Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পরিত্যক্ত ভবনে বিচারকদের বসবাস

সাতকানিয়া আদালতের ১৩৭ বছর

| প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ছৈয়দ জুনাইদ মোঃ হাবিব উল্লাহ, সাতকানিয়া থেকে : এবছর সাতকানিয়া আদালত ১৩৭ বছর সুবর্ণ পথ অতিক্রম করতে যাচ্ছে। জানা যায় আইন আদালতের ক্রমবিকাশ এ পর্যালোচনায় ১৭৬১ সালে ইংরেজ কোম্পানী চট্টগ্রামের শাসন ভার গ্রহণ করে। মিঃ হ্যারির উপর শাসন ভার অর্পন করা হয়। ১৭৭৩ সালে এজেলার গোড়াপত্তন হয়। ১৮৮০ সালে এজেলায় একজন জেলা জজ, ৩জন অতিরিক্ত জেলা জজ ৪জন সাব জজ, ১৬জন মুনসেফ নিয়োগ দেওয়া হয়। তৎমধ্যে ৫জন সদরে, ৪জন পারিবারিক আদালতে, ২জন সাতকানিয়ায়, ১জন কক্সবাজারে, ১জন ফটিকছড়িতে, ১জন উত্তর রাউজানে, ১জন দক্ষিণ রাউজানে, ১জন সন্দিপে বিচার কার্য্যে নিয়োজিত ছিলেন। বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায় ১৮৮০ সালে সাতকানিয়া আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমান সাতকানিয়া পোষ্ট অফিস কার্যালয়ে পরবর্তী ১৮৮৪ সালে সাতকানিয়া আদালত ভবন নির্মিত হয়। শত বছরের ঐতিহ্যমন্ডিত সাতকানিয়া আদালত প্রতিষ্ঠার পর পরই মোকদ্দমা পরিচালনার জন্য স্থানীয় পর্যায়ে আইনী সহায়তা প্রদানের জন্য আইনজীবি হিসেবে সনদধারী ব্যক্তিবর্গ সাতকানিয়া আদালতে পেশাগত কাজে নিয়োজিত হন। এ আদালতে অনেক সনামধন্য আইনজীবি পেশাগত চর্চায় নিয়োজিত ছিলেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন- এডভোকেট কামিনী কুমার ঘোষ, শান্তিপদ ঘোষ, নুর হোসাইন চৌধুরী, মোক্তার আহমদ চৌধুরী প্রমুখ। আইনজীবিরা সমাজের সচেতন অংশ। তারা নিজ পেশার বাইরে সমাজ কল্যাণ মূলক কাজে নিজেকে নিয়োজত রাখেন। অন্যায় ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেন। রাজনীতি সচেতন নাগরিক হিসেবে রাজনৈতিক ভূমিকাও কম নয়। ব্রিটিশ আমলে উপনিবেশিক গোষ্টির অন্যায় শাসনেও আইনজীবিদের বলিষ্ট প্রতিবাদি ভূমিকা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় উপনিবেশিক শাসক গোষ্টিকে অনেক ক্ষেত্রে বাধ্য করেছেন। পাকিস্তানি শাসক গোষ্টির একচেটিয়া বরবর শাসন ও শোসনের বিরুদ্ধে আইনজীবিদের সরব প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ পাকিস্তানি শাসক গোষ্টির ভিত কাপিয়ে দিয়েছিল। ১৯৭১ এর মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের বার সমিতির বিজ্ঞ সদস্যদের নিয়ে এবারের অনেক বিজ্ঞ আইনজীবি সক্রিয় ভূমিকা ও অবদান রেখেছেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আইনের শাসন প্রতিষ্ঠান সাতকানিয়া আদালত সহ দেশের সকল আদালতের আইনজীবিরা স্বাধীন দেশের নাগরিকদের সুবিচার প্রাপ্যতা নিশ্চিতে গৌরবউজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছেন। সাতকানিয়া আদালতে পেশাগত মর্যাদা পুনঃ প্রতিষ্ঠা করতে ও কর্মরত আইনজীবিগণ নবপ্রত্যয়ে সাতকানিয়া আইনজীবি সমিতির কার্যক্রমকে বেগমান করেন।
প্রত্যন্ত অঞ্চলের আদালত হিসেবে আইনজীবির সংখ্যা কম থাকলেও সে সময়ে আইনজীবিরা সাতকানিয়া আদালতে গন্ডি পেরিয়ে জেলা জজ কোর্ট ও হাই কোর্ট বিভাগে সুনাম অর্জন করেছেন। সময়ের পরিক্রমায় অনেক আইনজীবি পেশা থেকে অবসর নিয়েছেন। কেউ কেউ পরলোক গমন করেছেন। পেশাগত ব্যস্ততার মাঝে আইনজীবি সমিতির প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ পার করলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবর্গ সেদিকে খেয়াল রাখেনি। অন্যভাবে বলা যায়, রাজনৈতিক ও আর্ত সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে হয়তোবা সমিতির নেতৃবর্গ বিষয়টিকে আমলে নেয়নি। বর্তমানে দেশ অনেক এগিয়ে গেছে। দেশের আর্ত সামাজিক পরিস্থিতির প্রভুত উন্নতি হয়েছে। আদালত ও বিচারব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন হয়েছে। আইনজীবিদের মর্যাদাও সমুন্নত হয়েছে। আদালতের অন্যতম অনুসঙ্গ হিসেবে আইনজীবিরা কোর্ট অফিসারের মর্যাদায় পেশাগত কাজে বেঞ্চকে নিয়মিত সহায়তা করে যাচ্ছেন। সাংবিধানিক ভাবেও ওয়ারেন্ট ও প্রেসিডেন্স মোতাবেক আইনজীবিদের মর্যাদাও নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের আদালত হিসেবে সাতকানিয়া আদালত আজ আর পিছিয়ে নেই। সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও বাঁশখালী উপজেলার দেওয়ানী সংক্রান্ত মামলা মোকদ্দমার বিচারকার্য এ আদালতে পরিচালিত হয়ে আসছে। ইতিমধ্যে এখানে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রতিষ্ঠার পর এখানে মানুষের সুবিচার প্রাপ্তির সুযোগ বেড়েছে এবং মামলার ব্যয় বহুলাংশ কমেছে। যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত স্থাপিত হওয়ায় আইনজীবিদের পেশাগত ব্যস্ততাও বৃদ্ধি পেয়েছে। পেশার মানুন্নয়নে এবং বার বেঞ্চের সম্পর্ক জোড়ালো করতে আইনজীবি সমিতি সময়োচিত পদক্ষেপ নিয়েছে। বর্তমানে সাতকানিয়া আইনজীবির সদস্য সংখ্যা শতাধিক। নিয়মিত প্রেকটিস করেন ৩০জনের মত। বাকিরা জেলা জজ আদালতে নিয়মিত ভাবে পেশায় নিয়োজিত আছেন। কিন্তু সাতকানিয়া আইনজীবি সমিতির সাথে সুসম্পর্ক রেখে চলেছেন। সুখে-দুঃখে সকল আইনজীবিরা এগিয়ে আসছেন। ব্রিটিশ আমলের জরাজীর্ণ বেড়া দ্বারা টিনসেড নির্মিত আদালত বর্ষাকালে পানিতে ডুবে থাকে এবং বিজ্ঞ বিচারকদের জরাজীর্ণ কোয়াটার বর্তমান সরকারি সরকারি সংস্থা কর্তৃক পরিত্যক্ত ঘোষিত তবুও জীবনের ঝুকি নিয়ে বিচারকগণ বসবাস করেন। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও উক্তরূপ জরাজীর্ণ আদালত ভবন এবং বিচারকদের কোয়াটার যাহার আধুনিকায়ন করা সময়েরদাবী এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেট কোর্ট স্থাপন সময়ের দাবী বলে মনেকরেন এলাকাবাসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ