Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘স্ক্যান ম্যাপ’-এ জিম্মি বিআরটিএ!

দখল করে নিচ্ছে আন্তর্জাতিক সব টেন্ডার; বিস্মিত সংসদীয় কমিটি

| প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির ফিটনেস সনদ প্রদানসহ নানা কাজে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) সংশ্লিষ্টদের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট। টাকা ছাড়া কিছুই হয় না সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণাধীন এই দপ্তরটিতে। এবার অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে মোটর ভেহিক্যাল ফিটনেস সার্টিফিকেট ফরমসহ সংস্থাটির প্রয়োজনীয় ফরম মুদ্রণের ক্ষেত্রে। আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে হয় এসব কাজ।
তবে প্রতিবছরই কাজ ভাগিয়ে নিয়ে যায় ‘স্ক্যান ম্যাপ’ নামে ভারতীয় একটি প্রতিষ্ঠান। এতে বিআরটিএ সংশ্লিষ্টদের পকেট ভারী হলেও প্রয়োজনের অতিরিক্ত সরকারি অর্থ অপচয় ও লোপাট হয়ে যাচ্ছে। জাতীয় সংসদের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে আসা অভিযোগে এসব তথ্য জানা গেছে। আন্তর্জাতিক একটি টেন্ডার প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ প্রতিনিধি স্বাক্ষরিত ওই অভিযোগে এসব অনিয়ম বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি প্রদান ও সরকারি অর্থের লোপাট বন্ধের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সংসদীয় কমিটির প্রভাবশালী একজন সদস্য এ বিষয়ে জানান, বিআরটিএ-তে এ ধরণের অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়ে আসছে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে কমিটির বৈঠকে এনিয়ে এখনও কোনো আলোচনা হয়নি। অভিযোগ হয়তো সভাপতির দপ্তরে আছে। কমিটিতে এলে আলোচনা করে সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তথ্যমতে, ভেহিক্যাল ফিটনেস সার্টিফিকেট ফরমসহ অত্যাবশ্যকীয় ফরমগুলো মুদ্রণের ক্ষেত্রে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। আর্ন্তজাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে এসব কাজ সম্পন্ন করা হয়। যে কারণে কোটি কোটি টাকার এসব কাজ পেতে বিশ্বের অনেক প্রতিষ্ঠানই প্রতিযোগিতায় নামে। কিন্তু নানা ছুতোয় বাদ পড়ে যায় সবাই। প্রতিবছরই সবাইকে টপকে কাজ হাতিয়ে নেয় ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ‘স্ক্যান ম্যাপ’। অভিনব পন্থায় বিআরটিএ-কে কাজ দিতে বাধ্য করা হয় অনেকটা।
সংসদীয় কমিটিতে আসা অভিযোগে বিআরটিএ’র জিম্মি দশার বিষয়টি তুলে ধরে বলা হয়, স্ক্যান ম্যাপ একটি আন্তর্জাতিক টেন্ডারে তাদের সহযোগী আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে অংশগ্রহণ করায়। একই মালিকানার এসব প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে দরপত্র জমা দেয়। পৃথক এসব দরপত্রে কাজের মূল্যমানও নির্ধারিত করে দেয়া পৃথকভাবে। এরপর বিআরটিএ’র সংশ্লিষ্টদের সহায়তা নিয়ে নানা ছুতোয় অংশগ্রহণকারী অন্যদের দরপত্র বাতিল করিয়ে নিজেদের দেয়া সর্বোচ্চ মূল্যের দর অনুযায়ী কাজ বের করে নেয়। এতে প্রকৃতমূল্যের দ্বিগুণ অর্থ সরকারের তহবিল থেকে নিয়ে যায় তারা।
সম্প্রতি আহŸান করা একটি দরপত্রের ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা ঘটেছে। গাড়ির ফিটনেস সনদ ফরম মুদ্রণের এই টেন্ডারটি (৩৫.০৩.০০০০.০০৩.০৮.০০৩.১৭) আহŸান করার সঙ্গে সঙ্গে স্ক্যান ম্যাপ তাদের আরও দুই সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে টেন্ডার জমা দেয়। মোট ৩০ লাখ ফরম মুদ্রণের জন্য স্ক্যান ম্যাপ ৮ কোটি ৭১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দর ঘোষণা করে তাদের টেন্ডার দাখিল করে। তাদের অপর দুই সহযোগীর একটি ১২ কোটি এবং অপরটি ৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকায় কাজ সেরে দেয়ার ঘোষণা দেয়। এদের ছাড়া আরও দুটি প্রতিষ্ঠান এই টেন্ডারে অংশ নেয়। এরমধ্যে একটি ৭ কোটি ৪১ লাখ ১২ হাজার টাকা এবং অপরটি ৫ কোটি ৫০ লাখ ৫০ হাজার (সর্বনিম্ন দরদাতা) টাকার কাজ করার ঘোষণা দেয়।
তথ্যানুযায়ী, এবারের চেয়ে অনেক কম সংখ্যক ফরম মুদ্রণের জন্য গত বছর স্ক্যান ম্যাপ সরকারের ১১ কোটি টাকা নিয়ে নেয়। এবারও সেই পথেই হাটছে তারা। টেন্ডারগুলো জমা হওয়ার পরই স্ক্যান ম্যাপ বুঝতে পারে যথানিয়মে কাজ পাওয়া তাদের পক্ষ্যে সম্ভব নয়। কারণ সর্বনিম্ন দরদাতার দেয়া দর তাদের চেয়ে অনেক কম। এরপরই তারা টেন্ডার দখলের পরিকল্পনা করে। বিআরটিএ’র সংশ্লিষ্ট কিছু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে কাজ হাতিয়ে নেয়ার পায়তারা চালানো হচ্ছে বলে সংসদীয় কমিটিকে জানানো হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিআরটিএ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ