Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি, চট্টগ্রাম বন্দরে ২ হাজার টন বিষাক্ত লবণ আটক

| প্রকাশের সময় : ১১ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি করা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশ্রিত ২ হাজার টন বিষাক্ত খাবার লবণ আটক করেছে শুল্ক গোয়েন্দা তদন্ত অধিদপ্তর। সোডিয়াম ক্লোরাইডের এ চালানটি বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় ছিল। নমুনা পরীক্ষা শেষে এতে ক্ষতিকারক উপাদান থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর গতকাল (সোমবার) এ চালানটি আটক দেখানো হয়। শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, খাবার লবণ ঘোষণা দিয়ে এ চালান আমদানি করা হলেও এটি আসলে ডিটারজেন্ট তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চট্টগ্রাম খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স আজমির ট্রেডিং কর্পোরেশন এবং মেসার্স আশা এন্টারপ্রাইজ চীন থেকে এগুলো আমদানি করেছে। পরবর্তীতে আজমির ট্রেডিংয়ের নিয়োগকৃত সিএন্ডএফ এজেন্ট মানিক ব্রাদার্স চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে গত ১১ মে বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে চালানটি খালাসের চেষ্টা করে। অন্যদিকে চালানটি খালাসের লক্ষ্যে ১১ জুন বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে আশা এন্টারপ্রাইজের নিয়োগকৃত সিএন্ডএফ এজেন্ট রূপালী ট্রেডার্স।
পণ্য চালানটির শুল্কায়নযোগ্য মূল্য প্রায় ১.৬৮ কোটি টাকা এবং প্রযোজ্য শুল্ক করাদি প্রায় ১.৫০ কোটি টাকা অর্থাৎ শুল্ক করাদিসহ আনুমানিক সর্বমোট বাজার মূল্য প্রায় ৩.১৯ কোটি টাকা। গোপন সংবাদ থাকায় শুল্ক গোয়েন্দা তদন্ত অধিদপ্তর ২০ জুন চালানটি সাময়িকভাবে আটক করে। পরবর্তীতে চালান থেকে নমুনা উত্তোলন করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাসায়নিক পরীক্ষাগারে প্রেরণ করা হয়। এই রাসায়নিক পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে এতে সোডিয়াম ক্লোরাইডের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার জন্য নমুনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগে প্রেরণ করা হয়। ফলিত রসায়ন বিভাগ থেকে নমুনার রাসায়নিক পরীক্ষার একটি প্রতিবেদন গতকাল শুল্ক গোয়েন্দা দপ্তরে পৌঁছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী আটক নমুনায় ৯১.৫ শতাংশ সোডিয়াম ক্লোরাইড, ৭.৫ শতাংশ সোডিয়াম সালফেট এবং ১.০ শতাংশ আদ্রতার উপস্থিতি রয়েছে। অর্থাৎ এগুলো মূলত সোডিয়াম ক্লোরাইডের চালান, যার সাথে অল্প কিছু পরিমাণ সোডিয়াম সালফেট মিশ্রিত অবস্থায় রয়েছে। আমদানিকারকদ্বয় ক্লিনিং এজেন্ট ঘোষণা দিয়ে সোডিয়াম সালফেট আমদানি করেছেন বলে আমদানি দলিলাদিতে উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু রাসায়নিক পরীক্ষায় ৯১.৫ শতাংশ সোডিয়াম ক্লোরাইডের উপস্থিতি প্রমাণ করে, আমদানি নিষিদ্ধ খাবার লবণ অবৈধভাবে বাজারজাতকরণের উদ্দেশ্যে এগুলো আনা হয়েছিলো।
উল্লেখ্য, সোডিয়াম সালফেট রাসায়নিক পদার্থটি মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এটি মূলত ডিটারজেন্ট তৈরিতে এবং ড্রাইং এজেন্ট হিসেবে বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত হয়। ফার্মাসি বিশেষজ্ঞের সাথে আলেচনায় জানা যায়, ভেজাল হিসাবে এটি শরীরে প্রবেশ করলে কিডনি ফেইলিওরসহ নারী ও শিশুদেহে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। প্রসঙ্গত আমদানি নীতি আদেশ ২০১৫ - ২০১৮ অনুযায়ী, সোডিয়াম ক্লোরাইড আমদানি নিষিদ্ধ। কিন্তু, একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে দীর্ঘদিন যাবত সোডিয়াম সালফেট ঘোষণায় সোডিয়াম ক্লোরাইডের সাথে সোডিয়াম সালফেট মিশ্রিত অবস্থায় আমদানি ও বাজারজাত করে আসছে।
শুল্ক গোয়েন্দার তদন্তে দেখা যায়, মেসার্স আজমির ট্রেডিং ও মেসার্স আশা এন্টারপ্রাইজসহ আরো বেশ কিছু আমদানিকারক নিকট অতীতে একইভাবে প্রায় ৩০০০ টন ভেজালমিশ্রিত সোডিয়াম ক্লোরাইড চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে খালাস করেছেন এবং একই উপায়ে বাজারজাত করেছেন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দি কাস্টমস এ্যাক্ট, ১৯৬৯ এবং অন্যান্য ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ