Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খালেদা জিয়া ফিরবেন না এটা আহাম্মকও বিশ্বাস করবে না -মির্জা ফখরুল

প্রকাশের সময় : ২১ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:১৫ এএম, ২১ জুলাই, ২০১৭

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে দেশে ফেরা নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দেয়া বক্তব্যের সমালোচনার জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘মামলার ভয়ে খালেদা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন, তিনি আর দেশে আসবেন না’ বলে তার দেয়া এমন বক্তব্য কোনো আহম্মকও বিশ্বাস করবে না। গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী হেল্প সেল আয়োজিত গুম খুন ও নির্মম নির্যাতেন শিকার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করে ক্ষমতাসীনদেরকে আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখার আহ্বা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়া পালিয়ে গেছেন দেশ থেকে- এটা তো কোনো আহম্মকও বিশ্বাস করবে না। এ সমস্ত কথা বলে, মিথ্যা প্রচারণা করে, মিথ্যা ছড়িয়ে দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে আর দেশের ক্ষতি করবেন না। আজকে যারা এ ধরণের কথা বলছেন, তাদের নিয়ে আমরা ইউটিউবে বিভিন্নরকম ছবি দেখতে পাই। আমি সত্য-মিথ্যা বলতে পারবোনা। কিন্তু দেখা যায় তারা কি ধরণের বিবৃতি দিচ্ছেন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে। আমরা শুনেছি যে, জেলে যারা ছিলেন ওই সময়ে, তারা কান ধরে উঠ-বস করে বলেছিলেন আর কোনোদিন রাজনীতি করবো না। সুতরাং এ ধরনের কথা বলার আগে প্রত্যেকের উচিৎ আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখা এবং এই কথা চিন্তা করা যে অতীতে আমি যে সমস্ত কথা-বার্তাগুলো বলেছি, তার সঙ্গে আমার এখনকার কথা-বার্তার মধ্যে সামঞ্জস্য আছে কিনা। তাই এ ধরণের কথা বলার আগে আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখবেন। এ ধরণের কথাবার্তা বলে জনগণকে আর বিভ্রান্ত করবেন না। আওয়ামী লীগকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, আপনারা যে ভয় পেয়েছেন! নির্বাচনে পরাজয় হলে আপনারা পালানোর রাস্তা খুঁজে পাবেন না। আমি দলের মহাসচিব হয়ে আশ্বস্ত করছি, আলোচনার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করুন। তাহলে জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে আপনাদের বিবেচনা করবে। তা নাহলে সত্যিই আপনারা পথ খুজে পাবেন না।
খালেদা জিয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী দলের প্রত্যেকটি ইউনিটকে শক্তিশালী করে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে পরাজয়ের মাধ্যমে এই জুলুম অত্যাচারের অবসান ঘটানো হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার জার্মানির হিটলারের নাৎসী বাহিনীকেও অতিক্রম করে চলেছে। হিটলার হত্যাযজ্ঞ, অত্যাচার-নির্যাতন করার সুযোগ পেয়েছিলো অল্পদিন। আর আওয়ামী লীগ গত ৮ বছর ধরে এই হত্যা-নির্যাতন-নিপীড়ন-নির্মমতা-পাশবিকতা করে চলেছে। যেখানে যাবেন একটা-দুইটা-তিনটা-পাঁচটা-দশটা, এই আমাদের ছাত্ররা, কর্মীরা, সাধারণ মানুষ তারা আওয়ামী লীগের নির্যাতনে প্রাণ দিয়েছে, পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়েছে। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগের বাংলাদেশ। কিভাবে বিরোধী দলকে নির্যাতন করা যায়, কিভাবে ভিন্নমতকে দমন করা যায়, কিভাবে অসহায়-নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষকে দলন ও হত্যা করা যায়, কোপানো যায়, তার রোল মডেল হচ্ছে আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের সরকার।
আওয়ামী লীগকে আগামী নির্বাচনে নির্মূল করতে সংগঠন শক্তিশালী করার তাগিদ দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তাদেরকে নির্মূল করতে হবে। আওয়ামী লীগ যাতে কোনোদিন জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে ভোট নিয়ে ফিরে না আসতে পারে সেজন্য জনগণকে সর্তক করতে হবে। আন্দোলন বলেন আর নির্বাচন বলেন সংগঠন ছাড়া হবে না। আমি বিশ্বাস করি, কখনোই কোনো অন্যায়, কোনো দুঃশাসন চিরদিনের জন্য টিকে থাকতে পারে না। বাংলাদেশের ইতিহাস তা বলে না। আমরা নিশ্চয় রুখে দাঁড়াবো, আমরা নিশ্চয় সোচ্চার হবো। আমরা জনগণের সম্মিলিত শক্তি দিয়ে তাদের পরাজিত করবো। আমরা আর চোখের পানি ফেলতে চাই না, আমরা আর বুকের মধ্যে যন্ত্রণা ধারণ করতে চাই না। আমরা এই দুঃশাসনের পরিসমাপ্তি ঘটাতে চাই।
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখনো সময় আছে। আসুন আলোচনা করুন, কথা বলুন। বাংলাদেশের মানুষ এখন একটা নির্বাচন চায়, তারা চায় যে একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক। দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক- এটাই আমরা চাই। সেভাবে ব্যবস্থা নিন। অন্যথায় ঠিকই পালাবার পথ খুঁজে পাওয়া যাবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদের অভিজ্ঞতা হচ্ছে যে, এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। সেজন্য একটি সহায়ক সরকারের কথা বলা হয়েছে, দেশনেত্রী বলেছেন। সরকারকে বলব- আসুন কথা বলুন। কিভাবে সেই সরকার গঠন ও সকলের অংশগ্রহণে জনগণের ভোটাধিকারকে নিশ্চিত করে একটা নির্বাচন করতে পারি। জনগণ যাকে চাইবেন, তারাই সরকার গঠন করবেন।
তিনি বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান হলে দেশের মঙ্গল হবে, জনগণের মঙ্গল হবে, আপনাদেরও মঙ্গল হবে। আপনারা যে ভয় পেয়েছেন পরাজিত হলে পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না। এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে পারি বাংলাদেশের জনগণ আপনাদের সবকিছু দেখবে এবং দেশে শান্তি বিরাজ করার পরিবেশ তারা সৃষ্টি করবে। নির্বাচন সুষ্ঠু হোক- এটাই আমরা চাই, সেইভাবে ব্যবস্থা নিন। অন্যথায় ঠিকই পালাবার পথ খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ওবায়দুল কাদেরকে সজ্জ্বন রাজনীতিক আখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা তাকে একজন সজ্জ্বন রাজনীতিবিদ মনে করি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তিনি এমন ভাষায় কথা বলছেন যে ভাষায় তার কাছ থেকে কথা শুনিনি। আমরা প্রত্যাশা করি না, এতো বড় একটা রাজনৈতিক দল ও এতো পুরনো একটা রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদক এই ভাষায় কথা বলবেন! আমরা যারা রাজনীতি করি, জনগণ আমাদের চুলচেরা বিশ্লেষণ করবে, অন্যান্য রাজনৈতিক দল সমালোচনা করবে। কিন্তু তার ভাষাটা কী হবে? তার ভাষা কি হবে ব্যক্তিগত আক্রমণ, তার ভাষা কী হবে যে সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলে চরিত্রহনন। এটা ওই স্তরের নেতার কাছে আমরা আশা করি না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্যে যদি কারো সত্যি বেশি অবদান থাকে, যদি কেউ সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করে থাকেন, গণতন্ত্রের জন্য যিনি আপোষহীন নেত্রী উপাধি পেয়েছেন সেই নেত্রী তো বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বন্দুকের নল নিয়ে ক্ষমতায় আসেননি, তিনি সোনার চামচ মুখে নিয়েও ক্ষমতায় আসেননি। রাজপথে ছাত্র-জনগণের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে তিনি এসেছেন। ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থান ও পরবর্তীকালে গণতন্ত্রের যতগুলো ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে, বেগম খালেদা জিয়া করেছেন। সংসদীয় গণতন্ত্র বেগম খালেদা জিয়া করেছেন। কিন্তু বার বার আমার নেত্রীকে যারা আঘাত করবেন অন্যায়ভাবে, এর জবাব যদি আমরা না দেই তাহলে সত্যের প্রতি অপলাপ এবং দায়িত্বে থেকে দূরে থাকা হবে।
এসময় অনুষ্ঠানে বিরোধীদলের আন্দোলনের সময়ে ক্ষমতাসীন দলের হামলায় নিহত রংপুরের যুবদল নেতা মোশারফ হোসেন পদ্ম, খুলনার নজরুল ইসলাম, ময়মনসিংহের পঙ্গু ছাত্রদল নেতা মেহেদি হাসান, পাবনার ছাত্রদলের মাসুদ বিল্লাহ ও সিলেটের মো. বদরুল আলম- এই পাঁচজনের পরিবারকে আর্থিক অনুদান দেয়া হয়। জাতীয়তাবাদী হেল্প সেলের সদস্য জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েলের সভাপতিত্বে ও ফেরদৌস মুন্নার পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী, ইতালী বিএনপির মান্নান হীরা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ