Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইয়াবা ঠেকাতে নাফ নদীতে মাছ ধরা বন্ধের চিন্তাভাবনা-চট্টগ্রামে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

| প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো ও আনোয়ারা সংবাদদাতা : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, মিয়ানমার থেকে অব্যাহত ইয়াবা পাচার ঠেকাতে মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন নাফ নদীতে মাছ ধরা বন্ধ ঘোষণার চিন্তা-ভাবনা চলছে। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে তিনি বলেন, মাদক ব্যবসায়ীর পক্ষে যারা সুপারিশ করবে তাদেরও আটকে রাখা হবে। মাদক একটি সর্বনাশী নেশা, এটি মানুষকে শেষ করে দেয়। মাদক থেকে দেশ ও যুব সমাজকে বাঁচাতে হবে। গতকাল (শনিবার) নগরীর পতেঙ্গায় র‌্যাব-৭ এর অভিযানে উদ্ধার করা মাদকদ্রব্য ধ্বংস কর্মসূচি এবং আনোয়ারা উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের উদ্বোধন উপলক্ষে পৃথক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, নাফ নদীতে আমরা একটা প্রোগ্রাম নিতে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তারপর প্রোগ্রামটা ঘোষণা করব। নাফ নদীতে জেলেদের কর্মবিরতির কথা ঘোষণা করব যাতে তারা মাছ ধরা থেকে বিরত থাকে। এটা পরীক্ষামূলকভাবে করব। জেলেরা সমুদ্রে গিয়ে মাছ ধরবে, সেখানে আমাদের কোন বাধা নেই। আমরা শুধু অনুরোধ করব নাফ নদীতে যেন না যায়। যাতে বিজিবি এবং কোস্টগার্ডের নজরদারিতে এসে যায় কারা সীমান্ত পাড়ি দেয়, কারা নদী অতিক্রম করে এবং কারা ইয়াবা নিয়ে আসে। এ সময় প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা বন্ধের উদাহরণ টেনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইলিশের মৌসুমে আমরা বলি তোমরা মা ইলিশ ধরো না, সেভাবে জেলেরা ইলিশ ধরতে নদীতে যায় না। এর ফলে ইলিশের চাহিদা পূরণ হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা আসা বন্ধে মিয়ানমারের সঙ্গে কথা বলেও কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা মিয়ানমানের সঙ্গে কথা বলছি। ভয়াবহতা সম্পর্কে তাদের জানাচ্ছি। তারা অব্যাহতভাবে বলে যাচ্ছে আমাদের সঙ্গে কাজ করবে, সহযোগিতা করবে। কিন্তু সুফলটা পাওয়া যাচ্ছে না। আশা করি একদিন ইয়াবাটা যেন মিয়ানমার থেকে না আসে সেজন্য তারা সহযোগিতা করবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা কোন মাদক তৈরি করি না। তারপরও আমরা এর শিকার হচ্ছি। কখনও হেরোইন, কখনও ফেনসিডিল, আর এখন ইয়াবা মহামারি আকার ধারণ করেছে। এক সময় ভারত থেকে ফেনসিডিল আসত। এ ফেনসিডিল আসা বন্ধে ভারত সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা বলে সেখানে আমরা কিছুটা সফল হয়েছি। তারা বিভিন্ন সীমান্তে ফেনসিডিল উৎপাদন বন্ধ করেছে এবং সীমান্তে বেশ কড়াকড়ি করছে যাতে ফেনসিডিল না আসে। এর ফলে ভারত সীমান্ত দিয়ে ফেনসিডিল আসা অনেকখানি কমে গেছে। ইয়াবা ঠেকাতে সীমান্তে বিজিবির সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ চলছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সীমান্ত সড়ক নির্মাণের কাজ করছি। সীমান্ত চেকপোস্ট বাড়ানোর কাজ করছি। বিজিবিকে আরও শক্তিশালী করার জন্য লোকবল বাড়ানোর কাজ চলছে।
র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ তার বক্তব্যে সীমান্ত ঘেঁষে নাফ নদীর অন্তত এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ‘নো ফিশিং’ জোন গড়ার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, সীমান্তবর্তী নাফ নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে চোরাকবারবারীরা মাছ ধরার আড়ালে ইয়াবা আনছে। এজন্য আমাদের ট্রলারগুলোকে যদি কোন বিশেষ রঙ দেয়া যায় এবং জেলেদের আইডি কার্ড দেয়া যায় কিনা চিন্তা করতে হবে। ছয় মাসের জন্য নাফ নদীর এক কিলোমিটারকে নো ফিশিং জোন করে দেখতে পারি।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, এম এ লতিফ এমপি, সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আতাহার আলী, সিএমপি কমিশনার মোঃ ইকবাল বাহার। র‌্যাবের জব্দ করা ৩৫ লাখ ৭০ হাজার পিস ইয়াবা, ২শ’ কেজি গাঁজা, ৭ হাজার ১৮১ বোতল ফেনসিডিল এং ২শ’ বোতল বিদেশি মদ-বিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অতিথিদের সামনে ধ্বংস করা হয়। র‌্যাবের হিসেবে এসব মাদকের দাম ১৭৯ কোটি ২৭ লাখ ৬৯ হাজার ৮৫ টাকা।
আনোয়ারায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের কর্মতৎপরতা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এখন শুধু আগুন নেভায়না। এরা সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ জঙ্গিবাদ দমনে এগিয়ে যাচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি দেশের জনগণ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। সব মিলিয়ে এখন বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, আনোয়ারা এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এ আনোয়ারায় ইয়াবা মহামারীর রূপলাভ করেছে। এখনই ইয়াবাসহ মাদক দমনে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দরকার।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহম্মদ খানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ, চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি কুসুম দেওয়ান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আবদুল জলিল ও সরকারের যুগ্ম সচিব ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. আবদুর রাজ্জাক। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।



 

Show all comments
  • শাহে আলম ১৬ জুলাই, ২০১৭, ৪:২০ এএম says : 0
    আপনাদের ও প্রশাসনের কাছে মুল ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকা আছে। তাদেরকে ধরলেই সব বন্ধ হয়ে যাবে। মাছ ধরা বন্ধ করে গরীব মানুষের পেটে লাথি দিয়ে কী লাভ ?
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Jabed ১৬ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ পিএম says : 0
    মাছ ধরা বন্ধ না করে মাঝির ভেসে পূলির আর গোয়েন্দারা টইল দিলে তয় হয় মাঝিদের পেটের ভাত কেরে নিয়ে কি লাভ হবে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ