Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চৌদ্দগ্রামে সরকারি বরাদ্দে নির্মিত কাঁচা রাস্তা রাতের আধাঁরে কাটলেন প্রভাবশালী!

| প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সংবাদদাতা : কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের কনকাপৈত ইউনিয়নে সরকারি বরাদ্দে নির্মিত ভুলকরা-তারাশাইল সড়কের একশ ফুট রাস্তা রাতের আধারে কেটে ফেলেছে আবদুল মতিন চৌধুরী ও তার লোকজন। এনিয়ে স্কুল-মাদরাসার শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। ঘটনায় দায়িদের বিরুদ্ধে কনকাপৈত পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগও দেয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে রাস্তাটি কাটা অবস্থায় দেখা গেছে।
জানা গেছে, কনকাপৈত ইউনিয়নে শত বছরের প্রাচীন একটি সমৃদ্ধ বাজার হলো তারাশাইল বাজার। ইউনিয়নের প্রায় সকল গ্রামের লোকজন সপ্তাহের রোববার ও বৃহস্পতিবার বাজার করার জন্য সমবেত হয়। পাশ্ববর্তী ভুলকরা গ্রামে সুফি লুকিয়ত উল্যাহ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি আলিম মাদরাসা রয়েছে। বাজার এবং মাদরাসায় যাতায়াতের মাঝপথে একটি খাল আছে। শত বছর ধরে এলাকার সাধারণ মানুষ, মাদরাসার অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অভিভাবকমন্ডলী মোটা আইল ও খালের উপর নির্মিত বাশের সাকোঁ দিয়ে তারাশাইল বাজারসহ বিভিন্নস্থানে যাতায়াত করে। বিষয়টি চৌদ্দগ্রামের এমপি ও রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের নজরে আনলে তিনি সাকোঁর স্থলে স্থায়ীভাবে ব্রিজ নির্মাণের জন্য ৩২ লাখ ৫৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দেন। এছাড়া ব্রিজ থেকে তারাশাইল বাজার-ভুলকরা ২৯’শ ফুট সংযোগ সড়ক মাটি দিয়ে নির্মাণের জন্য আরও তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। রমজান মাসে সড়কের ২৮’শ ফুট এলাকার মানুষের স্বতঃস্ফুর্ততার মধ্যে নির্মাণ করা হয়। তারাশাইল নিবাসী তারাশাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মতিন চৌধুরী ও তার লোকজন উদ্দেশ্যমূলকভাবে অবশিষ্ট ১’শ ফুট রাস্তা নির্মাণে বাধার সৃষ্টি করে। এতে তারাশাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি সামছুল আলম ওরফে বাবুল ভূঁইয়া ইন্ধন দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি রেলমন্ত্রীর সমাধান করে দেয়ায় রমজান মাসেই সড়কের পুরো কাজ শেষ হয়ে যায়। এতে এলাকাবাসী রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু হঠাৎ করে গত সপ্তাহে বাবুল ভুঁইয়ার প্রত্যক্ষ ইন্ধনে মতিন চৌধুরী ও তার ভাইয়েরা রাতের আধারে তারাশাইল বাজার সংলগ্ন প্রায় ১’শ ফুট রাস্তা কেটে ফেলে। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে এলাকাবাসী গণ-স্বাক্ষর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কনকাপৈত পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় মেম্বারের নিকট অভিযোগ উথ্যাপন করে। অভিযোগ পেয়ে গত ৭ জুলাই ঘটনাস্থলে গিয়ে সড়ক কেটে ফেলার সত্যতা পায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বাবুল ভুঁইয়া ও মতিন চৌধুরী গং এলাকা ত্যাগ করে। পুলিশের সামনে উপস্থিত এলাকাবাসী দ্রæত গতিতে বাবুল ভুঁইয়া ও মতিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানায়। এছাড়াও এলাকাবাসী অনতিবিলম্বে সরকারি বরাদ্দে নির্মাণকৃত কাঁচা রাস্তাটি পাকাকরণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
স্থানীয় অসংখ্য লোকজন জানায়, ইন্ধনদাতা বাবুল ভুঁইয়া তারাশাইলের অসংখ্য নিরীহ ও গরীব লোকজনের ভূ-সম্পত্তি অবৈধভাবে কুক্ষিগত করে রেখেছে। তারাশাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে নিজের ভাই ও ভাতিজাকে দাতা সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে প্রায় ছয় লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে। বিদ্যালয় ফান্ডে সংরক্ষিত প্রায় বিশ লক্ষাধিক টাকাও নিজের নিকট অবৈধভাবে উত্তোলন করে রেখেছে। এনিয়ে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অপরদিকে বাবুল ভুঁইয়া চট্টগ্রামে ব্যবসা করার কারণে বিভিন্ন মানুষের সহিত লেনদেন করে টাকা আত্মসাতের কারনে মামলার আসামী হয়েছেন। পাশ্ববর্তী মরকটা গ্রামের হাবিব উল্যাহর সাথে চেক জালিয়াতির কারনে আদালত বাবুল ভুঁইয়াকে সাজা দেয়। ওই মামলায় তিনি জেলও খেটেছেন। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে একটি হত্যা মামলাও রয়েছে।
অপদিকে ঘটনার সাথে জড়িত মতিন চৌধুরী ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তারাশাইল বাজারে সরকারের বহু খাস জমি অবৈধভাবে নিজ দখলে রেখেছে। এছাড়াও খাস জমি নিজের মালিকানায় আনার জন্য কুমিল্লার আদালতে মামলা করে হেরে যায়। তিনি তারাশাইল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে অবৈধভাবে প্রভাব খাটিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে অনুচিত চাপ সৃষ্টি করে স্কুল ফান্ডে সংরক্ষিত প্রায় এক লক্ষ টাকা নিজের নিকট উত্তোলন করে রেখেছে। তাঁর অপকর্মে বাধা দেয়ায় স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীদের আসামী করে মতিন চৌধুরী একটি ডাকাতি মামলা করেন। এতে এলাকাবাসী সংক্ষুব্ধ হয়ে মতিন চৌধুরীকে তারাশাইল বাজারে পিটুনি দেয়।
এ ব্যাপারে বাবুল ভূঁইয়া বলেন, জায়গার মালিকদের নোটিশ ও ক্ষতিপূরণ না দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণ করায় বাধা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া শাহ ফখর উদ্দিন সড়ক দিয়ে সবাই যাতায়াত করতে পারে জমির মাঝে রাস্তা নির্মাণের দরকার কি?। প্রভাবশালী মহল তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বলেও তিনি দাবি করেন।
অপরদিকে মতিন চৌধুরী বলেন, ‘আমার মালিকানা জায়গায় আমাকে না জানিয়ে পুলিশ দিয়ে তারা রাস্তা নির্মাণ করেছে। এজন্য আমি লোকজন দিয়ে আমার জায়গা থেকে মাটি কেটে ফেলি। একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে’।
স্থানীয় মেম্বার জয়নাল আবেদীন বলেন, ২৯’শ ফুট রাস্তার মধ্যে ২৮’শ ফুটের মালিকদের কেউ বাধা দেয়নি। বাকি ১’শ ফুটের মালিক মতিন চৌধুরী জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণে বাধা দেয়।
প্রজেক্ট চেয়ারম্যান ও কনকাপৈত ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জাফর ইকবাল জানান, জনস্বার্থে সরকারি বরাদ্দে রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এলাকার প্রভাব খাটিয়ে দুই ব্যক্তি মন্ত্রী মহোদয়, আমাকে ও ভুলকরা গ্রামের এডভোকেট আবদুল মান্নান ভূঁইয়াকে গালিগালাজ করে লোকজন দিয়ে রাস্তাটি কেটে ফেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ