Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নড়াইল সদর একশ’ শয্যা হাসপাতাল চিকিৎসক ও জনবল সঙ্কটে ব্যাহত স্বাস্থ্যসেবা

| প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নড়াইল জেলা সংবাদদাতা
নড়াইলবাসীর উন্নত স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তির একমাত্র মাধ্যম একশ’ শয্যার সদর হাসপাতালটিতে চিকিৎসক সঙ্কটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হলেও দিন দিন বাড়ছে রোগির চাপ। প্রতিদিন গড়ে ইনডোরে ১শ’ ৭০জন এবং আউটডোরে ২শ’ ৬০জন চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। এছাড়া ১৭সিটের নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র নামে একটি ইউনিটে নবজাতক শিশু সার্বক্ষনিক চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। এসব সেবা প্রদান করছেন মাত্র ১৭ জন চিকিৎসক। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ১৯জনের মধ্যে আছেন মাত্র চারজন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৫০ শয্যার সদর হাসপাতালটি ২০০৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর একশ’ শয্যা ঘোষণা হলেও ২০১২-১৩ সাল মিলে এর অবকাঠামোগত কাজ শেষ হয় এবং আসবাবপত্র ও জনবল নিয়োগ শুরু হয়। একশ’ শয্যার জন্য প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা থেকে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারি পর্যন্ত ২২৩টি পদের প্রস্তাব করা হলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে ৩৫টি পদ সৃজন করা হয়। এর মধ্যে এ পর্যন্ত দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির মাত্র ৫টি পদে জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মূলত ৫০শয্যার চিকিৎসক ও লোকবল দিয়েই ১শ’ শয্যা হাসপাতালের কাজ চলছে। সদর হাসপাতালে ৩৯টি চিকিৎসকের পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ১৭জন চিকিৎসক। এর মধ্যে তিনজন চিকিৎসক সংযুক্তিতে কাজ করছেন। হাসপাতালে জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ৮টি পদ থাকলেও গাইনি, কার্ডিওলজি ও সার্জারি বিভাগ ছাড়া মেডিসিন, চক্ষু, নাক-কান-গলা, এনেসথেশিয়াসহ পাঁচটি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। জুনিয়র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ১১টি পদ থাকলেও আছেন শুধু শিশু বিশেষজ্ঞ। ৫টি সহকারি সার্জনের পদ থাকলেও আছে একজন। ফ্রেড হলোজ প্রজেকেক্টর আওতায় চক্ষু বিভাগের অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার থাকলেও চিকিসকের অভাবে দীর্ঘ দু’বছর ধরে তা কোনো কাজে আসছে না। মেডিক্যাল এসিসটেন্ট দিয়ে আউটডোরে চক্ষু বিভাগের চিকিৎসা চলছে।। এক বছর আগে হাসপাতালে অত্যাধুনিক ডিজিটাল এক্সরে মেশিন আসলেও তা প্যাকেট বন্দি অবস্থায় পড়ে রয়েছে। রেডিওলজি বিভাগের কার্যক্রম নেই। হাসপাতালের ৫টি এক্সরের মধ্যে ২টি নষ্ট, ২টি আলট্রাসনোগ্রামের মধ্যে ২টিই নষ্ট, ৩টি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে ১টি নষ্ট এবং দু’টির মধ্যে ১টি ড্রাইভার পদ শূন্য। টেকনিশিয়ান ও তেলের অভাবে কয়েক বছর ধরে জেনারেটর অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এদিকে রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী মহলের সুপারিশে আউট সোর্সিং-এর আওতায় ১২জনের জায়গায় ৪০জন আয়া, সুইপার ও নাইটগার্ডকে অস্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হলেও এরা ঠিকমত ডিউটি পালন করে না। হাসপাতালকে ঘিরে এক শ্রেণীর দালালদের দৌরাত্ম রয়েছে। ইমার্জেন্সি, আউটডোর এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে এরা রোগিদের বিভ্রান্ত কওে অর্থেও বিনিময়ে বিভিন্ন ক্লিনিকে এবং ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে নিয়ে যায়। নড়াইল সদর হাসপাতালের অর্থপেডিক্স বিশেষজ্ঞ, স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের সাধারন সম্পাদক ও বিএমএ-র সাধারন সম্পাদক ডা. আব্দুল কাদের জসিম বলেন, অল্প সংখ্যক চিকিৎসক নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি মানসম্মত চিকিৎসা দেওয়া খুবই কঠিন। এখানে চিকিৎসা সেবা বাড়ানোর জন্য প্রনোদনামূলক সেরা চিকিৎসক, নার্স, এম.এল.এস.এস, আয়া ও সুইপারদের পুরস্কারের ব্যবস্থা পর্যন্ত করা হয়েছে। তিনি হাসপাতালের দালাল প্রসঙ্গে বলেন, হাসপাতাল দালালমুক্ত করতে ইমার্জেন্সি,আউটডোরসহ কয়েকটি জায়গায় সিসি ক্যামেরা, মোবাইল কোর্টসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানান। নড়াইল সদর হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ডা.বিদ্যুৎ কান্তি পাল বলেন, এখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, আরএমওসহ ও জনবল নেই। বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, একনেকে নড়াইল সদর হাসপাতাল ২৫০শয্যায় উন্নীত করার অনুমোদন হয়েছে। আমরা লোকেশন চিহ্নি করেছি। ইতোমধ্যে গণপূর্ত বিভাগ এ জায়গার সয়েল টেস্ট করেছে। রিপোর্ট পেলে প্লান পাশ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। ২৫০শয্যার হাসপাতালটি চালু হলে এ জেলার মানুষ উন্নত চিকিৎসাসেবা পাবে বলে তিনি মনে করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ