Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আওয়ামী লীগকে গুমের হিসাব দিলেন রিজভী

| প্রকাশের সময় : ১২ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : আওয়ামী লীগকে গুম ও নিখোঁজ হওয়া নেতাকর্মীদের হিসেব দিলেন বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক গুম ও নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের খোঁজ পান না, অথচ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের থেকে পাওয়া তথ্য মতে ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৪৩৫ জন ব্যক্তি গুম হয়েছেন। এর মধ্যে ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরে কেবলমাত্র ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থান ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে কমপক্ষে ৫০ জনকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এগুলোর বিষয়ে কী কোন জবাব দিতে পারবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীদের চোখের পানি না আসলেও গুম হওয়া, খুন হওয়া, নির্যাতনের শিকার হওয়া স্বজন ও সহকর্মীদের চোখের পানিতে এখন বাংলাদেশ ভাসছে। গতকাল (মঙ্গলবার) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি’র কাছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের গুম ও নিখোঁজ হওয়া নেতাকর্মীদের তালিকা চাওয়ার প্রেক্ষিতে তালিকা প্রকাশ করে রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব বিএনপি’র কাছে গুম ও নিখোঁজদের তালিকা চেয়েছেন। গুম হওয়া মানুষের স্বজনদের বেদনার্ত কান্নার আওয়াজ কাদের সাহেব আপনাদের কানে ঢোকে না। এমনকি সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কারো কর্ণ কুহরেই যেন এদের কান্নার শব্দ প্রবেশ করেনা। অথচ ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৪৩৫ জন ব্যক্তি গুম হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৫২ জনের এখন পর্যন্ত হদিস পাওয়া যায়নি। ৩৯ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। ৩৪ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং ২৭ জন বিভিন্ন সময়ে মুক্তি পেয়েছেন। গুম হওয়া মানুষের পরিবারগুলোর নীরব কান্না থেমে নেই। এগুলোর বিষয়ে কী কোন জবাব দিতে পারবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকবিএনপি’র এই নেতা বলেন, হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর স্বজনেরা জানতেও পারেননি তারা এখন জীবিত নাকি মৃত। পিতার অপেক্ষায় তার সন্তান, স্বামীর অপেক্ষায় স্ত্রী, সন্তানের অপেক্ষায় মা-বাবা। এ অপেক্ষার যেন শেষ নেই। বুকভরা বেদনা নিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছেন নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনেরা। সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্রমেই বাড়ছে নিরাপত্তাজনিত আতঙ্ক। শুধু গুম আর অপহরণই নয়, বরং আওয়ামী লীগ ও তাদের পেটোয়া বাহিনীর হাতে নির্যাতিত লাখ লাখ মানুষ এখন কাঁদছে। আর আওয়ামী নেতারা মানুষের দুঃখ-বেদনা ও কান্না নিয়ে উপহাস করছেন।
বিএনপি নেতাকর্মীদের কান্না নিয়ে উপহাস করায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে উদ্দেশ্য করে রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন যে, “বিএনপি নেতারা এখন প্রেসব্রিফিং করে আর কাঁদে, আর কাঁদতে কাঁদতে আমাদের (আওয়ামী লীগের) চোখের পানি শুকিয়ে গেছে।” কিন্তু আপনাদের নেতাকর্মীদের লুটপাটের টাকায় সুইস ব্যাংক জোয়ারের পানির মতো উপচে উঠেছে। তাই অন্যের আহাজারীতে আপনাদের মনে আনন্দ ধরে। সম্প্রতি দেশের মানুষ যখন পাহাড় ধ্বসে মাটিচাপায় জীবন দিচ্ছে, দুর্যোগে-দুর্ভোগে বিপন্ন তখন আপনার নেত্রী লন্ডনে ভাগ্নিকে সংবর্ধনা দিতে গিয়েছিলেন। বর্তমানে দেশে উজানের পানিতে ভয়াবহ বন্যায় যখন দেশের মানুষ ভাসছে, তখন আপনারা সংসদে বসে বিচারপতিদের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধারে মেতে আছেন। সংসদে বসে মানুষের গিবত গাইছেন, যদি আপনারা প্রকৃতঅর্থে জনপ্রতিনিধি হতেন, যদি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতেন তাহলে বন্যার্ত ও ক্ষুধার্ত মানুষের নিকট ত্রাণ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তেন।
গুম ও নিখোঁজ হওয়াদের তালিকা প্রকাশ করে রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরে কেবলমাত্র ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থান ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে কমপক্ষে ৫০ জনকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই থেকে পরিবারগুলো সরকারের মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছে। পুলিশ, র‌্যাব, ডিবি, কার্যালয়ে গিয়ে ধরণা দিয়েছে। গুম হওয়া ব্যক্তিদের বেশিরভাগই বিএনপি বা ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা ও তার সন্তানরা এখনও ইলিয়াস আলীর অপেক্ষায় আছেন। এদের রোদনভরা অপেক্ষার খবরে তো ওবায়দুল সাহেবদের চোখের পানি ঝরবে না। কারণ ক্ষমতার জৌলুসে রক্তাক্ত অনাচারগুলো না দেখারই কথা। বিএনপি’র সিনিয়র নেতা ও জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে ৭০ দিন গুম করে রাখার ভারতের মেঘালয় রাজ্যে ফেলে আসা হয়। আন্তর্জাতিক সমস্ত আইন-কানুনকে উপেক্ষা করে একটি বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারত কী করে আরেকটি দেশের দুঃশাসন ও অন্যায়ের অংশীদার হতে পারে, তা আজ সারাবিশ্বের মানুষের প্রশ্ন। প্রতিদিনই অপক্ষোয় থাকেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য চৌধুরি আলম, সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম হীরু, বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির পারভেজ, তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদল সভাপতি আমিনুল ইসলাম জাকির, তেজগাঁও থানা বিএনপি নেতা সাজেদুল হক সুমন, সাজেদুলের খালাতো ভাই জাহিদুল করিম (তানভীর), পূর্ব নাখালপাড়ার আবদুল কাদের ভূঁইয়া (মাসুম), পশ্চিম নাখালপাড়ার মাজহারুল ইসলাম (রাসেল), মুগদাপাড়ার আসাদুজ্জামান (রানা), উত্তর বাড্ডার আল আমিন, বিমানবন্দর থানা ছাত্রদল নেতা এ এম আদনান চৌধুরী ও কাওসার আহমেদ, সবুজবাগ থানা ছাত্রদলের সভাপতি মাহাবুব হাসান, খালিদ হাসান (সোহেল) ও স¤্রাট মোল্লা,জহিরুল ইসলাম (হাবিবুর বাশার জহির), পারভেজ হোসেন, মো. সোহেল ও মো. সোহেল (চঞ্চল), নিজাম উদ্দিন (মুন্না) ও তরিকুল ইসলাম (ঝন্টু), কাজি ফরহাদ, সেলিম রেজাকে (পিন্টু), ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন কুসুমসহ অনেকের হতভাগ্য পরিবার। বিমানবন্দর থানা ছাত্রদলের সভাপতি গুম হওয়া এম এ আদনান চৌধুরীর বাবা রুহুল আমিন ছেলের অপেক্ষোয় চোখের পানি ফেলতে ফেলতে অসুস্থ হয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। সরকারের সর্বশেষ আক্রোশের শিকার হয়েছেন বিশিষ্ট লেখক, কলামিষ্ট, কবি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার। তিনি এখন এতোটাই মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত যে, শোনা যাচ্ছে-মানুষজন ও আত্মীয়স্বজনদের চিনতেও নাকি কষ্ট হচ্ছে তাঁর। অথচ তাঁর অপহরণ ঘটনাকে এখন নাটক বানাতে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু করেছে সরকার। কিন্তু সরকারি কোন চক্রান্ত ফরহাদ মজহারের অপহরণের ঘটনায় সাজানো নাটক মানুষকে বিশ্বাস করাতে পারবে না। মানুষ যা বোঝার তা ইতোমধ্যেই বুঝে গেছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও নির্যাতনের নিন্দা, প্রতিবাদ ও মুক্তি দাবি করে রিজভী বলেন, হবিগঞ্জ সদর থানা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরব আলীকে পুলিশ গ্রেফতার করে থানায় নিলেও তার বিরুদ্ধে কোন মামলা কিংবা তাকে আদালতে হাজির করছে না। ফলে তার ওপর পুলিশী অত্যাচার কিংবা তার প্রাণনাশের আশংকা করছে তার পরিবার। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত কমিশনার ও বিএনপি নেতা হান্নান মিয়া হান্নু, ফয়সল সরকার, সফিউদ্দিন শফি, তানভীর আহম্মেদ, মো: শহীদ ও অলোককে গাড়ী পোড়ানোর মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। বরিশাল জেলাধীন মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার ১নং আন্দারমানিক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৩ জুলাই। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মো: আব্দুর রহমান এর ওপর স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসী ও ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা হামলা, বাড়ীঘর ভাংচুর ও নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। গত ৩০ জুন নিজ বাড়ীর উঠোনে নির্বাচনী বৈঠক করার সময় আওয়ামী গুন্ডারা বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর ওপর হামলা চালিয়ে বাড়ীর আসবাবপত্র, জানালা, দরজা ভাংচুর ও পরিবারের সদস্যদের সাথে অশালীন আচরণ করে। নির্বাচনে আওয়ামী প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ভোটারদের মধ্যে ভয়ভীতি প্রদর্শণ করছে সন্ত্রাসীরা। তিনি বিএনপি’র পক্ষ থেকে এসব ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, বিলকিস জাহান শিরিন, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আজিজুল বারী হেলাল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ