Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রামে চিকুনগুনিয়া আতঙ্ক মশক নিধনে চসিকের ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু

| প্রকাশের সময় : ১২ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আইয়ুব আলী : চট্টগ্রামে চিকুনগুনিয়া আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারিভাবে এখনো চিকুনগুনিয়া রোগী পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করা না হলেও বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বারে বেশ কয়েকজন চিকুনগুনিয়া রোগীর সন্ধান মিলেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে বিপুল সংখ্যক রোগী আসলেও এখনো চিকুনগুনিয়া রোগী পাওয়া যায়নি। চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে সরকারি তরফে ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন গতকাল (সোমবার) থেকে চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে দুই মাসব্যাপী মশক নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করেছে।
আলোচিত এ চিকুনগুনিয়া জ্বরের উৎস এডিস মশা। এডিস মশার প্রাদুর্ভাবেই মানুষ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। একটু শরীর ব্যথা হলেই মনে হয় চিকুনগুনিয়া ধরে ফেললো। জ্বর হলেই মানুষ ছুটছে চিকিৎসকের কাছে। বর্ষায় নগরীতে মশার উপদ্রবও বেড়ে গেছে। বিভিন্ন এলাকায় ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে জ্বরের প্রাদুর্ভাব। ভাইরাস জ্বরের পাশাপাশি লোকজন চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। এতে করে আরও বেশি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার বাহক এডিস মশা। প্রতিবছর বর্ষা আসলে বন্দর নগরীতে এ মশার উৎপাত বেড়ে যায়।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী ইনকিলাবকে বলেন, চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া রোগীর তথ্য জানতে চট্টগ্রাম জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। তিনি জানান, জ্বর নিয়ে বিপুল সংখ্যক রোগী হাসপাতালে আসলেও এখনো চিকুনগুনিয়া রোগী শনাক্ত হয়নি। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগ শনাক্তের প্রক্রিয়া চলছে। চিকুনগুনিয়া রোগী পাওয়া গেলে জনসমক্ষে জানানো হবে। তিনি বলেন, চিকুনগুনিয়ার বাহক এডিস মশা নিধনে সিটি কর্পোরেশনের সাথে যৌথ উদ্যোগে ক্রাশ প্রোগ্রাম নেয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর বিভিন্ন ক্লিনিক ও চিকিৎসকের চেম্বারে জ্বর নিয়ে আসা অনেক রোগীর চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়েছে। তারা চিকিৎসকদের পরামর্শে রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা চিকিৎসকদের চেম্বারে আসা রোগীদের তথ্য সংগ্রহ করছেনা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা মূলত সরকারি হাসপাতালের তথ্যের উপর নির্ভর করে বলছে চিকুনগুনিয়া রোগী পাওয়া যায়নি। এ প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন বলেন, সরকারি হাসপাতাল ছাড়া বাইরের অন্য কোন হাসপাতালে চিকুনগুনিয়া রোগী পাওয়া গেছে এমন তথ্য এখনো আমাদের কাছে আসেনি।
চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শফিকুল মান্নান সিদ্দিকী বলেন, চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে কর্পোরেশনের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। মশক নিধনে কাজ শুরু হয়েছে। নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের প্রতিটিতে ২শ’ লিটার লার্ভিসাইড (মশার ডিম ধ্বংসকারী ওষুধ) ছিটানো হবে। তিনি বলেন, সারা বছরই মশার উপদ্রব থাকে নগরীতে। মশার ডিম এবং পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংসকারী দুই ধরনের ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন বাসাবাড়ির এসি, বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকা নারকেলের খোসা, জলাভূমি ও স্যাঁতস্যাতে জায়গায় ওষুধ ছিটানো হবে।
ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু
নগরীর জামাল খান ওয়ার্ডের আসকার দীঘির দক্ষিণপাড়ের অস্থায়ী বাজারে গতকাল বিকেলে চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা ঠেকাতে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন নিজহাতে নালায় মশার ওষুধ ছিটিয়ে দুই মাসব্যাপী চসিকের মশক নিধনের ক্রাশ প্রোগ্রামের উদ্বোধন করেন। এ সময় মেয়র বলেন, চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করতে সাড়ে চার কোটি টাকার ওষুধ সংগ্রহ করা হয়েছে। ৪১টি ওয়ার্ডে মশক নিধরনের ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নেয়া হয়েছে।
মেয়র বলেন, চিকুনগুনিয়া খুবই কষ্টকর একটি রোগ। তাই নিরাময়ের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। এ লক্ষ্যে আমরা নগরবাসীকে সচেতন করার উদ্যোগ নিয়েছি। পর্যাপ্ত লিফলেট ছাপানোর নির্দেশ দিয়েছি। ইতোমধ্যে মাইকিং শুরু করেছি। তিনি বলেন, এডিস মশা নির্মূল করতে নগরবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে। নিজ নিজ বাসাবাড়ির আঙ্গিনায় ডাবের খোসা, পুরনো টায়ার, ভাঙা তৈজসপত্র, ফুলের টব, বাথটাবে স্বচ্ছ পানি তিন দিন পরপর পরিষ্কার করতে হবে। শুধু বিষয়টি জানলে হবে না, পদক্ষেপ নিতে হবে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্র উল্লেখ করে মেয়র বলেন, এ মুহূর্ত পর্যন্ত চট্টগ্রামে চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, চসিক নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত পাঁচ মাস মশার ওষুধ ছিটিয়ে থাকে। এবার ঢাকায় চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় জুলাই-আগস্ট দুই মাসের ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নেয়া হয়েছে। চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা। ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। তাই চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ‘আপনার আঙ্গিনা পরিষ্কার রাখুন, মডেল সিটি বিনির্মাণের শামিল হোন’ শীর্ষক মশক নিধন কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন। এ সময় বেশ কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ চসিকের স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ