Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কুমিল্লায় মেডিক্যাল সনদ বাণিজ্যের অভিযোগ

| প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে মিথ্যা মেডিকেল সনদ জুড়ে দিয়ে থানা ও আদালতে মামলার সংখ্যা বাড়ছে। কিছু অসাধু ও অর্থলোভী মেডিকেল অফিসার এবং তাদের সহযোগিরা সাধারণ জখমকে গ্রিভিয়াস (গুরতর) লিখে দিয়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা নিচ্ছে প্রতি সনদে। কুমিল্লার বেশিরভাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওপেন সিক্রেট মেডিকেল সনদ বাণিজ্য চলছে। সাধারণ জখমকে গ্রিভিয়াস উল্লেখ করে মিথ্যা সনদ দেয়ার এমন একটি ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ওই প্রতিষ্ঠানের মেডিকেল অফিসার বিষয়টি অস্বীকার করলেও ভুক্তভোগীদের দাবী মেডিকেল অফিসার টাকার বিনিময়ে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে সাধারণ জখমকে গ্রিভিয়াস উল্লেখ করে মেডিকেল সনদ দিয়েছেন। আর এবিষয়ে ভুক্তভোগীদের পক্ষে গোলাম মোস্তফা গত ১১ জুলাই কুমিল্লা সিভিল সার্জনের (সিএস) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের অনুলিপি দেয়া হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি ডিরেক্টরকে।
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সাহেবাবাদ মধ্যপাড়া গ্রামের ডেঙ্গু ভূইয়া বাড়ির গোলাম মোস্তফা পরিবারের সঙ্গে একই বাড়ির মসিউর পরিবারের জায়গা জমি নিয়ে বিরোধ চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এনিয়ে মামলাও রয়েছে আদালতে। এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এবছরের ফেব্রæয়ারির ২৬ তারিখ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গোলাম মোস্তফার পরিবার ও মসিউর রহমান ওরফে মোর্শেদের পরিবার বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হয়ে হাতাহাতি-মারিমারি শুরু করে। এতে দুই পরিবারের লোকজনই সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হয়। ব্যাস, এটাকে পুঁজি করেই মসিউর তার মা সামসুন্নাহার ও ছোট ভাই নুর আলমকে নিয়ে সকাল ১০টার দিকে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। সেখানে জরুরী বিভাগে তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ৩০মিনিটের মধ্যে রিলিজ দেয়া হয়। ওই দুই রোগীর চিকিৎসার ধরণ ইমারজেন্সি রেজিষ্টারে সাধারণ জখম হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পরে মসিউরের পরিবার থানায় মামলা করার পরিকল্পনা নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. কামরুল হাসানের সাথে যোগাযোগ করেন। গোলাম মোস্তফার দাবী বড় অংকের টাকা লেনদেনের বদৌলতে পরদিন ২৭ ফেব্রæয়ারি সামসুন্নাহার ও নুরে আলমের নামে দুইটি মেডিকেল সনদ পেয়ে যান মসিউর। মেডিকেল সনদে সামসুন্নাহার ও নুরে আলমের গুরতর জখমের কথা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু ২৬ তারিখে ইমারজেন্সি রেজিষ্টারে উল্লেখ করা সাধারণ জখমের কথাটি কাটছাট করেন ডা. কামরুল হাসান। মিথ্যা মেডিকেল সনদের বদৌলতে ৩২৬ ধারা প্রতিষ্ঠিত করতে গত ১ মার্চ ব্রাহ্মণপাড়া থানায় জহিরুল, রফিকুল ও গোলাম মোস্তফাসহ ১২জনকে আসামী করে মামলা করেন মসিউরের স্ত্রী হাসিনা আক্তার সুমি। গত জুনের মাঝামাঝিতে মামলার ৯ আসামী জামিন নিয়েছেন। অন্যদিকে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. কামরুল আসামীপক্ষকে মেডিকেল সনদ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করার আশ্বাস দেন। মামলাটি মিটমাট করে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েও আসামীপক্ষকে প্রায় সাড়ে চার মাস ধরে ঘুরাতে থাকেন ডা. কামরুল। পরে আসামীপক্ষের গোলাম মোস্তফা ১১জুলাই ডা. কামরুল হাসানের বিরুদ্ধে বড় অংকের টাকার বিনিময়ে মিথ্যা মেডিকেল সনদ দেয়ার অভিযোগ করেন কুমিল্লার সিভিল সার্জনের কাছে।
এবিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, অভিযোগটি দেখেছি। বিষয়টির সত্যতা সম্পর্কে খোাঁজখবর নেয়া হবে। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. কামরুল হাসান বলেন, রোগীর শরীরে জখম যা ছিলো তা-ই সনদে উল্লেখ করা হয়েছে। ইমারজেন্সি রেজিষ্টারে প্রথমে সাধারণ জখম লেখা হয়েছিল, পরে এটি কেটে গুরতর (গ্রিভিয়াস) লেখা হয়েছে। লেখায় ভুল হওয়াতেই কাটকাটি করতে হয়েছে। সনদের বিপরীতে কোন টাকা নেননি বলেও ওই চিকিৎসক দাবী করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ