রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
জয়পুরহাট থেকে মুহাম্মদ আবু মুসা : জয়পুরহাটে পোল্ট্র্রি শিল্পের বিপ্লব ঘটিয়েছেন জেলার খামারীরা। এ শিল্পে এখন কাজ করছে প্রায় ২০ হাজার পোল্ট্রি কর্মী। সম্ভাবনাময় এ শিল্পের দ্রæত উত্থানে উৎসাহীত হয়ে প্রতিনিয়ত গড়ে ওঠছে নতুন নতুন পোল্ট্রি ফার্ম।
বাংলাদেশের পোল্ট্র্রিভিলেজ খ্যাত জয়পুরহাট জেলার জামালগঞ্জে ১৯৭৩ সালে প্রায় ১১ একর জমির উপর নির্মিত হয় জেলা সরকারী হাঁস মুরগীর খামার। সেই থেকে শুরু হয় পোল্ট্র্রি শিল্পের উত্থান। এই খামারকে কেন্দ্র করে বর্তমানে জেলায় প্রায় ১০ হাজার পোল্ট্র্রি ফার্ম গড়ে উঠেছে। সম্ভবনাময় এই শিল্পে অগ্রসর দেখে জেলায় প্রায় ১১টি পোল্ট্র্রি ফিড কারখানা ও অর্ধ শতাধীক হ্যাচারি গড়ে ওঠেছে। উদিয়মান এ শিল্পে লক্ষাধিক মানুষের রুজি-রোজগারের যোগান দিচ্ছে এই শিল্প। প্রায় ৩০০ ডিলার বাচ্চা, ডিম ও ফিডের ব্যবস্যা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তারা বিভিন্ন উপায়ে খুব সহজেই খামারীদের কাছে বাচ্চা, ডিম ও ফিড সরবরাহ করছে। এ শিল্পকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক (ভেটেনারী) ঔষধ কোম্পানীও সমৃদ্ধি লাভ করেছে। অন্যদিকে বিভিন্ন কোম্পানির কয়েকশত প্রতিনিধি ঔষধ সরবরাহ কাজে জড়িত রয়েছে। এ জেলায় পোল্ট্র্রি শিল্পের ঔষধ খাতে বছরে ২২-২৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়। এছাড়াও, জেলায় সরকারী হাঁস-মুরগী খামারে উৎপাদিত মুরগীর বাচ্চা ও ডিম খুব সহজেই পৌছে যাচ্ছে খামারিদের কাছে।
জেলার ফিড কারখানাগুলোতে বস্তাপ্রতি পোল্ট্র্রি ফিড উৎপাদন খরচ হয় ১০৫০ থেকে ১২৫০ তা ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রয় হয় খামারীদের কাছে। কম দামে খুব সহজেই মান সম্পন্ন ফিড পেয়ে খামারীরা নির্বিঘেœ বিভিন্ন জাতের মুরগী পালন করেন। ১টি ডিমের দাম ও হ্যাচিং খরচ হয় ১১-১২ টাকা। তা খামারিদের নিকট বিক্রয় হয় ১৩-১৫ টাকায়। জেলায় বিভিন্ন হ্যাচারীতে গত অর্থ বছরে প্রায় ৩ কোটি ১ দিনের বাচ্চা উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া খামার থেকে পাইকারদের কাছে মাংসের মুরগী (সোনালি জাতের) বিক্রয় হয় ১৫৫-১৬০ টাকায় যা ড্রেসিংসহ খুচরা বিক্রি হয় ১৭০-১৮০ (ব্রয়লার) মুরগী পাইকারী বিক্রয় হয় ১৪০-১৪৫ টাকায় যা ড্রেসিংসহ খুচরা বিক্রি হয় ১৬০-১৬৫ টাকায়। সোনালী, ব্রায়লার, লেয়ার, ইসা ব্রাউন্ড, হাইব্রিড, সাদা কক, এই মুরগী পোল্ট্রি ফার্মগুলোতে পাওয়া যায়। সোনালি ও হাইব্রিড লেয়ার মুরগী ডিম দেয়, ব্রয়লার সাদা কক মাংসের জন্য ভাল। সোনালি জাতের ১শ মুরগীর জন্য খরচ হয় ৩ হাজার ৮শ টাকা বিক্রি হয় ৫/৬ হাজার টাকা এতে নীট লাভ ১ হাজার ৫শ থেকে ২ হাজার টাকা। সোনালী ১ হাজার মুরগীর বাচ্চা থেকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। ব্রয়লার ১ হাজার মুরগীর বাচ্চা থেকে মাসে ১৫/২০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। ইসা ব্রাইন্ড ১ হাজার মুরগীর ডিম বিক্রি করে মাসে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব বলে, খামারীরা জানান। ইসা ব্রাইন্ড মুরগীর ডিম দেয় ৯০% হোয়াইট মুরগী ডিম দেয় ৯৫% আর সোনালি ৫০% ব্রাউন ও হোয়াইট মুরগীর ডিম বিক্রয় হয় প্রতি পিচ ৫ টাকা দরে। সোনালি মুরগীর ডিমের মূল্য সাড়ে ৭ টাকা। এই ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো হয়। মুরগীর লিটার মাছের খাদ্য হিসাবে প্রতি বস্তা ১শ টাকা দরে বিক্রয় হয়। এছাড়াও জয়পুরহাটে পোল্ট্র্রি শিল্পে কোয়েল পাখির ছোট বড় মিলে শতাধীক খামার গড়ে ওঠেছে। একটি কোয়েল পাখি ৩০ টাকায় বিক্রয় হয়, কোয়েল পাখি প্রতিদিন ডিম দেয় ১টি করে। প্রতি হালি বিক্রি হয় ৭/৮ টাকা দরে। কোয়ের পাখির খামারও ধীরে ধীরে জয়প্রিয় হয়ে উঠছে এ জেলায়। এছাড়ও সম্প্রতি জেলায় অর্ধশত হাঁসের খামার গড়ে উঠেছে।
জয়পুরহাটের পোল্ট্রি শিল্প এখন বাংলাদেশের বৃহওম শিল্প হিসাবে পরিচিত। জয়পুরহাটের পোল্ট্র্রি শিল্প বাংলাদেশে ১ম স্থান অধিকার করেছে। জেলার বেকার যুবক, দ্ররিদ্র কৃষক ও দুস্থ মহিলাদের মাঝে স্বল্পমূল্যে মুরগী ও ডিম সরবরাহের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ তাদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যেই সরকারীভাবে এ উদ্যোগ গৃহিত হয়। এই খামারকে কেন্দ্র করে জয়পুরহাট ও পাশ্ববর্তী নওগাঁ, বগুড়া, দিনাজপুর, গাইবান্ধাসহ গড়ে ওঠে পোল্ট্রি জোন। যেখানে ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার খামার, যেখানে কাজ করছে প্রায় লক্ষাধীক শ্রমিক। এ জেলা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে মুরগী ও ডিম নিয়ে যায় ব্যবসায়ীরা। এ খামার থেকে প্রতি মাসে উৎপাদিত হয় প্রায় ১৪ হাজার মে.টন মাংশ। জেলার খামারগুলো থেকে জেলার ডিম ও মাংসের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে শুধু জয়পুরহাটেই ছোট বড় মিলে প্রায় ১৫ হাজার খামারে ২ কোটি মুরগী পালন করা হয়। উল্লেখ্য, জেলার জামালগঞ্জে অবস্থিত সরকারি পোল্ট্র্রি খামারেই প্রথম সোনালি জাতের মুরগী উদ্ভাবন করা হয়। জেলার পোল্ট্র্রি ফার্মগুলোর জন্যকোটি কোটি টাকার যোগান হচ্ছে বিভিন্ন ব্যাংকিং ও এনজিও খাত থেকে। জেলায় অবস্থিত ১১ ফিড মিল থেকে মাসে উৎপাদন হয় প্রায় ১৫ হাজার মে.টন ফিড, যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা হয়।
জেলার শেফালী পোল্ট্র্রি খামারের মালিক সাইফুল ইসলাম জানান, আমি প্রথমে খুব ছোট পরিসরে শুরু করলেও বর্তমানে আমার ৫/৭ টি ৫ তলা বিশিষ্ট মুরগীর খামার রয়েছে। এটি অত্যন্ত লাভজনক ও সম্ভাবনাময় একটি শিল্প। এ শিল্প থেকে খুব সহজেই যে কেউ স্বাবলম্বি হতে পারেন। তবে গৃহপালিত মুরগীর একটি ভাইরাস জনিত মারাত্বক প্রাণঘাতি রোগ হচ্ছে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা। এ রোগ দেখা দিলে ঐ এলাকার হাঁস মুরগীর মাঝে অতি দ্রæত ছড়িয়ে পরতে পারে। তবে জেলায় রোগের তেমন কোন প্রাদুর্ভাব নেই। সে কারনে এখনও এ অঞ্চলে নতুন নতুন পোল্ট্রি খামার ও ফিড কারখানা গড়ে উঠছে। এখানে জরুরী ভিত্তিতে একটি পোল্ট্র্রি ক্লিনিক স্থাপন করা দরকার। জয়পুরহাট পদ্মা ফিড এন্ড চিকেন এর এমডি জয়পুরহাটের বিশিষ্ট শিল্পপতি আনোয়ারুল হক আনু জানান, এ জেলার সমৃদ্ধ পোল্ট্র্রি শিল্পকে আরো সমৃদ্ধ করার জন্য জেলায় একটি মিট প্রসেসিং কারখানা স্থাপন জরুরী। এছাড়া মান সম্পন্ন ফিড উৎপাদন নিশ্চিতের জন্য কারখানাগুলোতে নজরদারী বৃদ্ধি করতে হবে। কারখানাগুলোতে ঠিকমত নজরদারী না থাকলে মানহীন ফিড উৎপাদন ও বিপনন হতে পারে। এতে এ শিল্প ক্ষতির মুখে পরতে পারে।
জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা জানান, পোল্ট্রি ফিড কারখানা ও হ্যাচারী খামারগুলোতে লোকের কর্মসংস্থান দিন দিন বেড়েই চলছে। এ শিল্প প্রচুর লাভজনক ও সম্ভাবনাময়। জেলায় ব্যাংকগুলোতে সহজ শর্তে ও কম সুদে ঋণ সুবিধা দেয়া প্রয়োজন। অল্প সুদে র্দীঘ মেয়াদী ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা, বিদেশ থেকে পোল্ট্রি, পোল্ট্রি জাত দ্রব্যাদি খাদ্য উপাদান প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে। মুরগী থেকে মুরগী ও হাঁসের বাচ্চা আমদানী করতে হলে ইনফ্লুয়েঞ্জা মুক্ত প্রত্যায়ন পত্রসহ আমদানি করা উচিত। পোল্ট্রি শিল্পের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষনের ব্যবস্থাসহ একটি হাঁস মুরগীর ক্লিনিক ও প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করা প্রয়োজন। বিনা শুল্কে পোল্ট্রি শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করে সরবরাহের ব্যবস্থা করা ও পোল্ট্রি শিল্পে ভতুর্কীর ব্যবস্থা করে মাংসের বিপনন ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি। তবেই সারাদেশে এ শিল্প অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।