পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : তদন্তে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে মনে হয়েছে, লেখক, কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার স্বেচ্ছায় খুলনা গিয়েছিলেন, অপহরণের কোনো ঘটনা সেখানে ঘটেনি। সরকারকে বিব্রত করার জন্য এরকম করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় পুলিশ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক এসব কথা বলেন। আদালতে দেয়া জবানবন্দীতে ফরহাদ মজহার তার অন্তর্ধানের বিষয়ে যা বলেছেন, তাতে সত্যতা নিয়ে আগেই সন্দেহ প্রকাশ করেছিল পুলিশ। বরং ফরহাদ মজহারের ‘ভক্ত’ হিসেবে পরিচয়দানকারী অর্চনা রানীর বক্তব্যের সঙ্গে তদন্তে মিল পাওয়ার কথা জানানো হয়েছিল পুলিশের পক্ষ থেকে। কেন ফরহাদ মজহারের বক্তব্য নিয়ে সন্দেহ, সেই কারণগুলো তুলে ধরে আইজিপি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এ পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আমরা যতটুকু পেয়েছি, তিনি অপহৃত হননি, তিনি স্বেচ্ছায় গেছেন। সেদিন তিনি স্ত্রীর সাথে দশবার এবং আরেকটি মোবাইলে (অর্চনা রানী) ৬ বার কথা বলেছেন। তার কাছ থেকে ওই মোবাইলে একটি এসএমএসও এসেছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দ্বিতীয় নম্বরটির সূত্র ধরে তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, ওই ফোনের মালিক ঢাকার ভাটারায় আছেন। পরে মোবাইল ট্র্যাক করতে গিয়ে দেখেন, ফোনের মালিক চট্টগ্রামে চলে গেছেন। পরে জানতে পারি, তিনি একজন নারী। তিনি ফরহাদ মজহারের পূর্বপরিচিত। তাদের মধ্যে ওই দিন (অন্তর্ধানের দিন) কথোপকথন হয়। পরে আমরা তার জবানবন্দী রেকর্ড করাই। সংবাদ সম্মেলন শেষে পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন, ফরহাদ মজহার এখন অসুস্থ, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়নি। তবে আমরা আদালতের কাছে যাব। আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি আরো বলেন, গত ৩ জুলাই সকালে ফরিদা আখতার যখন থানায় লোক পাঠিয়ে অভিযোগ জানান, ফরহাদ মজহারের অবস্থান তখন ছিল আরিচা ঘাটের পরে। মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের ওই তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ তখন আরিচার পর থেকে সব মাইক্রোবাসে তল্লাশি শুরু করে। কিন্তু কোনো মাইক্রোবাসে তাকে পাওয়া যায়নি। সেদিন বিকাল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত খুলনা নিউ মার্কেট এলাকায় ফরহাদ মজহারের চলাফেরার সিসিটিভি ভিডিও পাওয়ার বিষয়টিও সংবাদ সম্মেলনে জানান শহীদুল হক। তিনি বলেন, ওই নারীকে ফরহাদ মজহার রকেটের মাধ্যমে দুই দফায় মোট ১৫ হাজার টাকা পাঠান। আর স্ত্রীর সঙ্গে তার কথোপকথনের রেকর্ডও পুলিশের হাতে আছে। তাই আমাদের কাছে এ পর্যন্ত প্রতীয়মান হচ্ছে, তিনি অপহৃত হননি, তিনি স্বেচ্ছায় গেছেন। আমার মনে হচ্ছে, তিনি বাসে করে খুলনায় গিয়েছিলেন, কারণ আমরা মাইক্রোবাস তল্লাশি করেছি। শহিদুল হক বলেন, ফরহাদ মজহারকে নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি ও বিবৃতির মাধ্যমে সরকার, প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উদ্দেশ্যমূলক। সরকারকে বিব্রত ও বিপাকে ফেলার জন্য এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে পুলিশের তদন্তে প্রতীয়মান হয়েছে এবং আমরা শতভাগ স্বচ্ছতা নিয়ে এ ঘটনার তদন্ত করছি। ফরহাদ মজহারের মোবাইল ফোনে দুইটি সিম ছিল। একটি দিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে এবং আরেকটি দিয়ে অন্য মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতেন। ফরহাদ মজহারকে উদ্ধারের পর আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে না দেয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভিকটিম যেহেতু নিজেই বাদি এবং এ ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি নিতে হয় সে কারণে কথা বলার সুযোগ দেয়া সম্ভব হয়নি। প্রেস ব্রিফিংয়ে আইজিপি বলেন, ঘটনার দিন মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় তিনি তাকে নিয়ে ফেসবুকে অপহরণ স্ট্যাটাস বন্ধ করার জন্য তার স্ত্রীকে অনুরোধ করেন এবং বলেন, তাকে অপহরণকারীরা ছেড়ে দেবে। ফরহাদ মজহারের অপহরণ নাটকের কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, বুদ্ধিজীবী তো, তাই মাঝে মাঝে বুদ্ধি এলোমেলো হয়ে যায়। বিষয়টি পরবর্তীতে খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি জানান।
ফরহাদ মজহারের স্ত্রী-কন্যার অভিযোগ, তার সঙ্গে ব্যাগ এবং টাকা ছিল না সাংবাদিকরা এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, তার স্ত্রীকে বিভ্রান্ত করার জন্য পাঞ্জাবির নিচেও ব্যাগ রাখতে পারেন। ঢাকা থেকে তিনি কিভাবে গেলেন জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, পুলিশের ধারণা তিনি বাসেই গেছেন। এবং বাসেই ঢাকায় আসার পথে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। আইজিপি জানান, হানিফ পরিবহনের ম্যানেজার পুলিশকে জানিয়েছে ফরহাদ মজহার নিজেই গফুর নাম দিয়ে ঢাকায় ফেরার টিকিট কেটেছেন। উল্লেখ্য, ৩ জুলাই ভোর সোয়া ৫টার দিকে রাজধানীর আদাবর রিং রোড এলাকার হক গার্ডেনের নিজ বাসা থেকে বের হন ফরহাদ মজহার। এরপর একটি সাদা মাইক্রোবাসে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা তাকে তুলে নিয়ে যায়। বিষয়টি তিনি স্ত্রী ফরিদা আখতারকে মোবাইলে জানান। এরপর আরো অন্তত পাঁচবার তিনি স্ত্রীর কাছে ফোন করে মুক্তিপণ হিসেবে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা দেয়ার কথা বলেন। বিষয়টি নিয়ে দিনভর দেশজুড়ে আলোচনা চলতে থাকে। ফরিদা আখতারের মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রযুক্তির সাহায্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানতে পারেন ফরহাদ মজহারকে গাবতলী, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, যশোর হয়ে খুলনার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুলনা থেকে ঢাকায় আসার পথে ফরহাদ মজহারকে যশোরের নওয়াপাড়ায় হানিফ পরিবহনের বাস থেকে উদ্ধার করে। ৪ জুলাই তাকে ঢাকায় আনার পর আদালতে নেয়া হলে তিনি ১৬৪ ধারায় ভিকটিম হিসেবে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দী দেন। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ফরহাদ মজহারের স্ত্রী ফরিদা আখতার বাদি হয়ে সোমবার (৩ জুলাই) রাতেই আদাবর থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার তদন্তভার প্রথমে আদাবর থানা ও পরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মুখলেছুর রহমান ও পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়াসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।