Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লাখ লাখ টাকার রাজস্ব বঞ্চিত সরকার

ইজারা ছাড়াই হাটের কালেকশন

| প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) সংবাদদাতা : জেলার পীরগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে ও তত্বাবধানে সরকারের রাজস্ব ঘাপলা চলছে। মোটা অঙ্কের গোপন লেনদেনের মাধ্যমে উপজেলার সর্বোচ্চ বৃহৎ ২ টি হাট ইজারা ছাড়াই গেল বছরের ইজারাদার কতৃক টোল আদায় অব্যাহত রেখে সরকারের লাখ লাখ টাকার রাজস্ব লুটপাট করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার সবচেয়ে বড় ২টি হাট হলো ১০ নং জাবরহাট ইউপি’র জাবরহাট এবং৯ নং সেনেগাঁওে ইউপি’র নসিবগঞ্জ হাট। সপ্তাহের প্রতি বুধবার জাবরহাট এবং বৃহষ্পতিবার নসিবগঞ্জ হাট বসে। নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামালের পাশাপাশি এ দু’টি গরু-ছাগল বিক্রি হয় বেশি। সীমান্তবর্তী এ দু’টি হাটে জেলার ও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা আসেন গরু ক্রয়ের জন্য। বিগত বছরগুলোতে এ হাট থেকে বার্ষিক ইজারার মাধ্যমে সরকারের লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হতো। সরকারি দল সংশ্লিষ্ট একটি হাট সিন্ডিকেট উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ম্যানেজ করে উপজেলার বড় হাটগুলোর পরবর্তীবছরের ইজারামূল্য কমাতে এবং রাজস্ব তছরুপ করে নিজেদের আখের গোছাতে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কেউ টেন্ডার ড্রপ না করে বিনা ইজারায় খাস কালেকশনের নামে পূর্বের বছরে নিযুক্ত ইজারাদারা তাদের লোকজন এবং নিজস্ব নামবিহীন রশিদ দিয়ে ৩ মাস ধরে হাটের টোল কালেকশন করে আসছেন। এ বিষয়ে খবর পাওয়ার পর আমাদের প্রতিনিধি গত ০৫/০৭/১৭ইং জাবরহাটে এবং ২৯/০৬/১৭ ইং নসিবগঞ্জ হাটে সরেজমিন গিয়ে আদায়কারীদের সাক্ষাতকার রেকর্ড করেন। জাবরহাটে গরু ও ছাগল হাটে টোল আদায়কারী এরশাদ হোসেন ও সাইফুল ইসলাম বলেন আমার ঠিকাদার ওয়াজেদ আলী ও ইউনুস আলীর মাধ্যমে কমিশনে রশিদ বই নিয়ে প্রতি পাতা ১০ টাকা কমিশনে লেখাই করে থাকি। ইজারাদার ইউনুস আলীর বক্তব্য হলো, আমরা ইউএনও সাহেবের মৌখিক অনুমতিতে আমাদের লোকজন দিয়ে হাটের কালেকশন করে আমাদের নির্দিষ্ট অঙ্করেখে বাকিটা তহশিলদারের কাছে জমা দেই। তিনি আরো বলেন, হাটে লস হওয়ায় আমরা এবার টেন্ডার ফেলিনি, পরবর্তী বছরে কম রেটে এই হাট ডাক হবে, তখন আমাদের কিছু লাভ হবে। ইজারাদর কমানোর জন্য ইউএনও’র সহযোগীতায় এই রাজস্ব লুটপাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অথচ এই হাটটি গতবছর ২৮ লাখ টাকায়, ২০১৫ সালে ২৬ লাখ টাকা, ২০১৪ সালে ২৩ লাখ টাকায় ইজারা হয়েছিল। সে হিসেবে প্রতিবছর ৫%-১০% ইজারামূল্য বৃদ্ধির নিয়ম রয়েছে। ওয়াজেদ আলী এবং ইউনুসআলী গত ৩ বছরে এই হাটের ইজারাদার ছিলেন। একইভাবে নসিবগঞ্জ হাটটির ১৪২৩ সালে ৩২ লক্ষ টাকায় ইজারা নিয়েছিলেন উপজেলা আ’লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক রেজওয়ানুল হক বিপ্লব। ইউনুস আলী ২০১৫ সালে ৩০ লাখ ও ২০১৪ সালে২৬ লাখ টাকায় এ হাট ইজারা নিয়েছিলেন। কিন্তু এবারে এ হাটে টেন্ডার ফেলেননি হাটের ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। অথচ গেল বছরের ইজারাদারের লোকজনই হাটের টোল আদায় করছেন। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের তহশিলদার আনিছুল হক বলেন, আমাদের জনবল না থাকায় আগের ইজারাদারের মাধ্যমে কালেকশন চলছে। রাজস্ব মানি রিসিট ব্যবহার করা হচ্ছেনা কেন জানতে চাওয়া হলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। নসিবগঞ্জ হাটের টোল আদায়কারী ফরিদুল ইসলাম, ওয়াসিম উদ্দিন,খাদেমুল ইসলাম জানান, ঠিকাদার রেজওয়ান বিপ্লব ও ইউনুসের নির্দেশে তারা এই আদায় অব্যাহত রেখেছেন। হাটে দেখা মেলে ঠিকাদারের পার্টনার ওয়াজেদ আলীর। তিনি বলেন গেল বছর আমি শেয়ার ছিলাম, এবারতো আমরা হাট নেইনি, তিন্তু ইউএনও সাহেবের অনুরোধে আমরা খাস আদায় করে দিচ্ছি মাত্র।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে খোজ নিয়ে জানা যায়, পরপর ৩ বার টেন্ডার আহবান করা সত্বেও কোন পার্টি পাওয়া যায়নি,তাই তহশিলদারের মাধ্যমে খাস আদায় করা হচ্ছে। গেল বছরের ৬০ লাখ টাকা ইজারা হিসেবে হাট দু’টি থেকে প্রতিমাসে ৫ লাখ টাকা কালেকশন হবার কথা থাকলেও কালেকশন দেখানো হয়েছে গড়ে প্রায় ২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। ৩ মাসে রাজস্ব জমা করা হয়েছে প্রায় ৯ লাখ টাকা। অবশিষ্ট টাকা গেছে প্রাক্তন ঠিকাদারের পকেটে।
গত ২ সপ্তাহে রাজস্ব লুটপাটের তথ্য আদায়ের জন্য সরেজমিন হাটে যাওয়া হলে বিষয়টি অনেকের মধ্যে আলোচনার সৃষ্টি হলে ঠিকাদার সিন্ডিকেটের সদস্যরা সাংবাদিকদের ম্যানেজের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে ইউএনও’র মাধ্যমে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের দ্বারস্থ হয়েছেন। জানা যায়, এ অবস্থায় পরিস্থিতি ট্যাকেল দিতে তারা নতুন করে হাট ডেকে নেয়ার জন্য রেজওয়ান বিপ্লবের নেতৃত্বে অন্যান্যরা সরাসরি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রনালয় থেকে এই হাট দু’টি ডেকে নেয়ার জন্য কাজ শুরু করেছেন। এভাবে সরকারের লাখ লাখ টাকা রাজস্ব লুটপাটের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম ইফতেখারুল ইসলামের মতামত চাওয়া হলে তিনি বলেন, কেউ টেন্ডার যদি না ফেলেন, সেখানে আমার কি করার থাকে। আমি নিয়ম অনুয়ায়ী তহশিলদারের মাধ্যমে খাস আদায় করাচ্ছি। বাস্তবে আদায় করছেন প্রাক্তন ঠিকাদারের লোকজন, এ প্রশ্নে উত্তর তিনি এড়িয়ে যান। এ ব্যাপারে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে মনে করেন স্থানীয়রা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ