Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বন বিভাগকে ম্যানেজ করে চলছে কাঠ পাচারের মহোৎসব

| প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নুরুল আবছার চৌধুরী, রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) : রাঙ্গুনিয়ার খুরুশিয়া রেঞ্জের সংরক্ষিত ও সামাজিক বনায়ন উজার করে পদুয়া রাজারহাট-সরফভাটা সড়ক হয়ে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের গোচরা হয়ে চট্টগ্রামে অবৈধ কাঠ পাচারের মহোৎসব চলছে। প্রতিরাতে ২০-২৫টি জীপ ও মিনি ট্রাকে করে প্রায় দেড় হাজার ঘণফুট ১৫ লাখ টাকার কাঠ পাচার হচ্ছে। কাঠ পাচাররোধে রাজারহাট-সরফভাটা সড়কে খুরুশিয়া রেঞ্জ, খুরুশিয়া সদর বিট, কমলাছড়ি বিট, নারিশ্চা বিট এবং চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে পোমরা বন চেকস্টেশন রয়েছে। একশ্রেনীর বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করে কাঠ পাচার চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রাঙ্গামাটি সার্কেলের পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের ফারুয়া রেঞ্জ, আলী খিয়ং রেঞ্জ, তক্তানালা বিট, শুক্কছড়ি বিট, ঝুম নিয়ন্ত্রন বিভাগের তিনকোনিয়া রেঞ্জ, কর্ণফুলী রেঞ্জ, কর্ণফুলী সদর, ফ্রিংখিয়ং বিট, কাপ্তাই পাল্পউড বাগান বিভাগের রাইখালী রেঞ্জ, খুরুশিয়া রেঞ্জের দুধপুকুরিয়া বিট ও বান্দরবান সংরক্ষিত বনাঞ্চলে শতশত কাঠুরিয়া প্রবেশ করে মূল্যবান কাঠ কর্তন করে পাহাড়ি চোরাইপথে বাঙ্গালহালিয়া, রাঙ্গুনিয়ার খুরুশিয়া, ছিপছড়ি, কমলাছড়ি, কোদালা গোপালপুরা, চন্দ্রঘোনা ফেরীঘাট, দোভাষীবাজার আমতলি ও লিচুবাগান স’মিল এলাকায় বিভিন্ন চোরাই পয়েন্টে কাঠ মজুদ করে। মাঠ পর্যায়ের বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করে রাতের আঁধারে চন্দ্রঘোনা কর্ণফুলী নদীপথে ও কালিন্দিরানী সড়কের রাজারহাট, সরফভাটা সড়ক হয়ে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের গোচরা হয়ে চট্টগ্রামে কাঠ পাচার করা হয়। এতে সামাজিক বনায়ন ও সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজাড় হচ্ছে। রেঞ্জ, বনবিট, প্রশাসন ও শাসক দলের কতিপয় নেতার নামে ঘাটে ঘাটে প্রতিরাতে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের হাট বসে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আকাশমণি, জারুল, সেগুন, চাপালিশ, গামারি, কড়ই, গর্জনসহ নানা প্রজাতির গাছ শতশত কাঠুরিয়া দিনভর কর্তন করে রাতভর সড়ক পথে পাচারের মহোৎসব চলে। বিশেষ করে কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়ক ও কর্ণফুলী নদীপথে নির্বিঘেœ এসব কাঠ পাচার করা হচ্ছে।
প্রত্যেক বন বিটে জ্বালানী প্রতি জীপ গাড়ি ১০০-৩০০শ টাকা, মিনি ট্রাক ৫০০-৭০০শ টাকা, বড় ট্রাক ১ হাজার টাকা, টিসি ট্রাক দেড় হাজার টাকা নিচ্ছে। গোল গাছ ও চিরাই গাছ হলে প্রতি জীপ গাড়ি ৫শ-১২শ টাকা, মিনি ট্রাক ২ হাজার-৩ হাজার টাকা, বড় ট্রাক ৫-১৫ হাজার টাকা চাঁদা নিচ্ছে। কাঠ ব্যবসায়ী মো. সৈয়দুর রহমান বলেন, শাসকদলের কতিপয় নেতা ও বন বিট অফিসে ঘুষ দিয়ে কাঠের ব্যবসা করছি। এক ট্রাক সেগুন কাঠ পরিবহনে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দিয়েছি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের চন্দ্রঘোনা বন ও শুল্ক পরীক্ষণ ফাঁড়ির কর্মকর্তা মো. আকতার হোসেন বলেন, আগ্নেয়াস্ত্র থাকলেও স্টাফ সঙ্কট থাকায় কাঠ পাচার ঠেকাতে অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। নদীপথে কাঠ পাচার চলছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জনবল সঙ্কটের কথা জানানো হলেও কার্যকরী পদক্ষেপ নেই। রাঙ্গুনিয়া পোমরা চেকস্টেশন কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেন কাপ্তাই-চট্টগ্রামে সড়কে কাঠ পাচারের কথা স্বীকার করে বলেন, শাসকদলের নেতারা অল্পস্বল্প কাঠ নিচ্ছে। বাধা দিলে প্রাণ নাশসহ নানা হুমকি দেয়। লোকবলের অভাবে কাঠ পাচাররোধ করা যাচ্ছে না। খুরুশিয়া বিট কর্মকর্তা গাজী বাহারুদ্দিন বলেন, লোকবলের অভাবে কালিন্দিরানী সড়কে শতভাগ অবৈধ কাঠ পাচাররোধ সম্ভব হচ্ছে না। কাঠ পাচারকারীরা মুলত শাসকদলের। তাদের কাছে বনবিভাগ অসহায়। কাঠ পাচার হলেও করার কিছুই নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ