বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মূল হোতাদের সন্ধান পায়নি প্রশাসন
খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ক্রমেই বিশাল পরিমাণ মজুদকৃত অস্ত্র উদ্ধার ছাড়াও তুচ্ছ ঘটনার জেরে পারিবারিক বিরোধের জের থেকে শুরু করে জমি দখল করতে অবৈধ অস্ত্রের মহড়ার দৃশ্য এখন নিত্যদিনের। উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিদিন এ ধরনের ঘটনায় আতঙ্কিত রয়েছেন স্থানীয় জনসাধারণ।
সরেজমিন ঘুরে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাজনৈতিক অপশক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রূপগঞ্জেও অবৈধ অস্ত্রের মজুদ বাড়ছে। আর এ কাজে সম্পৃক্ত হচ্ছেন স্থানীয় সন্ত্রাসী বাহীনির পাশাপাশি জঙ্গিগোষ্ঠী ও নাশকতা সৃষ্টিকারী একটি দেশবিরোধী পক্ষ। শুধু তাই নয়, পারিবারিক বিরোধের জের থেকে শুরু করে জমি দখল, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল ও পদ পদবী দখলের মত নানা কাজে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়ার ঘটনাঘটে যাচ্ছে। এসব অস্ত্রের মাঝে রয়েছে দেশীয় রাম দা, চায়না চাপাতি ও কুড়ালসহ আগ্নেয়াস্ত্র। এমনকি রূপগঞ্জের বিভিন্ন নির্জনে এসব অস্ত্র মজুদ করে রাখার দাবীও করেন তারা। তাদের দাবি, ক্ষমতাসীন প্রভাবশালী নেতাদের অফিস, বিরোধীদলের ও জামায়াত শিবিরের আস্তানায় এসব দেশীয় অস্ত্রের মজুদ রয়েছে। তবে বৃহৎ অস্ত্রের ভান্ডার ও রয়েছে এই এলাকায়। প্রমান হিসেবে তাদের দাবি, সম্প্রতি পূর্বাচল উপশহর এলাকার ৫নং সেক্টর এলাকার লেক থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধারের ঘটনাকে সামনে নিয়ে আসেন তারা।
সূত্র জানায়, উপজেলার রাজউকের অধীনে নির্মাণাধীন পূর্বাচল নতুন শহর এলাকায় ১১টির বেশি লেক রয়েছে। এছাড়াও পূর্বাচল উপশহর এলাকা নির্জন থাকায় অপরাধীদের অভয় আশ্রমে পরিণত হয়েছে এই এলাকাটি। ফলে এ অঞ্চলের বিভিন্ন প্লট ও রাস্তায় নির্জনে অহরহ লাশ ফেলে রাখা হচ্ছে। পুলিশ এসব লাশ উদ্ধার করছে বেওয়ারিশ হিসেবে। একই উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের নারায়ণগঞ্জ জেলা সীমান্তবর্তী উপজেলার শেষ সীমানা হওয়ায় একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠি গড়ে তুলেছে অবৈধ অস্ত্রধারী বাহীনি। এ বাহীনি মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে সেই এলাকার জমি দখল সম্প্রতি দাউদপুর খৈসাইর এলাকা থেকে এসটি সাত্তার নামে চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে পিস্তল ও দেশীয় অস্ত্রসহ আটক করে র্যাব-১১। এছাড়াও উপজেলা বিভিন্ন অঞ্চলে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে রূপগঞ্জকে অশান্ত করে তুলেছে তারা।
সূত্র জানায়, প্রতিদিন পুরনো চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি নতুন সন্ত্রাসীদের হাতে শোভা পাচ্ছে ভয়ঙ্কর সব অস্ত্র। দেশীয় অস্ত্রগুলো অনেকটা প্রকাশ্যে প্রতি ঈদ উল আযহায় তৈরী করছে স্থানীয় কামাররা। কামারপাড়ায় কামাররা এসব অস্ত্র তাদের বাড়িতে বসেই তৈরী করে দেয়া সন্ত্রাসীদের। বিনিময়ে পায় বাড়তি মুজুরী। এছাড়াও রাজনৈতিক হানাহানিতে ব্যবহৃত অস্ত্রগুলোও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। রূপগঞ্জের দীর্ঘদিনের আলোচিত হত্যাকান্ড তারেক, রাসেল ভুঁইয়া, খালেদ, ছাত্রদল নেতা শফিক, যুবলীগ নেতা হাজী বেলায়াতসহ বিভিন্ন হত্যাকন্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ার কারণে সম্প্রতি অবৈধ অস্ত্রের মজুদের সংখ্যা আশংকাজনক হারে বাড়ছে। ফলে স্থানীয় জনসাধারণের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। উপজেলার গোলাকান্দাইল, মুড়াপাড়ার মাছিমপুর ,কায়েতপাড়ার চনপাড়া পূনর্বাসন কেন্দ্র, পূর্বাচল উপশহর, কাঞ্চণের মায়ারবাড়ি, দাউদপুরের বেলদী, সদর ইউনিয়নের ইছাপুরা ও ভোলানাথপুর এলাকার বাসিন্দাদের মাঝে রয়েছে চরম আতঙ্ক। অপরদিকে পূর্বাচল উপশহরকে ঘিরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন আবাসিক কোম্পানীর ছত্রছায়ায়ও গড়ে ওঠেছে একটি শক্তিশালী সন্ত্রাসী বাহীনি। তাদের নিয়ন্ত্রণেই এসব অস্ত্রগুলো বিভিন্ন স্থানে মজুদ রয়েছে বলে ধারনা করছে স্থানীয়রা। সূত্র আরো জানায়, নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনার পর থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ আতঙ্কে ভুগলেও এ মামলার রায়ের বাস্তবায়ন না হওয়ায় এ আতঙ্ক আরো ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও থানা পুলিশের তথ্যমতে, উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ে সন্ত্রাসীদের হাতে প্রায় ৩ শতাধিক আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। এছাড়াও বিপুল পরিমাণ আরো অস্ত্র বিভিন্ন অঞ্চলে গোঁপন স্থানে রয়েছে বলে ধারনা করছেন তারা। তবে কোন কোন সন্ত্রাসীরা প্রশাসের ভয়ে বিভিন্ন গোঁপন মাধ্যমে বিক্রি করে দিচ্ছে। তবে রয়ে যাওয়া অস্ত্রগুলোই হাউজিং কোম্পানীর জমি দখল, ইটের ভাটা দখলসহ নানা দখল বাণিজ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। কোথাও এসব অস্ত্র ভাড়ায় দেয়া হচ্ছে বলে জানা যায়। আবার একটি ছিনতাইকারীচক্র, ডাকাত সদস্য এসব অস্ক্র ভাড়ায় নিচ্ছে বলেও জানান তারা। সূত্র আরো জানায়, মিলকারখানায় জুট ব্যবসায়ী, হাউজিং কোম্পানীর দালাল, বালু ব্যবসায়ী, ইটা ব্যবসায়ী, যুবনেতা ও ছাত্রনেতাসহ স্থানীয় শ্রমিক নেতাদের নিয়ন্ত্রণে চলে এসব অস্ত্রের ব্যবহার। এসব অস্ত্রের বেশিরভাগই রিভলভার জাতীয়। মাঝে মাঝে শর্টগান, এসএমজিসহ নানা হাতবোমাও পাওয়া যাচ্ছে।
এসব এলাকার লোকজন জানায়, সামান্য বিরোধ হলেই অস্ত্র হাতে হামলা চালিয়ে থাকে সন্ত্রাসীরা। আধিপত্ত বিস্তারসহ নানা কুকর্মে প্রভাবশালীরাই বেশিরভাগ ঘটনায় জড়িত। এসব ঘটনায় থানায় অভিযোগ বা জিডি হলেওর প্রতিকার পায়নি তারা। তবে পুলিশের দাবী এসব এলাকায় অবৈধ অস্ত্রের মহড়া নেই। এদিকে সম্প্রতি রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহর এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মূল হোতাদের এখনো সন্ধান না পাওয়ায় এ সমস্যা আরো বেড়ে গেছে। দেশবিরোধী চক্র কি কারনে এ অস্ত্রগুলো এখানে মজুদ করে রেখেছিল তা উৎঘাটন করতে পারে নি প্রশাসন। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্র দাবি করছে এসব অস্ত্রগুলো চিনের তৈরী। আন্তর্জাতিক চোরাচালান গোষ্টী এ অঞ্চলকে তাদের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। তবে এ অস্ত্র উদ্ধার ঘটনা তাদের কাছেও উদ্যেগের বিষয়।
সূত্রটি আরো জানায়, অস্ত্র উদ্ধার ঘটনায় আটককৃতরা স্থানীয়ভাবে মাদকসেবী ও জুয়ারী হিসেবে পরিচিত। তারাই বিপুল পরিমাণ অস্ত্রগুলোর মজুদদাতা ও মূল হোতা এটা মেনে নিতে পারছেন না স্থানীয়রা। এর পেছনে রয়েছে একটি শক্তিশালী নাশকতাকারী গোষ্ঠী। তাদের সনাক্ত করতে না পারলে আরো লুকিয়ে রাখা অস্ত্রগুলো উদ্ধার সম্ভব হবে না। ফলে যে কোন সময় বড় ধরণের অঘটন ঘটতে পারে বলে মনে করেন বিজ্ঞজনেরা।
রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ন সম্পাদক বাশির উদ্দিন বাচ্চু বলেন, ক্ষমতাসীন দলের লোকজন তাদের প্রভাব বিস্তার করতে মাঝে মাঝে অস্ত্রের মহড়া দেয়। বিরোধীদলকে ফাঁসাতে তারা মরিয়া হয়ে ওঠেছে তারা। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে কোন অস্ত্র নেই বলে দাবি করেন তিনি। এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, অস্ত্র উদ্ধার ঘটনায় পুলিশ তৎপর রয়েছে। এসব অস্ত্র উদ্ধারের ও উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মুল হোতাদের আইনের আঁওতায় আনার চেষ্টা চলছে। এসব অস্ত্রের বিষয়ে স্থানীয় সন্ত্রাসীরাও নজরদারীতে রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ক্ষমতাসীন কোন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জনগণের সেবায় নিমগ্ন। তাদের কেহই এসব অস্ত্রের দ্বারা তাদের প্রভাব বিস্তার করছে না। দু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনায় ব্যক্তি কেন্দ্রিক বলে অভিহিত করেন তিনি। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া বলেন, জেলার আইন শৃঙ্খলা বাহীনি সম্প্রতি রূপগঞ্জ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করে বিশেষ সাফল্য এনে দিয়েছে। তবে এ অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।