Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সীতাকুন্ডে অজ্ঞাত রোগে আরো ১৫ জন হাসপাতালে

| প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুন্ড থেকে : সীতাকুন্ডের মধ্যম সোনাইছড়ি পাহাড়ের ত্রিপুরা পাড়ায় আরো ১৫ জন অজ্ঞাত ভাইরাস জনিত জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হয়েছে। গতকাল শনিবার তাদের সবাইকে ফৌজদারহাট সংযুক্ত সংক্রামক ব্যাধি (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এ নিয়ে গত ৪দিনে ঐ পাড়া থেকে মোট ৮৬ জন রোগিকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, আক্রান্তদের মধ্যে দুই জন ছাড়া অন্যদের অবস্থা তেমন গুরুতর নয়। কিন্তু কোনরকম ঝুঁকি না নিয়ে তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার মধ্যে রাখতেই হাসপাতালে আনা হয়েছে।
জানা যায়, সীতাকুন্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের মধ্যম সোনাইছড়ি পাহাড়ের আদিবাসী ত্রিপুরা পাড়ায় অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে এক সপ্তাহে মোট ৯শিশুর মৃত্যুর পর স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিদিন ত্রিপুরা বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন। তাদের এ পরীক্ষায় প্রতিদিনই নতুন নতুন রোগির সন্ধান মিলছে। সর্বশেষ গতকাল শনিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত ত্রিপুরা পাড়া থেকে মোট ১৫ জন রোগিকে ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বিআইটিআইডি হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ মামুনুর রশীদ বলেন, ত্রিপুরা পাড়ার জ্বর-সর্দি ও পুষ্টিহীনতা জনিত কারণে অসুস্থ সবাইকে হাসপাতালে এসে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। শনিবারও ১৫ জনকে এখানে ভর্তি করানো হয়েছে।
বিআইটিআইডি এর ডাইরেক্টর প্রফেসর ডা.এম.এ.হাসান চৌধুরী প্রতিবেদককে বলেন, যেসব ত্রিপুরা রোগি এখানে ভর্তি হয়েছে চিকিৎসায় তাদের সবার স্বাস্থ্যের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। শনিবার নতুন করে ১৫ জন রোগি ভর্তি হয়েছে। তারা সাধ্যমত সবাইকে চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার পরিবেশন করছেন। শিশুরা খুবই আগ্রহের সাথে খাওয়া দাওয়া করছে। শরীরে পুষ্টি না থাকলে রোগ সহজেই কাবু করতে পারে। ত্রিপুরা শিশুদের ক্ষেত্রেও এটিই হয়েছিলো বলে মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে গতকাল (শনিবার) দুপুরে সরেজমিনে ঘটনাস্থল ত্রিপুরা পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ ঘরের দরজা বন্ধ, ভেতরে মানুষজন নেই। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রত্যেক পরিবারের কেউ না কেউ রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকায় পাড়ার অধিকাংশ মানুষ এখন হাসপাতাল মুখী। এ কারণে পাড়া অনেকটা জনশূন্য হয়ে গেছে। পাড়ার বাসিন্দা কাঞ্চন ত্রিপুরা বলেন, এখানে ৬৫টি পরিবার আছে। এবারের অসুখে পাড়ার সব পরিবারই আক্রান্ত হয়েছে। ৯জন মারা যাওয়া ছাড়াও ৭০/৮০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। কোন ঘরের একজন, কোন ঘরের ২/৩ জনও হাসপাতালে ভর্তি। মোট কথা এমন একটি পরিবার নেই যাদের কেউ অসুস্থ হয়নি। তাই হাসপাতালে আসা যাওয়া করতে করতেই বেলা যাচ্ছে সবার।
হাসপাতালে আশংকাজনক অবস্থায় ভর্তি থাকা সীমা ত্রিপুরার (৮) বাবা বিমল ত্রিপুরা প্রতিবেদককে বলেন, জ্বরে তার এক ছেলে শিমুল মারা গেছে। একই সময়ে অসুস্থ হওয়া তার মেয়ে সীমা ত্রিপুরার অবস্থা গুরুতর। তিনি তাকে দেখতে হাসপাতালে যাচ্ছেন। ছেলের শোকের মধ্যেই মেয়ের জন্য দারুন দুশ্চিন্তায় থাকতে হচ্ছে তাকে। এভাবেই হাসপাতালে যাতায়াতে বেলা কাটছে এ পাড়ার সর্দার সুজন ত্রিপুরার। তার দুই ছেলেও জিনিয়া ও কানাইয়া মারা গেছেন। আরো দুই সন্তান এখনো হাসপাতালে। তিনিও এখন পাড়ার চেয়ে বেশিসময় থাকছেন হাসপাতালে। এভাবে পাড়ার সবাই হাসপাতাল মুখী হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় ত্রিপুরা বাজার ও দোকান আগের মত জমছে না। সীতাকুন্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ নুরুল করিম রাশেদ প্রতিবেদককে বলেন, ত্রিপুরাদের এ অবস্থা হবার কারণ, পাড়ার বাসিন্দাদের সবারই পুষ্টিহীনতা আছে। তাদের খাদ্য ঠিক নেই। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকেন। দূষিত পানি পান, পঁচা শুকরের মত খাবারও খাওয়ায় তাদেরকে নানা ধরণের জীবানু আক্রমন করছে। আর তাই রোগ তাদের দ্রæত দুর্বল করে দেয়। এ কারণে কারো সামান্য সর্দি-জ্বর হলেও আমরা তাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করাচ্ছি। সেখানে চিকিৎসা যেমন চলছে তেমনি সুষম ও পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে তারা উপকৃত হবে। একই কারণে ইতিমধ্যে অনেকেই সুস্থ হয়ে উঠলেও তাদেরকে পাড়ায় না পাঠিয়ে হাসপাতালে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ইতিপূর্বে স্বাস্থ্যকর্মীরা ত্রিপুরা পাড়ায় টিকা প্রদান না করাসহ যেসব গাফিলতি করেছে তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে ডাঃ রাশেদ বলেন, এ বিষয়ে আমরা একটি রিপোর্ট ঢাকায় পাঠিয়েছি। আমাদের রিপোর্ট দেখে ঢাকার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবেন। তবে তারা রিপোর্টে কি লিখেছেন তা তিনি জানাতে চাননি। এছাড়া ঢাকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা যে রক্ত সংগ্রহ করেছেন সেগুলোর পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে আরো কয়েকদিন লাগবে বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে ত্রিপুরা শিশুরা যে ৩টি স্কুলে পড়াশুনা করে রোগের কথা জানাজানি হবার পর রোগটি ছোঁয়াছে মনে করে ঐ ৩টি স্কুল বৃহস্পতিবার থেকে বন্ধ রাখা হয়। গতকাল শনিবারও স্কুলগুলো বন্ধ ছিলো। তবে আজ রবিবার থেকে সেগুলো পুনরায় চালু করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন সীতাকুন্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল ইসলাম ভূইয়া। তিনি বলেন, ত্রিপুরা আদিবাসীদের মৌলিক অধিকারগুলো রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হবে। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোঃ জিল্লুর রহমান এখানে যেসব ত্রিপুরা আদিবাসী বসবাস করছেন তাদের তালিকা তৈরী করে সমতল ভূমিতে বসবাসের ব্যবস্থা, পানীয় জলের ব্যবস্থা ও শিক্ষার উন্নয়নসহ নানামুখী পরিকল্পনা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে কাজ শুরু করা হবে বলে তিনি জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ