Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দামুড়হুদায় নিষিদ্ধ পলিব্যাগের বাড়ছে বেচাকেনা ও ব্যবহার পলিব্যাগ বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি

| প্রকাশের সময় : ১২ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নূরুল আলম বাকু, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে : চুয়াডাঙ্গার দামুড়হদায় পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর নিষিদ্ধ পলিব্যগের ব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে। মুদি দোকানসহ বিভিন্ন পণ্যের দোকানে তাকালে পলিথিন ছাড়া কোন জিনিষ খুঁজে পাওয়া ভার। উপজেলার কোথাও পলিব্যাগের বিকল্প হিসাবে পাট, কাগজ ও কাপড়ের ব্যাগ চালুর সরকারি সিদ্ধান্ত মানা হচ্ছে না। পলিব্যাগের পাশাপাশি সিমেন্ট, সার, পোল্ট্রিফিড ও কীটনাশকের খালি বস্তা কেটে তৈরী করা ব্যাগ ও বিদেশ থেকে আমদানি করা রং-বেরঙের সিনথেটিক (যা সহজে পঁচে না) কাপড়ের তৈরি ব্যাগে সয়লাব হয়ে গেছে উপজেলার হাট-বাজারগুলো। পরিবেশ ও মানবদেহের জন্য মারত্মক ক্ষতিকর পলিব্যাগ বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি সচেতনমহলের।
জানা যায়, ২০০২ সালের ১ জানুয়ারী থেকে ঢাকায় এবং একই বছরের ১ মার্চ থেকে সারা দেশে পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর পলিব্যাগের উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ঘোষনা করে পরিবেশ আইন-১৯৯৫ সংশোধন করা হয়। এই আইনে কেউ এই পলিব্যাগ উৎপাদন করলে দশ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও অনধিক দশ লাখ টাকা জরিমানা এবং বাজারজাত করার জন্য ছয় মাসের জেল ও দশ হাজার টাকা জরিমানার বিধান করা হয়েছে। আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে অবাধে পলিব্যাগ উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার করা হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ও গ্রাম এলাকা ঘুরে দেখা গেছে প্রকাশ্যেই ব্যবহার হচ্ছে নানান সাইজের রং-বেরংয়ের পলিব্যাগ। এ ছাড়াও বর্তমানে কাপড়, তৈরি পোশাক, মনোহরি, মুদিদোকানসহ বিভিন্ন দোকানে কমদামে বিদেশ থেকে আমদানি করা সিনথেটিক (যা সহজে পঁচে না) কাপড়ের তৈরি ব্যাগে মালামাল দেওয়া হচ্ছে।
ক্রেতাদের অনেকেই জানান, পাটের তৈরি বাজার ব্যাগ সহজে বহনযোগ্য নয় আবার দামও বেশি। আর কাপড়ের ব্যাগের দাম তো আরও বেশি। কিন্তু পলিথিন ও সিন্থেটিক কপড়ের ব্যাগের দাম কম এবং সহজলভ্য হওয়ায় সাধারন মানুষ এসব ব্যবহার করে। বিভিন্ন দোকানে খুব সহজেই পলিব্যাগ পাওয়া যায় বলে তারা এর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। তারা আরোও বলেন, বাজারে পলিব্যাগ না থাকলে আমরা অবশ্যই এটা ব্যবহারের প্রতি আগ্রহী হব না। বাজার নিয়ে যেতে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহন করব। বিশেষ করে মাছ এবং কাঁচাবাজারের বেশিরভাগ পণ্যই ভেজা থকে এ কারনে পলিব্যাগ ব্যবহার করা হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, দোকানে পলিব্যাগ রাখলে বেচাকেনা ভাল হয়। তাই আইন মানতে গিয়ে কেউই ব্যবসায় লোকসান করতে চায় না। ফলে সব দোকানেই পলিব্যাগ থাকে। মাছ, মাংস ও কাঁচা তরি-তরকারি ব্যবসায়ীরা জানান, অনেক ক্রেতাই মাছের বাজারে ব্যাগ নিয়ে আসেন না। ফলে ক্রেতাসাধারনের সুবিধার কথা ভেবেই দোকানে পলিব্যাগ রাখতে হয়।
একদিকে মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এ পলিব্যাগের উৎপাদন ও বাজারজাতকরনের জন্য ক্রেতারা দায়ী করছেন প্রশাসন ও ব্যবসায়ীদের, অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা দায়ী করছেন ক্রেতাদের। ফলে ব্যাবসায়ী ও ব্যবহারকারিদের কথার ঠেলাঠেলির মাঝখান দিয়ে বেড়েই চলেছে নিষিদ্ধ পলিব্যাগের অবাধ ব্যবহার। বর্তমানে জনসাধারনের মধ্যে সচেতনতার অভাব এবং এর ব্যাপক ব্যবহারের কারনে অনেকে এখন পলিব্যাগ ব্যবহার বৈধ বলেই জানেন।
মাঝে-মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলার বিভিন্ন হাটে-বাজারে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ক্ষতিকর ও নিষিদ্ধ পলিব্যাগ বিক্রি ও রাখার দায়ে ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হলেও কখনও এর উৎস্য সম্পর্কে কোন তদন্ত কর হয় না। ফলে পরিবেশ ও মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর পলিব্যাগ উৎপাদন ও বাজাজাতকরণসহ এ ব্যাবসার সাথে জড়িত রাঘববোয়লারা বরাবরই রয়ে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। যে কারনে থামে না এর উৎপাদন, বেচাকেনা ও ব্যবহার।
এছাড়াও সীমান্ত সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে তৈরি পলিথিনের তুলনায় ভারতের তৈরি পলিব্যাগ সস্তা হওয়ায় ভারত হতে চোরাচালানীদের মাধ্যমে বিভিন্ন সীমান্তপথে ব্যপকভাবে নানা সাইজের এই নিষিদ্ধ পলিব্যাগ দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অঞ্চলে। স্থানীয় হাটবাজারের পাইকারী ও খুচরা দোকানগুলোতে প্রকাশ্যেই এই পলিব্যাগ প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সচেতন মহল মনে করেন, পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এই নিষিদ্ধ পলিব্যাগের উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার বন্ধে সর্বপ্রথম এর উৎস খুঁজে বের করতে হবে এবং এ ব্যবসার সাথে জড়িতদেরকে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সেইসাথে গনমাধ্যমগুলোতে ব্যপক প্রচারের মাধ্যমে জনসাধারনের মধ্যে এর ক্ষতিকর বিষয়টিতে সচেতনতাবৃদ্ধি করে ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করে পরিবেশ ও মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর পলিব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ