্রম। গতকালও যথরীতি খোলা থাকে কাস্টমস ভবন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও সেবাগ্রহিতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগের দুই সপ্তাহের তুলনায় কাজের গতি বেড়েছে। সকাল থেকেই কাস্টমস ক্লিয়ারিং ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট (সিএন্ডএফ) প্রতিনিধিরা আগের চেয়ে বেশিহারে এসেছেন। আমদানি-রফতানি সম্পর্কিত বেশকিছু ফাইল এসেসমেন্ট হয়েছে। যদিও তা স্বাভাবিক অন্যদিনের তুলনায় কিছুটা কম।
এদিকে গতকাল (শুক্রবার) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোঃ নজিবুর রহমান চট্টগ্রাম বন্দরে গিয়ে সরেজমিনে কাস্টমস কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। তিনি নিজেই বন্দরের জেটি-বার্থে নোঙররত ভিয়েতনামের আমদানি চালবাহী জাহাজে উঠে খালাস কাজ পর্যবেক্ষণ করেন। এ সময় তিনি শুল্কায়ন ও ছাড়করণ প্রক্রিয়ায় কোন জটিলতা ছাড়াই দ্রæতায়িত করারও নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর গত ২ জুলাইয়ের সিদ্ধান্তের আলোকে শুক্র ও শনিবারসহ সপ্তাহের প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস সচল রাখার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গেই বাস্তবায়নের ব্যাপারে কর্মকর্তাদের প্রতি নির্দেশনা প্রদান করেন। এনবিআর চেয়ারম্যান আশা প্রকাশ করেন, এরফলে রাজস্ব আহরণ ও সেবা আদান-প্রদানের পুরো প্রক্রিয়া আরো গতিশীল হবে। চট্টগ্রাম বন্দরও কন্টেইনার ও জাহাজের জটমুক্ত হবে। এ সময় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়াল এডমিরাল খালেদ ইকবাল, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার এএফএম আবদুল্লাহ খান ও শীর্ষ কর্মকর্তাবৃন্দ, চিটাগাং চেম্বারসহ ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তা নেতৃবর্গ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে আজ (শনিবার) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান মোঃ নজিবুর রহমান কাস্টমস কার্যক্রম ২৪ ঘণ্টা সচলের জন্য সম্ভাব্য বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে কাস্টমসের স্টেকহোল্ডার তথা সেবাগ্রহিতাদের সাথে মতবিনিময় করবেন বলে জানা গেছে।
এদিকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে সেবাদানের পরিধি ও গতি আরো প্রসারিত করে বৈদেশিক বাণিজ্যের চাকা বেগবান করার ক্ষেত্রে বেশকিছু সমস্য এবং সমন্বয়হীনতা রয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শুধুই চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস দিনে-রাতে ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখলেই শেষ হবে না। এরসাথে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, বিভাগ ও সংস্থার কাজকর্ম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যেমন- কোয়ারেন্টাইন বিভাগ, আনবিক শক্তি কমিশন, বিএসটিআইসহ অনেকগুলো সংস্থার ধাপে ধাপে পরীক্ষণ কিংবা ডকুমেন্টের ভিত্তিতে ছাড়পত্র পাওয়া সাপেক্ষেই আমদানি-রফতানি প্রবাহ ত্বরান্বিত করা সম্ভব। কিছু কাজের ক্ষেত্রে নৌবাহিনীর ছাড়পত্রেরও প্রয়োজন হয়। তাই সবগুলো সংস্থার কাজকে একই ছাতার নীচে নিয়ে আসতে হবে। তাহলেই ২৪ ঘণ্টা কাস্টমস সচল প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন হবে নিশ্চিত। তাছাড়া চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে অরগানোগ্রামের (মঞ্জুরিকৃত জনবল) নিরিখে বর্তমানে সিংহভাগই ঘাটতি রয়েছে। মোট এক হাজার ২৪৮টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে বাস্তবে কর্মকর্তা ও কর্মচারী আছেন মাত্র ৫৬৭ জন। ব্যাপক অপ্রতুল জনবল দিয়ে দিনের পর দিন কাজকর্ম সচল রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে জাতীয় রাজস্ব রোর্ড জনবল ঘটতি সমস্যা নিরসনের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে বলে কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়।
শুক্রবার, শনিবারসহ পুরো সপ্তাহজুড়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস সচলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জানিয়ে কাস্টমস কমিশনার এএফএম আবদুল্লাহ খান জানান, গতকাল সেবাগ্রহিতাদের সাড়া আরো বেশি পেয়েছি। কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছেন। গুরুত্বপূর্ণ কিছু এসেসমেন্টও হয়েছে। তবে ধীরে ধীরে সেবাগ্রহিতা বা স্টেকহোল্ডারগণ আরো অভ্যস্ত হয়ে উঠলে গতিশীলতা বেড়ে যাবে। এরফলে রাজস্ব আদায়ও বৃদ্ধি পাবে। আমরা যথেষ্ট আশাবাদী। কাস্টমস ক্লিয়ারিং এন্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্টস (সিএন্ডএফ) অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও চিটাগাং চেম্বার পরিচালক একেএম আকতার হোসেন জানান, আমাদের (সিএন্ডএফ) প্রতিনিধিরা কাস্টম হাউসে আগের চেয়ে বেশি সংখ্যক যাচ্ছেন। ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা সচল রাখার ব্যাপারে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি। নতুন কিছু চালু করতে গেলে প্রথমদিকে কিছু সমস্যা থাকবে। আমাদের অনেকগুলো সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠান এখনও সার্কুলার পায়নি, তবে পেয়ে যাবে। তবে সেগুলো কেটে গেলে কাজের গতি আরও বাড়বে। তিনি কাস্টমস ছাড়াও ছাড়করণ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত অন্যান্য সংস্থাকেও সমানতালে গতিশীল এবং সমন্বয় বৃদ্ধির তাগিদ দেন।
‘চিহ্নিত’ ১৫ সমস্যার সুরাহা নেই
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসকে আরও গতিশীল, জনবান্ধব ও সেবামুখী আধুনিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করতে ‘চিহ্নিত’ ১৫টি বাধা-প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যা স্বল্প মেয়াদে সমাধানের জন্য দিক-নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছিল বিগত ২ ফেব্রæয়ারি চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত এক বড়সড় সমন্বয় সভায়। অথচ ৫ মাসেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও সেসব সমস্যা সুরাহার কোন আলামত নেই। অথচ তখন এগুলো ‘গুরুত্বপূর্ণ এবং আশু সমাধানযোগ্য’ বলেই অভিমত বেরিয়ে আসে। এরমধ্যে রয়েছে- চট্টগ্রাম বন্দর-কাস্টমসের অপারেশনাল সমস্যা সমাধানে সব পক্ষকে নিয়ে একটি ‘পোর্ট-কাস্টমস অপারেশনাল কমিটি’ গঠন করে কাজকর্ম গতিশীল করা, পণ্যসামগ্রী আমদানি-রফতানি নিরবচ্ছিন্ন রাখতে সার্বক্ষণিক বন্দর-কাস্টমস ছাড়াও এর সাথে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা ও সকাল ৯টা থেকে সবার উপস্থিতি নিশ্চিত করা, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের জনবল ঘাটতি দ্রæত সময়ের মধ্যে নিরসন, কাস্টম হাউসেসের এসাইকুডা প্লাস প্লাস-এর ঘন ঘন বিভ্রাট স্থায়ীভাবে দূরীভূত করে এর সাথে বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো (অফডক), বন্দরের কন্টেইনার টার্মিনাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিটিএমএস) এবং সব ইপিজেডকে সংযুক্ত করে আনা, দ্রæততর পণ্য খালাসে সৎ ও স্বনামধন্য ব্যবসায়ীদের শনাক্ত ‘গ্রিন চ্যানেল পদ্ধতি’ চালু করা, কাস্টমসের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর কাজে সমন্বয় ও গতি বৃদ্ধি করা, এলসি খোলার সময় যাবতীয় বিবরণ লিপিবদ্ধ করা, জরুরি ভিত্তিতে বন্দরের সব গেটে স্ক্যানিং মেশিন স্থাপন ইত্যাদি। কিন্তু এসব সুপারিশের বাস্তবায়ন কার্যত হিমাগারে চলে গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।