Inqilab Logo

রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ফেরি সার্ভিসের বেহাল দশায় বিপর্যস্ত চট্টগ্রাম বরিশাল-মংলা-খুলনা সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা

ব্যাহত হচ্ছে তিনটি সমুদ্র বন্দরের সড়ক যোগাযোগও

| প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : ফেরি সার্ভিসে জটিলতায় চট্টগ্রাম-বরিশাল-মংলা-খুলনা সড়ক পথে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিসি ও সড়ক অধিদফতরের ফেরি সঙ্কটের পাশাপাশি ভরা বর্ষায় মেঘনা, তেতুলিয়া ও কঁচা নদীর প্রবল স্রোতের কারণে এ মহাসড়কে ফেরি পারাপারে চরম সঙ্কট অব্যাহত রয়েছে।
ভোলা ও ল²ীপুরে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪শ’ যানবাহন আটকা পড়ছে। অথচ চট্টগ্রাম থেকে ল²ীপুর-ভোলা-বরিশাল হয়ে মংলা-খুলনার সড়ক পথে দূরত্ব চট্টগ্রাম-ঢাকা-খুলনা পথের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। এমনকি চট্টগ্রাম-ল²ীপুর-ভোলা-বরিশাল-মংলা-খুলনা মহাসড়কে যানবাহন চলাচল নির্বিঘœ থাকলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক সহ রাজধানীর ওপর যান চলাচলের চাপও অনেকটাই হ্রাস করা সম্ভব। কিন্তু ২০০৮সালের শুরুতে ল²ীপুর-ভোলা নৌপথের ভাটি মেঘনায় কে-টাইপ ফেরির সাহায্যে ‘পরীক্ষামূলকভাবে’ বিআইডবিøউটিসি ফেরি সার্ভিস চালু করার পরে এ রুটের জন্য আজ পর্যন্ত কোন সুষ্ঠু কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হয়নি।
অথচ ফেরি সার্ভিসটি চালু করার আগে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এ রুটের জন্য দুটি বিশেষায়িত ফেরি সংগ্রহের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল। কথাছিল ভাটি মেঘনার জোয়ার ভাটার প্রবল স্রোত ও বিক্ষুব্ধ তরঙ্গ অতিক্রম করে যাতে নির্বিঘেœ ও নিরাপদে যানাবাহন পারপার নিশ্চিত করা যায়, সে লক্ষে বিশেষ নকশার ওই সব ফেরি সংগ্রহ করা। কিন্তু গত ৯ বছরেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। বছর কয়েক আগে এ ধরনের একটি প্রকল্প-প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করা হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। ফলে এখনো অভ্যন্তরীন নৌপথে চলাচল উপযোগী পুরনো নকশার কনভেনশনাল টাইপ, কে-টাইপ ফেরির সাহায্যেই ভোলা-ল²ীপুর উপক‚লীয় রুটে যানবাহন পারপার হচ্ছে। কিন্তু সে ফেরিরও সঙ্কট মারাত্মক। এ রুটে নূন্যতম ৪টি ফেরির প্রয়োজন হলেও বর্তমানে চলছে মাত্র দুটি। গত ১০ জুলাই কে-টাইপ ফেরি ‘কিশাণী’ ভারি মেরামতে বিআইডবিøউটিসি’র ডকইয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মেরামত শেষ করে ওই ফেরিটি যানবাহন পারাপারে ফিরতে নূন্যতম দু’মাস সময় প্রয়োজন। কিন্তু গত ১১জুলাই থেকেই ভোলা-ল²ীপুর ফেরি সেক্টরে যানবাহন পারপারে চরম সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। ২৮কিলোমিটার দীর্ঘ ওই ফেরি রুটে বর্তমানে কে-টাইপ ফেরি ‘কুষুমকলি’ ও কনকচাঁপা’ চলাচল করলেও দিনরাতে মাত্র ৮টি রাউন্ড ট্রিপে ২শ’র বেশী যানবাহন পারপার করতে পরছে না। ফলে প্রতিনিয়তই ৩শ’ থেকে ৪শ’ পর্যন্ত যানবাহন মেঘনার দু’পাড়ে আটকা পরে থাকছে।
প্রায় একাই পরিস্থিতি ভোলা ও বরিশালের মধ্যবর্তী লাহারহাট-ভেদুরিয়া রুটেও। বিআইডব্লিউটিসি এ সেক্টরে ৪টি ইউটিলিটি ফেরির সাহায্যে এতদিন যানবাহন পারপার করলেও এর ২টির কারিগরি ত্রুটি মারাত্মক। ‘অপরাজিতা ও দোলনচাঁপা’ নামের দুটি ফেরিতেই অতি নিম্নমানের ভোল্বো-পেন্টা ইঞ্জিন ব্যবহার করায় গ্যারান্টি পিরিয়ডের মধ্যেই তাতে গোলযোগ দেখা দেয়। গত কয়েক বছর যাবতই এসব ফেরি সম্পূর্ণ জোড়াতালি দিয়ে চালান হচ্ছে। ওই দুটি ফেরির সাথে অপেক্ষাকৃত ভাল ‘কৃষ্ণচুড়া’ ফেরিটি চলছে এ সেক্টরে। স¤প্রতি এখানে আরো একটি ইউটিলিটি ফেরি মোতায়েন করা হলেও গত ১২জুলাই তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে এ সেক্টরেও প্রতিনিয়ত বিপুল সংখ্যক যানবাহন আটকা পড়ছে।
এসব ব্যাপারে গতকাল বিআইডব্লিউটিসি’র জিএম-বানিজ্য এনএস শাহদত আলীর সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, ভোলা-ল²ীপুরের ফেরি কিষাণীর মেরামত অত্যন্ত জরুরী ছিল বিধায় তা প্রত্যাহার করতে হয়েছে। তবে চেষ্টা চলছে অন্য যে কোন রুট থেকে একটি কে-টাইপ ফেরি ওই সেক্টরে মোতায়েন করার। পাশাপাশি ভোলা-বরিশালের মধ্যবর্তী ফেরি সেক্টরটির প্রতিও কতৃপক্ষ নজর রাখছেন। বর্ষা মওশুমের প্রবল শ্রোতের কারনে সব সেক্টরেই ফেরি পারাপারে বাড়তি সময় লাগছে বলে জানিয়ে পরিস্থিতি উত্তরনে চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
এসব বিপত্তির কারনে চট্টগ্রাম থেকে ল²ীপুর-ভোলা হয়ে বরিশাল পর্যন্ত সড়ক পথ অতিক্রম করতে প্রতিটি যানবাহনের যে সময় লাগছে, তার দ্বিগুন সময় ব্যায় হচ্ছে ফেরি পার হতে।
অপরদিকে ওই একই মহাসড়কের বরিশাল ও খুলনার মধ্যবর্তী বেকুঠিয়াতে কাঁচা নদীর ফেরি পার হতেও ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয় বেশীরভাগ যানবাহনকে। সড়ক অধিদফ্তরের নিয়ন্ত্রিত বেকুঠিয়া ফেরি পয়েন্টে ৩টি ইউটিলিটি ফেরি থাকলেও চলছে মাত্র ১টি। অপর দুটি ফেরির একটিতে কোন ইঞ্জিনই নেই। অপরটিতে দীর্ঘদিনের পুরেনা ইঞ্জিনটি ধীর গতির হলেও জ্বালানী ব্যায় বেশী। ফলে কতৃপক্ষের ভাষায় অতি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ওই ফেরিটি যানবাহন পারাপার করেনা। ফলে দুই দশক আগে চালু হওয়ায় বেকুঠিয়া ফেরি সার্ভিসটি চলছে আগের নিয়মেই এক ঘন্টা অন্তর। অথচ গত দুই দশকে এ রুটে যানবাহন পারপারের পরিমান বেড়েছে অন্তত ৪গুন । এ ফেরি সার্ভিসটির ওপরই দেশের দক্ষিন-পূর্ব, দক্ষিণ ও দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের ৩টি বিভাগ ছাড়াও দেশের তিনটি সমুদ্র বন্দরের সরাসরি সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা নির্ভরশীল।
এব্যাপারে গতকাল পিরোজপুর সড়ক বিভাগেরর নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, দীর্ঘদিনের পুরেনা ইঞ্জিন দিয়ে বেকুঠিয়া সেক্টরে ফেরি পরিচালনা করতে হচ্ছে। নতুন ইঞ্জিন সংগ্রহ সহ পরিস্থিতি উন্নয়নের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ