পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাখাওয়াত হোসেন : স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার চেষ্টা করছে রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো। ঘরবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেয়ার এক মাসের অধিক সময় পর পাহাড়িরা ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও স্থানীয়দের সার্বিক সহযোগিতায় ছোট পরিষরে ঘর তুলছে। তবে, নিরাপত্তায় সক্রিয় থাকার পাশাপাশি নতুন করে বসতি স্থাপন করার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর স্থানীয় কর্মকর্তারা নানাভাবে সহযোগিতা করছেন বলে জানিয়েছেন পাহাড়িরা। গত কয়েকদিন ধরেই ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো ঘর তুলার কাজ করছেন বলে জানা গেছে। সেনা বাহিনী ও পুলিশসহ আইনÑশৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর সক্রিয়তায় গভীর পাহাড়ে বা বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেয়া পরিবারগুলো ফিরে আসছে। সরকারী সহযোগিতায় খুব শীঘ্্রই পাহাড়িদের পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় প্রশাসন। একই সাথে আশাবাদী পাহাড়ীরাও। লংগদু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাদ্দেক মেহ্দী ইমাম সাংবাদিকদের জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য ৪২৬ বান্ডেল টিন ও ১২ লাখ ৭৫ হাজার টাকার আমরা ইতোমধ্যে পেয়েছি। কয়েকদিনের মধ্যে এগুলো বিতরণ করা হবে। সরকারি পর্যাপ্ত বরাদ্দ রয়েছে, আসতে একটু সময় প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন। লংগদু উপজেলার চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন গত রাতে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, নিজ উদ্যোগে পাহাড়িরা কিছু কিছু ঘর তুলছে। জেলা পরিষদের ত্রান ক্ষতিগ্রস্থ পাহাড়িরা গ্রহন করেছে। সরকারী সাহায্য দেয়ার পক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে। তিনি আরো বলেন, ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে কেউ কেউ অপেক্ষা করছেন সরকারী বড় ধরনের সাহায্য আসবে। তবে সেনাবাহিনীসহ সকল সংস্থা সক্রিয় থাকায় সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। এখন আর পাহাড়ি-বাঙালীদের মধ্যে বড় কোন আতংক নেই। মোটরসাইকেল চালক নুরুল ইসলাম নয়নের হত্যা মামলা পুলিশ তদন্ত করছে। লংগদুর মানিকজোড় এলাকার বাসিন্দা সুমন চাকমা(২৫) দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, নিরাপত্তা নিয়ে এখন কোন সমস্যা নেই। নিজেদের চেষ্টায় কিছু এলাকায় টং বা ছোট ঘর তৈরি করে পাহাড়ী পরিবারগুলো ফিরে আসছে। কোন আতংক নেই। আমরা চাই সরকারী সাহায্য দ্রæত আসুক। তাছাড়া সেনাবাহিনীসহ স্থানীয় প্রশাসন সব সময় নিরাপত্তায় টহল দিচ্ছে। কোন ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য তারা সক্রিয় রয়েছে বলে সুমন চাকমা মন্তব্য করেন। লংগদু থানার ওসি ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত দুটি মামলায় ৩০ জনের মতো গ্রেফতার করা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোন ঘাটতি নেই। পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর টিম সব সময় টহলে হয়েছে। গত ১ জুন লংগদু উপজেলার সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক নুরুল ইসলাম নয়নের লাশ দীঘিনালার চারমাইল এলাকায় পাওয়া যায়। পরে ২ জুন সকালে একটি প্রতিবাদ মিছিল থেকে স্থানীয় পাহাড়িদের দোকান, বসত ঘরসহ চারটি গ্রামের দু’শতাধিক বাড়িঘরে আগুন দেয়া হয়। গত ৯ জুন খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে রমেল চাকমা ও জুনেল চাকমা নামের দুজনকে গ্রেফতার করা হলে তারা নয়ন হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেয়। মোটরসাইকেলটিও দীঘিনালার মাইনী নদী থেকে উদ্ধার করা হয়। মানিকজোড় ছড়া এলাকার বাসিন্দা প্রতুল চাকমা বলেন, নয়ন আমার বন্ধু ছিল। কিন্তু হঠাৎ কী হয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম না। ২ জুন ঘটনার আগের দিন আমরা আত্মীয়র বাড়িতে চলে গিয়েছিলাম। ঘটনার প্রায় দুই সপ্তাহ পর এসে দেখি বাড়িঘর কিছুই নেই। সব পুড়ে ছাই। খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। এখন বর্ষার মৌসুম। রোদে পুড়ে আর বৃষ্টিতে ভিজতে হচ্ছে আমাদের। বেসরকারিভাবে কিছু আর্থিক সহযোগিতা পেয়ে সেই টাকা দিয়ে একবান টিন কিনে টংঘর করে আছি আমরা। সরকার ঘর করে দেবে, সেই আশায় রয়েছি। প্রশাসন ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে গত ছয় বছরে আট বাঙালি মোটরসাইকেল চালক নিহত হয়েছেন। গুম হয়েছেন আরো অন্তত বেশ কয়েকজন। মোটরসাইকেল ছিনতাই বা চুরির জন্য নয়, পাহাড়কে অশন্ত করে তুলতেই এসব পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। নয়ন হত্যাকান্ডের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত দু’জনও পাহাড়ি সশস্ত্র গ্রুপের সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিকভাবে তারা জানিয়েছে, মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের জন্য নয়, পাহাড়ে বাঙালিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানোর জন্যই সশস্ত্র গ্রুপগুলো পরিকল্পিত এই হত্যার ঘটনাগুলো ঘটায়। অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে, পাহাড়ীদের রাজনীতি সুদুর প্রসারী। আর বাঙালীরা সেখানে নানা গ্রæপে বিভক্ত। পাহাড়ীদের মধ্যে প্রকাশে তিনটি গ্রæপ কাজ করলেও নিজেদের ইস্যুতে সবাই এক। কিন্তু বাঙালীরা নিজেদের ইস্যুতে এক থাকতে পারে না। জেএসএস, ইউপিডিএফ আর রিফরমিস্ট জেএসএস তিন গ্রæপই এখানে জম্মু ল্যান্ড গড়ার কাজটি করে যাচ্ছে। লেকের পানি নিরবে নিভৃত্তে বয়ে চলেছে আর কালো পাহাড় গুলো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে নানা ঘটনার স্বাক্ষী হয়ে। বার বার এখানে দাঙ্গার নির্মম নিষ্ঠুর ঘটনাগুলো কাপ্তাই লেকও যেমন, দেখে আসছে পাহাড়ও।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।