Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুমিল্লায় অবাধে পুকুর-দীঘি ভরাট পানির চাহিদার আধারগুলো সংকুচিত

| প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনের নিরবতায় কুমিল্লা নগরীতে গত ত্রিশ বছরে শতাধিক পুকুর দিঘী ও জলাধার ভরাটের ঘটনা ঘটেছে। এক্ষেত্রে কুমিল্লার পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকাও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। সিন্ডিকেট করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকায় দিঘি, পুকুর, জলাধার ভরাটের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। নগরীর দক্ষিণাংশ ছাড়া দেড়শো পুকুর দিঘির মধ্যে বর্তমানে ৫০টিরও অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না ব্যাংক ও ট্যাঙ্কের শহর কুমিল্লায়। নাগরিক সমাজ ও পরিবেশবিদরা মনে করছেন নগরীতে বর্তমানে যেসব পুকুর দিঘি রয়েছে তা সংরক্ষণের পাশাপাশি নতুন করে পুকুর দিঘী খননের উদ্যোগ ভবিষ্যতের জন্য বিপর্যয়মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করবে।
ক্রমাগত দিঘি পুকুর ভরাটের কারনে নগরবাসীর পানির চাহিদা মেটানোর আধারগুলো সংকুচিত হয়ে পড়েছে। নগরীতে পানিবদ্ধতা ও বিভিন্ন এলাকায় পানির নিত্য ব্যবহার সংকট দেখা দিয়েছে। পুকুর দিঘি জলাধারের অভাবে আগুন নেভাতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটকে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের হিসেব অনুযায়ি নগরীর দক্ষিণাংশের বাইরে দেড়শো পুকুর, দিঘী ছিল। কুমিল্লা শহরের প্রায় দেড়শো পুকুর দিঘির মধ্যে বর্তমানে ৫০টিরও অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। ভূমি সিন্ডিকেটের নজর পড়ায় এগুলোতে গড়ে উঠেছে বিশাল বিশাল ভবন। কুমিল্লায় পুকুর দিঘী জলাধার ভরাটের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা নেই বললেই চলে। পরিবেশ নিয়ে কাজ করছে এমন সংগঠনগুলোও আন্দোলন জোরদার করতে পারছেনা। আর কুমিল্লায় পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারারা পুকুর দিঘী ভরাটের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভরাট কাজ বন্ধ করে দিয়ে মামলা ঠুকে দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেন। কিন্তু পরে আর খবর রাখেন না পুকুর বা দিঘীটি কী অবস্থায় রয়েছে। মাস খানেক পর গিয়ে দেখা যায় ভরাট কাজ বন্ধ করা ওই পুকুর বা দিঘীর অস্তিত্ব নেই। সেখানে চলছে প্লট বরাদ্দের কারবার। কুমিল্লা নগরীতে বেশ কটি পুকুর দিঘী ভরাটের কারণে পরিবেশ অধিদপ্তর মামলা করলেও ফলাফল শুভঙ্করের ফাঁকি। আসলে সরিষায় ভূত থাকায় এমনটি হচ্ছে বলে মনে করছেন নাগরিক সমাজ। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে গত ত্রিশ বছরে নগরীর আশি ভাগ পুকুর দিঘী জলাধার ভরাট হয়েছে রাজনৈতিক প্রভারের ওপর ভর করে। যেখানে ভরাট বন্ধে প্রশাসনের সর্বোচ্চ ক্ষমতা থাকা সত্তে¡ও বিষয়টি এড়িয়ে গেছে বা নিরব ভূমিকা পালন করেছে। আর সেই অবস্থায় অসহায় ছিল পরিবেশ রক্ষার নামে কাজ করা সংগঠনগুলো।
নগরীতে পুকুর দিঘির মধ্যে ভরাট হয়েছে এমন উল্লেখযোগ্য তালিকায় রয়েছে- চকবাজার বাসটার্মিনাল পুকুর, ডিগাম্বরীতলার আজিজ মজুমদারের পুকুর, অমূল্য পুকুর, ঝাউতলার খ্রিষ্টান পুকুর, নজরুল এভিনিউ এলাকার ইন্দ্রকুমার সেনের পুকুর, ঠাকুরপাড়ার আমজাদ ভিলার সামনের পুকুর, কামিনী চন্দের পারিবারিক পুকুর, পাল পুকুর, জোড় পুকুর, মদিনা মসজিদের সামনের পুকুর, কাশেমুল উলুম মাদরাসার রাস্তার পশ্চিমের অনেক পুরনো পুকুর, রামমালা সড়কের পশ্চিম পার্শ্বের পুকুর, নিরোদা সুন্দরী স্কুলের সামনের পুকুর, শাসনগাছা বাসট্যান্ড বিরাটাকারপুকুর, মনোহরপুরের ক্ষিতীশ দত্তের পুকুর, ভিক্টোরিয়া কলেজের ব্যাঙ পুকুর, ডিগাম্বরীতলার পুকুর, অমূল্য দিঘি, মোগলটুলির লালা দিঘি, ছোটরা রেজিষ্ট্রি অফিসের পেছনের দিঘি, মনোহরপুর লাকসাম রোডের কাসেমুল উলুম মাদরাসার দিঘি, চর্থা ড্রাইভার সমিতির পুকুর, উত্তর চর্থার নূর বাড়ির পুকুর, মুরাদপুর জানু মিয়া মসজিদের পেছনের বিশাল জলাধার ও অহিদুন্নেছা প্রাইমারি স্কুলের দক্ষিণ পার্শ্বের পুকুর, সংরাইশ সাহাপাড়া সর্দার বাড়ির দিঘি, সংরাইশের চম্পা বেগমের পুকুর, সুজানগর খানেকা পুকুর, দক্ষিণচর্থা হাজী মাসুকের বাড়ির সামনের পুকুর, গর্জখোলার পূর্বপাড়ার পুকুর, হযরতপাড়ার ধোপা পুকুর, দ্বিতীয় মুরাদপুরের হাতির পুকুর, পাথুরিয়াপাড়ার লস্কর দিঘি, ছাতিপট্রির বাঙ্গরা বাড়ির পুকুর, কাপ্তানবাজার এলাকার কার্জন কুটির পুকুরসহ আরও অসংখ্য দিঘি পুকুর ভরাট করে প্লট বরাদ্দ ও ফ্ল্যাটবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে।
কুমিল্লার পরিবেশবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা জানান, পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসন ও দায়িত্বশীলদের কাছে আমরা কঠোর পদক্ষেপ সবসময় প্রত্যাশা করি। কিন্তু গত কয়েক বছরে নগরীতে যেহারে পুকুর দিঘী ভরাট হয়েছে সেক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। কারণ রাজনৈতিক প্রভারের কাছে সবাই ছিল অসহায়। বর্তমানে যেসব দিঘি পুকুর ও জলাধার বিদ্যমান আছে তা সংরক্ষণ এবং প্রয়োজনে নতুন করে পুকুর দিঘি খননের উদ্যোগ নেয়া হলে ভবিষ্যতে কুমিল্লার মানুষ বিপর্যয়মুক্ত জীবন অতিবাহিত করতে পারবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ