Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সীতাকুন্ডে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে

| প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি ৮৮ জন
সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুন্ড থেকে : সীতাকুন্ডের সোনাইছড়ি পাহাড়ের ত্রিপুরা পাড়ায় অজ্ঞাত ভাইরাস জনিত সর্দি-জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল অরুন ত্রিপুরা (৭) নামের আরো এক শিশুকে ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীরা। সে ছোটকুমিরা ত্রিপুরা পাড়ার ধনকুমার ত্রিপুরার পুত্র। এ নিয়ে গত ৫দিনে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত মোট ৮৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে কয়েকজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পূরুষও আছেন। এদিকে ঐ ত্রিপুরা পাড়ায় গত ৫দিন ধরে প্রতিদিনই কেউ না কেউ রোগাক্রান্ত হলেও এখনো ভাইরাসটি সনাক্ত করতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে দুয়েক-দিনের মধ্যেই এ বিষয়ে পরিস্কার হওয়া যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সীতাকুন্ড উপজেলা স্বাস্থ্যকর্মকর্তা ডাঃ নুরুল করিম রাশেদ প্রতিবেদককে বলেন, গতকালও (রোববার) নতুন করে এক শিশু অজ্ঞাত ঐ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তার গায়ে জ্বর থাকায় তাকে স্বাস্থ্যকর্মীরা হাসপাতালে নিয়ে গেছে। শিশুটির বাড়ি কুমিরা ত্রিপুরা পল্লীতে। তবে সে সোনাইছড়ি পাহাড়ে কাকার বাড়িতে বেড়াতে গেলে সেখানেই জ্বরাক্রান্ত হয়। তিনি বলেন, গত বুধবার সোনাইছড়ি ত্রিপুরা পাড়ায় এক সাথে ৪ শিশুর মৃত্যুর পর থেকে সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীরা সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করছেন এবং সেখানে রোগি সনাক্ত করছেন। গত ৫দিনে ঐ এলাকায় মোট ৮৮জন রোগির সন্ধান মিলেছে। এদের মধ্যে কয়েকজন প্রাপ্ত বয়স্ক এবং অন্যরা সবাই বিভিন্ন বয়সের শিশু।
তাদেরকে হাসপাতালে নেওয়ার পর দেখা গেছে তাদের শরীরে চরম পুষ্টিহীনতা ও হিমোগেøাবিন শূন্যতা আছে। তাই সরকারের উপর মহলের নির্দেশে এসব শিশুদেরকে চিকিৎসার পাশাপাশি পুষ্টিযুক্ত খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রাশেদ আরো বলেন, যাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে তাদের বেশিরভাগই সুস্থ হয়ে গেছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের নির্দেশ না থাকায় তাদেরকে বাড়ি যেতে না দিয়ে হাসপাতালেই তাদের যতœ নেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডাঃ আজিজুর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, যাদেরকে রোগাক্রান্ত হিসেবে সনাক্ত করা হয়েছে তাদের মধ্যে চমেকে ৫৪ জনকে, ফৌজদারহাট বিআইটিআইডিতে ২৯ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল অরুন ত্রিপুরা নামক একজন সাধারণ জ্বরের রোগিকে ভর্তি করানো হয়েছে। তিনিও দাবী করেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া সবাই ভালো আছে। এখন ঢাকার চিকিৎসক দল যে রক্ত সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছিলেন সেটির রিপোর্ট পেশ করলেই সুস্থ হওয়া রোগিদের বাড়ি যেতে দেওয়া হবে। একই কথা বলেন, চমেকের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোঃ নাসির মাহমুদ। তিনি বলেন, চিকিৎসার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার পেয়ে রোগিরা সবাই বেশ ভালো আছে। আমাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হলেই সুস্থ হওয়া রোগিদের বাড়ি যেতে দেওয়া হবে।
এদিকে সরেজমিনে সোনাইছড়ি ত্রিপুরা পাড়া পরিদর্শনকালে জানা যায়, গতকাল এখান থেকে অরুন ত্রিপুরা নামক এক ৭ বছর বয়সী শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানো হয়েছে। তার গায়ে জ্বর, সর্দির পাশাপাশি ছোট ছোট লাল র‌্যাশ দেখা গিয়েছিলো। এছাড়া রিপন ত্রিপুরা (১৫) নামক আরো এক কিশোর অসুস্থ হয়। তবে তার অবস্থা গুরুতর না হওয়ায় তাকে পাড়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসকরা ঔষধ দিয়েছেন।
এ ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দা রামহরি ত্রিপুরা বলেন, আমরা এখন এই জ্বর নিয়ে ভয় পাচ্ছি না। কারণ, জ্বর-সর্দি তো সবার হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাবার পর কেউ তো মারা যায়নি। আগে হাসপাতালে না নেওয়ায় ৯টি শিশু এখানে মারা গেছে। তাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তারাও বেঁেচ যেত। এখন যাদেরকে নিয়ে গেছে তারা সবাই ভালো আছে। এ পাড়ার এক গৃহবধূ লক্ষী ত্রিপুরা বলেন, আমাদের কারো জ্বর-সর্দি বা ব্যাথা হলেই এখন আমরা এখানে ডাক্তারদের বলছি। তারা এসে সাথে সাথে পরীক্ষা করছেন। যদি কাউকে হাসপাতালে পাঠানোর মত হয় তারা পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
সীতাকুন্ডের ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক মামুনুর রশিদ। তিনি বলেন, এখানে জায়গা কম হওয়ায় অনেককেই চমেকে পাঠিয়ে দিয়েছি আমরা। সব রোগিদের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো বলে দাবী করেন তিনি। এদিকে রোগিদের চিকিৎসা সেবার প্রদানের মধ্যেই আবার ত্রিপুরা পাড়ায় দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে যেসব ডাক্তার বা নার্স তাদের টিকা প্রদানসহ স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করেননি তাদের বিরুদ্ধে গঠিত দুটি তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দিয়েছে। একথা স্বীকার করে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডাঃ আজিজুর রহমান ছিদ্দিকী প্রতিবেদককে বলেন, দুটি রিপোর্টই আমরা আজ ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছি। ঢাকার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ রিপোর্টগুলো দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। এছাড়া অজ্ঞাত এ রোগ নির্ণয়ে যে রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছিলো তার রিপোর্টও দু‘একদিনের মধ্যে পাওয়া যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ