Inqilab Logo

বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১, ২১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

পাঁচবিবিতে ব্রিজ নির্মাণে কালক্ষেপণ : বাড়ছে দুর্ভোগ

| প্রকাশের সময় : ১২ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) থেকে মোশারফ হোসেন মজনু : গ্রামীন জনপদের সাধারন মানুষের চলাফেরা নিশ্চিত করতে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলা ত্রান ও পূনর্বাসন বিভাগের আওতায় ১১টি ব্রিজ নির্মানের উদ্যোগ নেয়া হয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ১২ তারিখের দিকে। গ্রামীন জনপদের সর্বসাধারন মানুষের শহরাঞ্চলের সাথে যাতায়াত ও তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করনে সুবিধাসহ চলাফেরা নিশ্চিত করতে এসব ব্রিজ নির্মানের কাজ শেষ করার কথা ২ মাসের মধ্যে অর্থাৎ ১২ এপ্রিলের দিকে।
কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগের উদাসিনতা আর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বহীনতার কারনে এখনো শেষ হয়নি সুখান পুকুর, শন্তা গুরনী ও চাটখুর গ্রামের ৩টি ব্রিজের নির্মাণ কাজ। ফলে বর্ষাতে ওইসব এলাকার প্রায় ৪০/৫০টি গ্রামের কয়েক হাজার সাধারন মানুষের দূর্ভোগ এখন চরমে। এমনকি জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও নিরুপায় গ্রামবাসী শহরাঞ্চলের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেতে পারছেন না জীবন বাঁচাতে। শুধু তাই নয়, নিত্য প্রয়োজনীয় উৎপাদিত পণ্য বাজারে নিতে না পাড়ার কারনে এসব গ্রামের অসহায় কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন ন্যায্য মূল্য থেকে।
এ ছাড়া স্কুল-কলেজে যাতায়াত করতে না পাড়ার কারনে লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়ছে এসব এলাকার শিক্ষার্থীরা। এমন সব নানামূখি সমস্যা সমাধানে দ্রæত ব্রিজগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ করে চলাচলের উপযোগী করার দাবি এলাকাবাসীর।
সরেজমিন ব্রিজ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কোনটাতে কেবল নির্মাণ কাজ শুরু করতে দেখা গেছে, আবার কোথাও গিয়ে দেখা পাওয়া যায়নি নির্মাণ শ্রমিকদের বা নির্মাণ সামগ্রীর। তাই ব্রিজ ৩টির নির্মাণ কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে তা নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। ব্রিজ এলাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম, ব্রিজ নির্মাণের ব্যয়ের টাকার পরিমাণ, নির্মাণ সামগ্রীর ধরণ সম্বলিত সাইনবোর্ড প্রতিস্থাপনের কথা থাকলেও তা দেখা যায়নি ২টি ব্রিজ এলাকায় তবে একটি ব্রিজ এলাকায় সাইনবোর্ড ভেঙ্গে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এছাড়াও নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান, তারা লোহার রড ৬০ গ্রেড ব্যবহার করার কথা থাকলেও নি¤œমানের রড ব্যবহার করছে এবং ঢালাইকালীন তদারকির জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন কর্মকর্তা থাকার কথা থাকলেও ব্রিজ এলাকায় কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি।
সুখানপুকুর হাটু ভাঙ্গা খাড়ি ও শন্তা গুরনীর উপর ব্রিজ নির্মাণের কাজটি পান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ক্ষেতলাল উপজেলার মেসার্স সরদার চাউল কল কিন্ত তিনি কাজটি না করে বিক্রি করে দেন নতুনহাটের ঠিকাদার বাদশার কাছে এবং চাটখুর ব্রিজের কাজটি পান রাজশাহীর ঠিকাদার মেসার্স ওয়াসিমুল হক তিনিও কাজটি না করে বিক্রি করে দেন পাঁচবিবির ঠিকাদার মুন্নার কাছে বলে জানা যায় ব্রিজ এলাকা ঘুরে।
পাঁচবিবি উপজেলার চাটখুর গ্রামের ফিরোজ হোসেন, আনোয়ার হোসেন, শন্তা গুরনী গ্রামের রেজাউল করিম, ইউনুস আলী, সুখানপুকুর গ্রামের কামরুল হোসেন, কবির মিয়া, আজাদ হোসেনসহ অনেক গ্রামবাসী জানান, বর্ষার সময় আমাদের গ্রামের মানুষদের ধান চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র নিয়ে পানিতে ভিজে পার করতে হয়, আমাদের ছোট ছেলে-মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার সময় পানিতে পড়ে জামা-কাপড়সহ বই ভিজে যায়, কেউ বিয়ে দিতে চায়না আমাদের গ্রামের ছেলে-মেয়েদের সাথে, আমাদের গ্রামের কেউ অসুস্থতায় পড়লে খুব অসুবিধা হয়।
সুখানপুকুর এলাকার মাদ্রাসা শিক্ষক সামাউন হোসেন জানান, বর্ষার কারণে নদীতে প্রচুর পানি থাকায় গত বছর কয়েকটি গ্রামের অনেক ছেলে-মেয়ে একটি বিষয়ের পরীক্ষা দিতে পারেনি।
মাধাইনগর এলাকার পল্লী চিকিৎসক ডাঃ মোতালেব হোসেন বলেন, মাঝে মধ্যেই গ্রামের কেউ অসুস্থ হয়ে পরে আমাকে নিয়ে আসলে বাঁশ বেয়ে রোগী দেখতে খুব অসুবিধায় পরে যায়, এছাড়াও আমার সাধ্যের বাহিরে অসুস্থ রোগীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠাতে খুবই বিড়ম্বনায় পড়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক অনেক এলাকাবাসী জানান, পাঁচবিবি ত্রাণ ও পূর্ণবাসন বিভাগের উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোছা নূর-এ শেফা মহিলা হওয়ায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দাপটে চাকরি করছেন।
তবে এ ব্যাপারে নির্মাণ শ্রমিকরা নাম না বলার শর্তে জানালেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দেরীতে কাজ শুরু করেছেন এবং ঠিকমত আমাদের নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ করতে পারেনি বলেই কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি।
অনেক চেষ্টা করেও ঠিকাদারের সাথে সাক্ষাত ও মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে পাঁচবিবি ত্রাণ ও পূর্ণবাসন বিভাগের উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোছা নূর-এ শেফা বলেন, ব্রিজের কাজের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে ও আমাদের অফিসের প্রকৌশলী সব সময় কাজ তদারকি করছেন এবং দ্রæততম সময়ের মধ্যে ব্রিজের কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে বলা হয়েছে।
পাঁচবিবি উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান জানান, নির্ধারিত সময়ের আগে বৃষ্টিপাতের কারনে ব্রিজগুলির নির্মাণ কাজ শেষ করতে দেরী হচ্ছে, তবে একটি ব্রিজের একটু সমস্যা হতে পারে বাকিগুলির কোন সমস্যা হবে না বলে তিনি আরও জানান। জন দূর্ভোগের কথা বিচার করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্রিজটি নির্মানের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ