Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মশা মারার টাকা গেল কোথায়?-রিজভী

| প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, রাজধানীতে মশার ব্যাপকতা বেড়ে যাওয়ায় চিকুনগুনিয়া নামক ব্যাপকবিস্তারী রোগটি এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। অথচ মশক নিধনে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে শত শত কোটি টাকা ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে। এত টাকা ব্যয় হলেও ন্যুনতম মশক নিধন হয়নি। তাহলে টাকাগুলো গেল কোথায়? গতকাল (রোববার) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বিদ্যুৎ সেক্টরে ভয়াবহ দুর্নীতি চলছে উল্লেখ করে এসময় তিনি বলেন, রেন্টাল ও কুইক রেন্টালে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের নামে দেশে হরিলুট চলছে। সরকারের মন্ত্রীরা ত্রাণ সহায়তা নিয়ে পাড়া-জাগানো চিৎকার করলেও বন্যাদুর্গতদের কাছে এখনও সরকারী ত্রাণ পৌঁছায়নি। ফলে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে সীমাহীন দূর্ভোগে পড়েছে বানভাসী মানুষ।
মশা নিধনে সিটি করপোরেশন ব্যথ হয়েছে জানিয়ে রিজভী বলেন, মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করে দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে লাগামহীন কথাবার্তা বলা হচ্ছে। মেয়রদের বক্তব্যে নগরবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া। কিন্তু মশক নিধনের ব্যর্থতার কারণে ঢাকা শহরে শুরু হওয়া চিকুনগুনিয়া যেভাবে সারাদেশে মহামারী আকার ধারণ করেছে তাতে জনগণের মধ্যে চরম উদ্বেগ ও আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। দেশে জনস্বাস্থ্য এখন চরম হুমকির মুখে। সরকার এবং দুই মেয়র এর দায় এড়াতে পারেনা। চিকুনগুনিয়ার মতো মহামারীর আগ্রাসন প্রতিরোধে সরকারের প্রস্তুতি দুরে থাক বরং সরকার ও সরকারের প্রতিনিধিরা জনগণের দু:খ-কষ্ট নিয়ে উপহাস করছে। শুধু মশা নয়, জনগণ সিটি কর্পোরেশনের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সেবাগুলি পাচ্ছে না, বরং তারা এখন চরম জনদুর্ভোগের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে। তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন-ঢাকা শহরে বৃষ্টির মৌসুমেই শুরু হয় খোঁড়াখুড়ি, বৃষ্টির পানিতে রাস্তাঘাটগুলো খাল-বিলে পরিণত হয়। চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে মানুষের যাতায়াত। ফলে নগরজীবন ভয়াবহ দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। এর দায় কোনক্রমের সরকার এড়াতে পারেনা। বরং সরকারের গণবিরোধী অগণতান্ত্রিক দু:শাসনের কারণেই দেশের সামগ্রিক অবকাঠামোই এখন ভেঙ্গে পড়েছে।
বিদ্যুৎ সেক্টর নিয়ে অভিযোগ তুলে বিএনপি’র এই নেতা বলেন, সারাদেশের গ্রাম-গঞ্জে, মফ:স্বল শহরে চলছে ভয়াবহ লোডশেডিং। রাজধানীও এর ব্যতিক্রম নয়। তারপরও বিদ্যুৎতের উন্নতি নিয়ে সরকার সন্তুষ্টির কথা অহরহ জনগণকে শুনিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের সত্বা ও স্বরূপ মিথ্যা দর্শনের ওপর প্রতিষ্ঠিত। অবাধ দুর্নীতি আর লুটপাট জারি রাখতে এরা ক্ষমতার পর্বতচূড়ায় উঠে এখন আর নামতে পারছে না। এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে ক্ষমতাসীনরা দুর্নীতির আখড়া বানায়নি। তাই মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে মানুষের মনভোলানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, রেন্টাল ও কুইক রেন্টালে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের নামে দেশে হরিলুট চলছে। গণমাধ্যমের খবর, গত ৯ বছরে বিদ্যুৎ নামে উৎপাদন ছাড়াই প্রণোদনা (ইনসেন্টিভ) হিসেবে প্রকল্পের মালিকেরা সরকারের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে ৩৯ হাজার ২২৬ কোটি টাকা। বেসরকারি বিদ্যুৎ উদ্যোক্তারা তাদের সাথে সরকারের চুক্তি হিসেবে বিশেষ শর্তে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট আকারে আদায় করে নিচ্ছে এসব অর্থ। সরকারের ভ্রান্তনীতির কারণে স্বল্পব্যয়ে মধ্যমেয়াদী বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো ব্যর্থ হয়েছে। তাই এখন তারা রেন্টাল-কুইকরেন্টালের উপর প্রচন্ডভাবে নির্ভরশীল। সরকারের এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সুবিধাভোগী একশ্রেণির উদ্যোক্তরা বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। সর্বত্রই আলোচনা হচ্ছে রেন্টাল ও কুইকরেন্টালের নামে যারা হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করছে তারা সরকারেরই ঘনিষ্ট লোক ও শীর্ষ নেতাদের আত্মীয়স্বজন। লুটের টাকার ভাগ জায়গা মতো পৌঁছায়। তিনি বলেন, মাত্র একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রেই সরকারের গচ্চা প্রায় দুই হাজার তিনশ’ কোটি টাকা। চুক্তি অনুযায়ী ফার্নেস অয়েলের পরিবর্তে ডিজেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করায় সরকারের এ অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হচ্ছে। ৩০৫ মেগাওয়াটের সামিট মেঘনাঘাট পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (এসএমপিসিএল) কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে সরকারকে এ অর্থ গচ্চা দিতে হচ্ছে। আগামী ২২ বছর এ হারে বিদ্যুৎ কিনতে হলে ২৫ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে। সামিট মেঘনাঘাট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ফার্নেস অয়েল এবং গ্যাসচালিত মেশিন বসানোর কথা। কিন্তু বসানো হয়েছে ডিজেল ও গ্যাসচালিত মেশিন। এতে দ্বিগুণের বেশি ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ কেনার খরচ ফার্নেস অয়েলে উৎপাদনের চেয়ে তিনগুণ বেশী। বিশেষজ্ঞদের মতামত তুলে ধরে বিএনপি নেতা বলেন, কম মূল্যের জ্বালানি ফার্নেস অয়েলে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করলে ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্ঠজনদের বড় বড় কোম্পানিগুলোকে বেশি টাকার সুবিধা দেয়া যায় না। এ জন্য উচ্চমূল্যের জ্বালানি ডিজেল দিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনার অনুমতি দিচ্ছে সরকার। আর এই ঘাটতি মেটাতে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে। বড় বড় কোম্পানিগুলোকে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে জনগণের পকেট কাটছে সরকার। জনগণের টাকা আত্মসাৎ করার জন্য শাসকগোষ্ঠী এতোই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, তারা বর্তমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানের প্রশস্ত রাজপথের দিকে না গিয়ে চক্রান্তের বদ্ধ চোরাগলিতেই হাঁটছে। এরা ক্ষমতার মোহে অন্ধ, তাই অন্ধের মতন শেষ পর্যন্ত পথের সন্ধান পায় না। এরা দেশকে গণতন্ত্রহীন করে নৈরাজ্যের গভীর গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।
বন্যার্ত মানুষের পাশে বিএনপি নেতাকর্মীসহ সকলকে দাঁড়ানোর আহŸান জানিয়ে রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যে ভয়াবহ বন্যা হচ্ছে তাতে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে সীমাহীন দূর্ভোগে পড়েছে বানভাসী মানুষ। বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিএনপি নেতাকর্মী ও দেশের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে বানভাসী মানুষের পাশে দাঁড়াতে আহবান জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বন্যাদুর্গতদেরকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করতে শুরু করেছে এবং বিএনপি’র পক্ষ থেকে এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু সরকারের মন্ত্রীরা ত্রাণ সহায়তা নিয়ে পাড়া-জাগানো চিৎকার করলেও বন্যাদুর্গতদের কাছে এখনও সরকারী ত্রাণ পৌঁছায়নি। তিনি বলেন, বন্যা আক্রান্ত এলাকায় যতটুকু সরকারি ত্রাণ গেছে তা স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও তাদের আত্মীয়স্বজনরাই লুটে নিচ্ছে, গরীব-অসহায় ও ক্ষুধার্ত মানুষরা কোন ত্রাণ পাচ্ছেনা। অপরদিকে বন্যায় বানভাসী মানুষের বাড়ীঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কোথাও খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছে, আবার কেউ কেউ কলাগাছের ভেলাতেই দিনাতিপাত করছে। ত্রাণের সামান্য কিছু সন্ধান পেলে কলাগাছের ভেলায় চড়ে বানভাসী মানুষ ছুটে আসছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও বাসস্থানের অভাবে বন্যাদুর্গত মানুষরা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। বন্যাদুর্গত লাখ লাখ আর্ত নর-নারী শুস্ককন্ঠে কেবল দুটো ভাত চাইছে, সরকার কত ত্রাণ দিয়েছে সেই পরিসংখ্যান শুনতে চাচ্ছে না। তিনি বিএনপি’র পক্ষ থেকে দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের স্বচ্ছল মানুষকে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে বানভাসী চরমকষ্টে নিপতিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি নেতা আবদুস সালাম, খায়রুল কবির খোকন, মীর সরাফত আলী, আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন প্রমুখ।



 

Show all comments
  • S. Anwar ২৩ জুলাই, ২০১৭, ৮:৪৩ এএম says : 0
    মশা মারার ওই টাকা দিয়েইতো বিএনপি-জামাত মারা হচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ