Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী দেখতে চায় জনগণ : মির্জা ফখরুল

| প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বর্তমানে দেশে দুঃসহ অবস্থা বিরাজ করছে দাবি করে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জনগণ এখন সরকারের পরিবর্তন চায়। তারা বেগম খালেদা জিয়াকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী পদে দেখতে চাইছে। গতকাল (রোববার) রাজধানীর নয়া পল্টনে মওলানা ভাসানী মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ‘সদস্য সংগ্রহ অভিযান’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার সাধারণ মানুষের জীবন দুঃসহ করে তুলেছে, অসহনীয় করে তুলেছে। গোটা বাংলাদেশের মানুষ পরিবর্তন চায়, বিএনপিকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। তারা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবেদেখতে চায়। এই অবস্থায় বিএনপি নেতা-কর্মীরা মানুষের কাছে গেলেই সাড়া মিলবে বলে মনে করেন তিনি। এজন্য দলের নেতা-কর্মীদের আন্তরিকতার সাথে পাড়ায়-মহল্লায় দলের আদর্শ নিয়ে প্রচারণায় ছড়িয়ে পড়তে হবে।
নির্বাচনে বিএনপি’র অংশগ্রহণের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হলেই নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি। আমরা বার বার বলেছি, আমরা নির্বাচনে যেতে চাই এবং যাবো। সেই নির্বাচন হতে হবে অবশ্যই একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায়। কারণ দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়, এই সরকারের হাত থেকে মুক্তি চায়। তাই নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুন, যেন সকল দল অংশগ্রহণ করে ও মানুষ ভোট দিতে পারে। তিনি বলেন, আমরা থাকব আদালতের বারান্দায় আর হাকিমের ঘরে অথবা জেলে; আর আপনি হেলিকপ্টারে করে সব দিকে নৌকার জন্য ভোট চেয়ে বেড়াবেন, সেই নির্বাচন হবে না। বিএনপিকে বাদ দিয়ে দশম সংসদ নির্বাচন করে ফেলা আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন, নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী পদে শেখ হাসিনাই থাকবেন, সেক্ষেত্রে কেউ নির্বাচনে না এলে তাদের মাথাব্যথা নেই। ফখরুল বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, সকলের জন্য সমান সুযোগ দিতে হবে, অবশ্যই একটা সমান্তরাল জায়গা দিতে হবে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে, আমাদেরও কথা বলতে দিতে হবে। নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে, সবাই যেন অংশগ্রহণ করতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি মানুষ যেন ভোট দিতে পারে, যাদের ভোট দেয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হবে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ঢাকার মানুষকে জেগে ওঠার আহ্বান জানান তিনি।
সংবিধান সংশোধন নিয়ে শেখ হাসিনা জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী গতকাল (শনিবার) বলেছেন যে, ’৭২ সালের সংবিধান না কি বার বার অন্যরা ধ্বংস করেছে এবং জিয়াউর রহমান সাহেবকে দায়ী করেছেন। আমরা বলতে চাই, মানুষকে বোকা বানানো যায়, কিন্তু আমাদেরকে বোকা বানানো যাবে না। কারণ আমরা ইতিহাসের সাক্ষী। আমরা জানি ’৭২ সালের সংবিধানকে আপনার পিতা যখন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন, প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে চতুর্থ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে আপনারাই প্রথম সেই সংবিধানকে ধ্বংস করেছেন। জিয়াউর রহমান সাহেব তো গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছেন, বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়েছেন। আপনাদেরকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছেন, আওয়ামী লীগ নতুনভাবে জন্মলাভ করেছে জিয়াউর রহমানের অধীনে। এটাই ইতিহাস। ইতিহাসকে বিকৃত করবেন না। তিনি বলেন, আজকে আপনারা বুঝে গেছেন জনগণ আপনাদের সঙ্গে নেই। আপনারা যে অত্যাচার-নির্যাতন, খুন-গুম করছেন; মানুষ এগুলো ভুলে যাবে না। আজকে আপনারা (সরকার) ব্যস্ত হয়ে আছেন কীভাবে বেশি করে বাজেট তৈরি করবেন, কীভাবে মেগা প্রজেক্ট তৈরি করবেন, কীভাবে একটা রাস্তা ১০ বার খুঁড়েবেন, আর কী করে আপনারা পয়সা বানাবেন। সেই কাজই আপনারা করে যাচ্ছেন। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র বিএনপি নেতা এম এ মান্নানকে তৃতীয় দফায় বরখাস্তের পরিপ্রেক্ষিতে মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকার ‘অনির্বাচিত’ বলেই স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত করছে। বহু মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান যাদেরকে এই সরকার নির্বাচিত হওয়ার পরও শান্তিতে দায়িত্ব পালন করতে দিচ্ছে না। আমাদের মেয়রদের কাউকে ২৪ মাস জেলে রেখেছে, কাউকে ২৮ মাস জেলে রেখেছে, মিথ্যা মামলা দিয়েছে। একটা মামলা থেকে বেরিয়ে আসার পরে যখন হাই কোর্ট থেকে অর্ডার নিয়ে গেছে, তখন আবার সেই নির্বাচিত মেয়রকে বরখাস্ত করেছে। এ থেকে একটা জিনিস প্রমাণিত হয়, এই অবৈধ সরকার যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসেনি, তারা নির্বাচিত মানুষদের ভয় পায়। যেহেতু বিএনপির সব মেয়ররা নির্বাচিত, তাদেরকে তাই দায়িত্ব পালন করতে দেয় না। এ থেকে বোঝা যায়, আওয়ামী লীগ একটি কর্তৃত্ববাদী দল, একটি সন্ত্রাসী দল।
গুম-খুন নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন অগ্রাহ্য করে আন্তর্জাতিক সংগঠনটিকে নিয়ে সরকারের আক্রমনের সমালোচনাও করেন ফখরুল বলেন, সত্য বলা কি অপরাধ? এই কথা বলেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। তারা কয়েকদিন আগে মানবাধিকারের উপর রিপোর্ট দিয়েছে যে, বাংলাদেশে গুম-খুন এত বেড়ে গেছে যে মানুষের নিরাপত্তা বলতে কিছু নাই। এটা ঢাকার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া দেওয়া হচ্ছে কথাগুলো সত্য নয়, এগুলো মিথ্যা। গত শনিবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, সত্য কথা বলা এটা আমাদের অধিকার, এটা অপরাধ নয়। ফরহাদ মজহারকে নিয়ে ফখরুল বলেন, কয়েকদিন আগে ফরহাদ মজহার সাহেবকে তুলে নিয়ে গেল। তিনি কোনো দলীয় লোক নন, তিনি সত্যবাদী, স্পষ্টবাদী, দার্শনিক মানুষ, চিন্তাবিদ মানুষ, অত্যন্ত পন্ডিত মানুষ। আমরা অনেকেই তার মতের সাথে একমত নই। কিন্তু তাকে শ্রদ্ধা করি, কারণ তিনি সত্য কথা বলেন, তিনি একজন সাচ্চা দেশপ্রেমিক, তিনি বাংলাদেশের মানুষের মনের কথাগুলো বলেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মহানগর নেতা শামসুল হুদা, রমেশ দত্ত ও তানভীর আহমেদ রবিন বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক ফুটবলার আনোয়ার হোসেন ঢালী, পেশাজীবী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান, ব্যবসায়ী হাজী মো. শেখ জামাল হোসেন, সূত্রাপুরের হরকান্ত বর্মন, আকাশ চন্দ্র দাশ, জুরাইনের মমতাজ বেগম প্রমূখ দলের মহাসচিবের হাত থেকে নতুন সদস্য ফরম সংগ্রহ করেন। অনুষ্ঠানে মহানগর দক্ষিনের নেতা ইউনুস মৃধা, মো. মোহন, মীর আশরাফ আলী আজম, জয়নাল আবেদীন রতন, হাবিবুর রশীদ হাবিব, আ ন ম সাইফুল ইসলাম, শেখ রবিউল আলম রবি, আলী রেজাউর রহমান রিপন, সাইফুল ইসলাম পটু, রফিকুল ইসলাম রাসেল, সাইফুল রহমান মিন্টু উপস্থিত ছিলেন।



 

Show all comments
  • Shakil Hasan ১০ জুলাই, ২০১৭, ১১:৫২ এএম says : 0
    বাংলার জনগন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুহতারাম আমীর মুফতী সৈয়দ মোঃ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই) কে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই|
    Total Reply(0) Reply
  • Monir Chowdhury ১০ জুলাই, ২০১৭, ১১:৫৩ এএম says : 0
    খালেদা জিয়াকেই মানায় কারণ ভদ্র ভাষায় কথা বলে
    Total Reply(0) Reply
  • Md Kabir ১০ জুলাই, ২০১৭, ১১:৫৪ এএম says : 0
    Surely we wanna see her head of state...
    Total Reply(0) Reply
  • M.A. Kalam ১০ জুলাই, ২০১৭, ১১:৫৪ এএম says : 0
    right
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ