Inqilab Logo

বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রূপগঞ্জে বিষাক্ত গ্যাসে মরে যাচ্ছে মাছ, নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি

| প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

খলিল শিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়নের মঙ্গলখালী এলাকায় অবস্থিত ওয়াটা ক্যামিকেল কারখানার বিষাক্ত গ্যাসে মরে যাচ্ছে পুকুর, খাল-বিলের মাছ। নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি। দিন দিন অসুস্থ্য হয়ে পড়ছেন নারী-পুরুষ থেকে শিশুরাও। মকিবনগড় এলাকার সাদেক আলীর ছেলে ইউসুফ আলী, আব্দুর রশিদের ছেলে সোহরাব মিয়া, আবুল হোসেনের ছেলে ফারুক মিয়া, ফজুর আলী মুন্সির ছেলে আব্দুল লতিফসহ অনেক পরিবার ওয়াটা ক্যামিকেল কারখানার বিষাক্ত গ্যাসে অসুস্থ্য হওয়ার ভয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছে।ওয়াটা ক্যামিকেল কারখানার বিষাক্ত গ্যাসের প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেকেই মামলা-হামলা ও নির্যাতনের হুমকির শিকার হতে হয়েছে।
প্রায় দের হাজার পরিবার জিম্মি হয়ে পড়েছেন ওয়াটা ক্যামিকেল কারখানার মালিকপক্ষের কাছে। এসব পরিবারের একটাই দাবি, হয়তো ওয়াটা ক্যামিকেল থাকবে, নয়তো পদর হাজার পরিবার থাকবে”।
দ্দধু তাই নয়, ওয়াটা ক্যামিকেল কারখানার বিষাক্ত গ্যাসের প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভাও করেছেন। মঙ্গলখালী, কাটাখালী, মোকিব নগড়, পাবই, ঠাকুরবাড়ীরটেক, ফরিদ আলীরটেক, গুলাইনগর, বানিয়াদি এলাকার মানুষওই বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভায় অংশ গ্রহন করেছিলেন। এর আগে, গত বুধবার (০৫ জুলাই) ওয়াটা ক্যামিকেল কারখানায় বিষাক্ত গ্যাসে নারী-পুরুষ, শিশুসহ প্রায় অর্ধশতাধীক অসুস্থ্য হয়ে পড়েন।
একাধীক সুত্র জানায়, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সরকারী বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের মাসিক মাসোয়ারা দিয়ে ওয়াটা ক্যামিকেল কারখানাটি পরিচালনা করছেন মালিকপক্ষ। এ কারখানায় বিভিন্ন ধরনের ক্যামিকেল উৎপাদন করা হলেও সব’কটির অনুমোদন আছে কিনা তাও প্রশ্ন উঠেছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানান, মঙ্গলখালী এলাকার ওয়াটা ক্যামিকেল নামে কারখানায় বিভিন্ন ধরনের ক্যামিকেল উৎপাদন করা হয়। কারখানাটি জনবহুল এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে। কারখানার বিষাক্ত গ্যাসে মঙ্গলখালী, কাটাখালী, মোকিব নগড়, পাবই, ঠাকুরবাড়ীরটেক, বানিয়াদি এলাকার মানুষ দিন দিন অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে রাতে মানুষ যখন ঘুমিয়ে পড়ে, তখন ক্যামিকেল কারখানার বিষাক্ত গ্যাস ছাড়া হয়। ঘুমন্ত অবস্থায়ও মানুষ অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে।
গত বুধবার (০৫ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে হঠাৎ করে বিকট শব্দে বিষাক্ত গ্যাস ছেড়ে দেয় ওয়াটা ক্যামিকেল কোম্পানির কর্তৃপক্ষ। এর পর থেকেই এলাকার শিশু-শিশোর থেকে শুরু করে নারী-পুরুষরা অসুস্থ্য হয়ে পড়তে শুরু করে। কারখানা কর্তৃপক্ষকে বার বার গ্যাস বন্ধ করার দাবি জানালেও গ্যাস বন্ধ করা হয়। প্রায় অর্ধ-শতাধীক মানুষ অসুস্থ্য হয়েছেন বলে এলাকাবাসী দাবি করেছেন। এদের মধ্যে শিশু মনিরুজ্জামান রাতুল, রবিন মিয়া, সাগর পবপারী, মাহফুজ আহাম্মেদ, আমির আলী, হাসনা হেনা, নেহা আক্তার, তিথি ইসলাম, নিলুফা আক্তার, আনোয়ারা পবগম, নাসরিন বেগম, আনোয়ার হোসেনকে স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, গরু,ছাগল, বেড়া, মুরগীসহ গবাদি পশু-পাখি মরে পযতে শুরু করেছে। শান্ত, মুনসুর আলীসহ বেশ কয়েক জনের মাছের খামার নষ্ট হয়ে গেছে। ওই সব এলাকার মানুষ এখন ওয়াটা ক্যামিকেল কারখানার বিষাক্ত গ্যাস আতঙ্কে ভুগছেন।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানান, যখন ওয়াটা ক্যামিকেল কারখানাটি এখানে স্থাপন করা হয়, তখনই এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে স্থাপন করতে নিষেধ করা হয়েছিলো। স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতা, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এবং এলাকাবাসীকে তোয়াক্কা না করে কারখানাটি চালু করা হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ জাহিদুল ইসলাম বলেন, আবাসিক ও ঘনবসতি এলাকায় এ ধরনের ক্যামিকেল কারখানা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরুপ। এছাড়া এসব এলাকায় ক্যামিকেল কারখানা স্থাপনের সুযোগও নাই। বিষাক্ত এ গ্যাসের কারনে শ^াসকষ্টজনিত রোগ হতে পারে। আর গ্যাস অনুভব করলে অব্যশই ওই এলাকা থেকে দুরে চলে পযতে হবে। এছাড়া অসুস্থ্য হয়ে পড়া পরাগীদের সুস্থ্য হতে অন্তত ১০ থেকে ১২ ঘন্টা লাগতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে ডাঃ জাহিদুল ইসলাম বলেন, অর্ধশতাধীক নারী-পুরুষ ও শিশু অসুস্থ্য হয়ে পড়ার ঘটনায় কারখানা কর্তৃপক্ষকে আমি প্রশ্ন করেছি। তখন তারা বলেছেন, ১৯৯৬ সালে ওয়াটা ক্যামিকেলটি মঙ্গলখালী এলাকায় স্থাপন করা হয়েছিলো। তখন কারখানার আশ-পাশে আবাসিক এলাকা ছিলো না বলে জানায়।
কারখানার জেনারেল ম্যানেজার আবু তাহের ভুইয়া বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ যেখান থেকে অনুমোতি নেয়া দরকার আমরা সব দপ্তর থেকেই অনুমোতি নিয়ে কারখানা পরিচালনা করে আসছি। তবে, ওই দিন ওয়াটা ক্যামিকেল কারখানার গ্যাসের পাইপ হঠাৎ করে লিক হয়ে যায়। এ কারনে গ্যাস চারদিক ছড়িয়ে পড়েছে। ৩ থেকে ৪ ঘন্টা কাজ করে লিক সারানো হয়। আর কোন সমস্যা নেই। এছাড়া এলাকাবাসীর আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা ইসলাম বলেন, ওয়াটা ক্যামিকেল কারখানার বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তদন্ত পমাতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রূপগঞ্জ

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ