Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আমরা রাজনীতিবিদ নই, আমরা জনগণের সেবক -বরিশালে দুদক চেয়ারম্যান

প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১০:২০ পিএম, ১৮ জুলাই, ২০১৭

দুর্নীতির মামলা ক্যান্সারের মত যা পরিবারসহ সকলকে একসময় পথে বসিয়ে দেয়
বরিশাল ব্যুরো: দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, দুর্নীতি দমন আমাদের কাজ নয়, আমরা পারি প্রতিরোধ করতে। তাছাড়া বিভিন্ন সরকারি দপ্তর থেকে আমরা যে অভিযোগগুলো পাই সেগুলো হচ্ছে একটি সারমর্ম। এর বিস্তারিত অনেক। আমরা দুর্নীতি দমনের জন্য কাজ করলেও এতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আমরা যেটা করতে চাই সেটা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে। কোন মামলা করে নয়, আমরা চাই যারা দুর্নীতি করেন, তাদের মধ্যে চেতনাবোধ জাগ্রত করতে। দুর্নীতিতে আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে থাকব তা হতে পারে না। এ জন্য দুর্নীতির উৎসগুলো বন্ধ করতে চাই। তিনি গতকাল বরিশাল জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে ‘দুর্নীতিমুক্ত সরকারি সেবা এই প্রতিপাদ্যে দুর্নীতির অভিযোগের প্রকৃতি’ বিষয়ক মাঠ পর্যায়ের বিভাগীয় কর্মকর্তাগণের সাথে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছিলেন।
অনুষ্ঠানে দুদক চোরম্যান বলেন, দুর্নীতির মামলা হল ক্যান্সারের মত। ক্যান্সার হলে যেমন পরিবারসহ সকলে একসময় পথে বসে। তেমনই দুদক কারো বিরুদ্ধে মামলা করলে তার অবস্থা একই রকম হয়। এসময় বিভিন্ন দপ্তরের সরকারী কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন- একটি পরিবারের পিতা যদি দুর্নীতিগ্রস্থ হয় তাহলে কোনদিনই ঐ পরিবারের অন্য সদস্যরা সৎ বা নিষ্ঠাবান হতে পারে না। তেমনই সরকারি কোন অফিসের প্রধান যদি দুর্নীতিগ্রস্থ হয় তাহলে তার নিচের যত কর্মকর্তা আছে, তারাও ঠিক একই ভাবে দুর্নীতিপরায়ণ হবে। তিনি বলেন, দুদক চায় সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা আইন-কানুন, বিধি-বিধান মেনে নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করুক। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগও আসবে না এবং মামলাও হবে না।
দুদক চেয়ারম্যান অনেকটা অফসোস করে বলেন, এখন লুকানোর কিছু নেই। একটা দেশ এভাবে চলতে পারে না। আমরা দুর্নীতিতে এগিয়ে যাব, এটা হতে পারে না। এটা যাতে না হতে পারে এর জন্য আমরা কাজ করছি। আমার ইতিমধ্যে ৫শ’ এর বেশী দুর্নীতিকারীকে আটক করেছি। তাছাড়া আমরা দেখেছি ভয় দেখিয়ে জয় করা যাবে না। মূলত আমরা নিজেদেরকে নিজেরাই খেয়ে ফেলেছি। গড্ডালিকা প্রবাহে আমরা যেতে চাই না। আমরা রাজনীতিবিদ নই। আমরা জনগণের সেবক। আমাদের সেবা জনগণ যাতে সঠিকভাবে পান, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। দুর্নীতি প্রতিরোধে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আরো বেশি সচেতন হবার ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, প্রায়শই মনে হয় কোন কোন জেলায় দুদকের অফিসই বন্ধ করে দেয়া উচিৎ। কারণ সেখান থেকে অভিযোগ আসে না আমাদের কাছে। আসলে সকল জায়গা থেকেই অভিযোগ আসা কমে গেছে। ছোট, বড় এবং মাঝারি মিলিয়ে দুদক কাজ করছে। আমরা যে অভিযোগগুলো পাই সে প্রেক্ষিতে মামলা হয়। আমরা চাই এ অভিযোগগুলো যাতে আমাদের কাছে আর না আসে।
দুর্নীতির দায়ে আটকের বিষয়ে তিনি বলেন, রাঘব বোয়ালদের ধরা এত সম্ভব নয়। বড় মাছ ধরতে জালও বড় করে পেতে রাখতে হয়। আমরা ছোট গাছ যত সহজে তুলতে পারি, তত সহজে কিন্তু বড় গাছ তুলতে পারিনা। দেখুন পাবলিকের কাছে জেলা প্রশাসকের চাইতে তসিলদার, এসি-ল্যান্ডই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই তাদের দুর্নীতিরোধ করাটা আগে প্রয়োজন। তাছাড়া আমাদের দুদকেরই অনেক সমস্যা রয়েছে। এ কথা বলায় আমাকে অনেকেই পছন্দ করেননা। তবে যেটা সত্য সেটাই বলছি। আমাদের ‘না’ বলা শিখতে হবে। আমরা শুধু ‘হ্যাঁ’ বলতে শিখেছি। আর এ জন্যই জনগন আমলাদের পছন্দ করে না।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা সরকারি কর্মকর্তারা কখনো কি জনগনকে স্যার বলেছি? কিন্তু বিদেশে দেখবেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বাস চালককে স্যার বলে সম্বোধন করেন। তাদের ভিতর জনগনকে সম্মান করার বোধ থাকার ফলে তাদের দেশ এত উন্নত। জনগনকে সম্মান দিলে তারা আপনাদের নিরাপত্তা দিবে। নতুবা বিপদে পড়লে কেউ আপনাদের দেখবে না। ২২জন পুলিশ দিয়ে আপনার নিরাপত্তা পাওয়া যাবে না। জনগনের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করলে নিরাপত্তা তারাই দিবে। হয় জিতব, নয় ফিরে যাব। মৃত্যুটা সত্য, তাই সকলকে এ কথা মাথায় রেখে কাজ করারও আহবান জানান দুদক চেয়রমান। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে ফেসবুকসহ অনেক ধরনের কালচার এসেছে। কিন্তু ‘ধন্যবাদ’ কালচারটি এখন পর্যন্ত আসেনি। তিনি জনগনকে ধন্যবাদ দেয়ার মানিষকত গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, তবে তা অবশ্যই টাকার বিনিময়ে নয়।
ইকবাল মাহমুদ বলেন- আমরা এখানে যারা আছি আসলে তাদের বদলানো বলতে গেলে সম্ভব না। কিন্তু দশম শ্রেণীর এক ছাত্রকে বদলানো সম্ভব। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণীর ৮৫ লাখ স্কুল শিক্ষার্থীর মধ্যে দুনীতি এবং অপরাধ বিরোধী বিভিন্ন লেখা সম্বলিত খাতা, জ্যামিতি বক্স, পৌঁছে দিচ্ছি- যাতে তারা আগে থেকেই দুর্নীতির কুফল সম্পর্কে জানতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন বয়সের মানুষের মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের ছাতা বিতরণ করা হচ্ছে।
বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. শহিদুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় দুর্নীতি প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন দুদকের মহাপরিচালক ড. মো. শামসুল আরেফিন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি শেখ মুহম্মদ মারুফ হাসান, বিএমপি’র পুলিশ কমিশনার এস এম রুহুল আমিন, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. নুরুল আলম, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফা, জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান, দুদক বরিশালের পরিচালক আক্তার হোসেন, সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুজ্জামান, বরিশালের এসপি এস এম আক্তারুজ্জামান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ডা. মো. মাহবুবুর রহমান সহ জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ