Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

আত্মকর্মংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে নতুন বিপ্লবের পথ পোল্ট্রি শিল্প

| প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ আবু মুসা, জয়পুরহাট থেকে : জয়পুরহাটে পোল্ট্রি শিল্পের বিপ্লব ঘটিয়েছে জেলার খামারীরা। এ শিল্পে এখন কাজ করছে প্রায় ২০ হাজার লোক, এ শিল্প অন্নের সংস্থান করছে আরো প্রায় লক্ষাধিক মানুষের। সম্ভাবনাময় এ শিল্পের দ্রæত উত্থানে উৎসাহীত হয়ে প্রতিনিয়ত গড়ে ওঠছে নতুন নতুন পোল্ট্রি ফার্ম ও খামার। বাংলাদেশের পোল্ট্রি ভিলেজ খ্যাত জয়পুরহাট জেলার জামালগঞ্জে ১৯৭৩ সালে প্রায় ১১ একর জমির উপর নির্মিত হয় জেলা সরকারি হাঁস মুরগীর খামার। সেই থেকে শুরু হয় পোল্ট্রি শিল্পের উত্থান। এই খামারকে কেন্দ্র করে বর্তমানে জেলায় প্রায় ১০ হাজার পোল্ট্রি ফার্ম গড়ে উঠেছে। সম্ভবনাময় এই শিল্পে অগ্রসর দেখে জেলায় প্রায় ১১টি পোল্ট্রি ফিড খারখানা ও অর্ধশতাধিক হ্যাচারী গড়ে উঠেছে। উদিয়মান এ শিল্পে লক্ষাধিক মানুষের রুজি-রোজগারের যোগান দিচ্ছে এই শিল্প। প্রায় ৩০০ ডিলার বাচ্চা, ডিম ও ফিডের ব্যাবস্যা করে জীবিকা নির্বাহ করছে। এ শিল্পকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক (ভেটেনারী) ওষুধ কোম্পানীও সমৃদ্ধি লাভ করেছে। জেলার ফিড কারখানাগুলোতে বস্তাপ্রতি পোল্ট্রি ফিড উৎপাদন খরচ হয় ১০৫০ থেকে ১২৫০ টাকা, তা বিক্রয় হয় ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকায় খামারীদের কাছে। কম দামে খুব সহজেই মান সম্পন্ন ফিড পেয়ে খামারীরা নির্বিঘেœ বিভিন্ন জাতের মুরগী পালন করেন। জেলায় বিভিন্ন হ্যাচারীতে গত অর্থ বছরে প্রায় ৩ কোটি ১ দিনের বাচ্চা উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া খামারে সোনালী, ব্রয়লার, লেয়ার, ইসা ব্রাউন্ড, হাইব্রিড, সাদা কক এই মুরগী পোল্ট্রি ফার্মগুলোতে পাওয়া যায়। সোনালী ও হাইব্রিড লেয়ার মুরগী ডিম দেয়, ব্রয়লার সাদা কক মাংসের জন্য ভাল। জয়পুরহাটে পোল্ট্রি শিল্পে কোয়েল পাখির ছোট বড় মিলে শতাধিক খামার গড়ে ওঠেছে। একটি কোয়েল পাখি ৩০ টাকায় বিক্রয় হয়, কোয়েল পাখি প্রতিদিন ডিম দেয় ১টি করে। প্রতি হালি বিক্রি হয় ৭/৮ টাকা দরে। কোয়ের পাখির খামারও ধিরে ধিরে জয়প্রিয় হয়ে উঠছে এ জেলায়। এছাড়ও সম্প্রতি জেলায় অর্ধশত হাঁসের খামার গড়ে উঠেছে। জয়পুরহাটের পোল্ট্রি শিল্প এখন বাংলাদেশের বৃহওম শিল্প হিসাবে পরিচিত। জয়পুরহাটের পোল্ট্রি শিল্প বাংলাদেশে ১ম স্থান অধিকার করেছে। জেলার বেকার যুবক, দ্ররিদ্র কৃষক ও দুস্থ মহিলাদের মাঝে স্বল্পমূল্যে মুরগী ও ডিম সরবরাহের মাধ্যমে আত্ম কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ তাদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যেই সরকারীভাবে এ উদ্যোগ গৃহীত হয়। এই খামারকে কেন্দ্র করে জয়পুরহাট ও পাশ্ববর্তী নওগাঁ, বগুড়া, দিনাজপুর, গাইবান্ধা সহ গড়ে ওঠে পোল্ট্রি জোন। যেখানে ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার খামার, কাজ করছে প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক। বর্তমানে শুধু জয়পুরহাটেই ছোট বড় মিলে প্রায় ১৫ হাজার খামারে ২ কোটি মুরগী পালন করা হয়। জেলার প্রবিণ পোল্ট্রি ব্যাবসায়ী শেফালী পোল্ট্রি খামারের সত্ত¦াধীকারী সাইফুল ইসলাম জানান, আমি প্রথমে খুব ছোট পরিসরে শুরু করলেও বর্তমানে আমার ৫/৭ টি ৫ তলা বিশিষ্ট মুরগীর খামার রয়েছে। এটি অত্যন্ত লাভজনক ও সম্ভাবনাময় একটি শিল্প। এ শিল্প থেকে খুব সহজেই যে কেউ স্বাবলম্বী হতে পারে। জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা জানান পোল্ট্রি ফিড কারখানা ও হ্যাচারী খামারগুলোতে লোকের কর্মসংস্থান দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ শিল্প প্রচুর লাভজনক ও সম্ভাবনাময়। জেলায় ব্যাংকগুলোতে সহজ শর্তে ও কম সুদে ঋণ সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন। অল্প সুদে র্দীঘ মেয়াদী ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা, বিদেশ থেকে পোল্ট্রি, পোল্ট্রি জাত দ্রব্যাদি খাদ্য উপাদান প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে। পোল্ট্রি শিল্পের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষনের ব্যবস্থাসহ একটি হাঁস মুরগীর ক্লিনিক ও প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করা প্রয়োজন। বিনা শুল্কে পোল্ট্রি শিল্পের কাঁচা মাল আমদানি করে সরবরাহের ব্যবস্থা করা ও পোল্ট্রি শিল্পে ভর্তুকির ব্যবস্থা করে মাংসের বিপনন ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরী, তবেই সারাদেশে এ শিল্প অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ