Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

চট্টগ্রাম নগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি আসছে কলহ নিরসনে সবাইকে খুশি করার চেষ্টা

| প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি আসছে। চট্টগ্রাম থেকে ২৫১ সদস্যের কমিটির প্রস্তাব জমা পড়েছে কেন্দ্রে। চেয়ারপার্সনের অনুমোদন পাওয়ার পর যে কোন সময় কমিটি চূড়ান্ত করা হবে। কেন্দ্র থেকে তিন সদস্যের কমিটি ঘোষণার এগার মাস পর মহানগর বিএনপির কমিটি চূড়ান্ত করা হচ্ছে। কমিটিতে ঠাঁই পেতে শেষ মুহূর্তের চেষ্টা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন মহানগর বিএনপির নেতারা।
ডাঃ শাহাদাত হোসেনকে সভাপতি, আবু সুফিয়ানকে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও আবুল হাশেম বকরকে সাধারণ সম্পাদক করে গত বছরের ৬ আগস্ট তিন সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার নির্দেশনা দেয়া হলেও এ কাজটি সারতে প্রায় এক বছর পার হয়ে গেছে। এটি হবে ২০০৫ সালের পর নগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এক যুগের বেশি সময় পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে মহানগর বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। কাক্সিক্ষত পদ পাওয়া নিয়ে টেনশনে আছেন মহানগর নেতাদের অনেকে।
দলীয় গঠনতন্ত্রে ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির কথা বলা হলেও ২৫১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। জানা গেছে, মহানগর বিএনপিতে বিদ্যমান কলহ-কোন্দল নিরসন করতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সবাইকে খুশি রেখে বিরোধ মেটানোর কৌশল হিসেবে এ ঢাউস কমিটি তৈরি করেছেন মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতারা। তবে এরপরও কমিটি ঘোষণার পর অসন্তোষের আশঙ্কা করছেন অনেকে। কারণ দীর্ঘদিন পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়ায় অনেক সিনিয়র নেতাকে গুরুত্বপূর্ণ দেয়া যাচ্ছে না।
এদিকে চট্টগ্রাম বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা কমিটিতে তাদের অনুসারীদের ঠাঁই করে দিতে কেন্দ্রে চেষ্টা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে মহানগর বিএনপির সভাপতি থেকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য হয়েছেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তার আগে মহানগর বিএনপির সভাপতি ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। তারও আগে মহানগর বিএনপির দায়িত্ব পালন করেছেন ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। ওই তিন নেতার অনুসারীদের অনেকে এখন মহানগর বিএনপিতে সক্রিয়। মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে তাদের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। এ তিন নেতার অনুসারীরা যাতে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসেন তা নিশ্চিত করতে তৎপর বিএনপির ওই কেন্দ্রীয় তিন নেতা।
একসময় নগর বিএনপির আহŸায়ক ছিলেন সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম। তার অনুসারীদের অনেকেও এখন নগর বিএনপিতে সক্রিয়। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এম মোর্শেদ খান ও গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারীরাও নগর বিএনপির কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে ঠাঁই পেতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান কমিটির মেয়াদ প্রায় এক বছর হলেও এর আগে টানা ৬ বছর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছাড়াই চলেছে মহানগর বিএনপি। ২০১০ সালের শুরুতে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে সভাপতি, মরহুম দস্তগীর চৌধুরীকে সিনিয়র সহ-সভাপতি, আবু সুফিয়ান ও শামসুল আলম এবং ডাঃ শাহাদাত হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। দীর্ঘ ৬ বছরেও ওই কমিটি নগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি। দস্তগীর চৌধুরীর ইন্তেকালের পর ৪ সদস্যের কমিটি দিয়ে ৬ বছর চলেছে মহানগর বিএনপি। তারও আগে ২০০৫ সালে চসিক নির্বাচনে তৎকালীন নগর বিএনপির সভাপতি মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীনের পরাজয়ের পর মহানগর কমিটি ভেঙে দেয়া হয়। সংসদের তৎকালীন হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমকে প্রধান করে আহŸায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে বলা হলেও বিএনপি ক্ষমতা ত্যাগ করার পরপর ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী সময়ে রীতিমতো রাজনৈতিক সিডর বয়ে যায় দলটির উপর। ওয়াহিদুল আলমসহ আহŸায়ক কমিটির প্রায় সকলে আত্মগোপনে কিংবা কারাগারে চলে যান। এর ফলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন আর হয়ে উঠেনি। বিগত ২০০৫ সালে নগর বিএনপির কমিটি ভেঙে দেয়ার পর এ পর্যন্ত আর কখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি। এর ফলে প্রায় এক যুগের বেশি সময় পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি হচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির।
কমিটি গঠন প্রসঙ্গে নগর বিএনপির সভাপতি ডাঃ শাহাদাত হোসেন গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, নগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকাসহ একটি প্রস্তাব কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়েছে। আজকালের মধ্যে দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ওই কমিটির অনুমোদন দিলে তা প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে দলের ত্যাগী, পরীক্ষিত এবং আন্দোলন সংগ্রামে যাদের ভূমিকা ছিল তাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। আগামী দিনে নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে আন্দোলন এবং জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এ প্রেক্ষাপটে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহানগরী চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে যোগ্য নেতাদেরই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
২৫১ সদস্যের ঢাউস কমিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর পর মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি হচ্ছে। এ সময়ে অনেকে বিভিন্ন পদ-পদবি থেকে বঞ্ছিত হয়েছেন। মহানগরীতে যোগ্য নেতার সংখ্যা অনেক বেশি। তাদের সবাইকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে কমিটির আকার কিছুটা বড় হয়েছে। সবাইকে কমিটিতে এনে একটি গ্রহণযোগ্য এবং শক্তিশালী কমিটি গঠন করার পাশাপাশি দলে যাতে ভুল বোঝাবুঝি বা কলহ-বিরোধ না থাকে সে বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ডাঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, কমিটিতে বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত ভিশন ২০৩০’র আলোকে সব শ্রেণি পেশার প্রতিনিধিত্ব রাখা হয়েছে। বিশেষ করে নারী, সংখ্যালঘু এবং পেশাজীবীদের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে আনা হয়েছে। মহানগর কমিটি ঘোষণার পর খুব শিগগির নগরীর ১৬টি থানা ও ৪১টি ওয়ার্ডে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, ২৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির তালিকা প্রস্তাব আকারে দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহানের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার সাথে চট্টগ্রাম বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা দফায় দফায় বৈঠক করেন। ওই কমিটিতে নিজের অনুসারীদের ঠাঁই করে দিতে শেষ মুহূর্তে তদবির চালান এসব নেতারা। দলীয় সূত্রে জানা যায়, ভাইস চেয়ারম্যানের হাত হয়ে ওই তালিকা যেকোন সময় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে যাবে। তিনি কমিটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন। তার আগপর্যন্ত কমিটিতে আরও কিছু সংযোজন-বিয়োজন হতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ