Inqilab Logo

রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জরুরি সেবা নিশ্চিতে ভবনের ছাদে হেলিপ্যাড

স্বল্পমূল্যে সেবা প্রদানে গড়ে উঠেছে আদ্-দ্বীন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক হাসপাতাল

| প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর অনেকটা বাইরে। বুড়িগঙ্গার তীর ঘেষা জুরাইন-পোস্তগোলা। আধুনিক ঢাকার পাদপ্রদীপের নিচে অন্ধকারের মতো। উন্নয়নের ছোঁয়া তেমন চোখে পড়ে না। ভাঙ্গাচোরা রাস্তা। মাঝে-মধ্যে খানা খন্দ। এই জায়গায় অত্যাধুনিক এক হাসপাতাল গড়ে উঠা কঠিন। হ্যাঁ গড়ে উঠেছে। আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন পরিচালিত আদ-দ্বীন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক হাসপাতাল। ৫০০ শয্যার এই হাসপাতালে ঢুকলেই মনে হবে না আপনি রাজধানী থেকে দুরে আছেন। অনেক ঝক্কি ঝামেলা পেরিয়ে আপনি এখানে পৌছেছেন। এখানকার সব কিছুই যেন ঝকঝকে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রয়েছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। রয়েছেন অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদল। রিসিপসন থেকে শুরু করে সব কিছুই এখানে তৈরি করা হয়েছে ৫ তারকা হোটেলের মানের।
গত ২৬ মে এই হাসপাতালটির উদ্বোধন করেন সমাজ সেবক ও আইনজীবী আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনে চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. শেখ মহিউদ্দিন।
সূত্র মতে, মধ্যবিত্ত ও নি¤œ মধ্য বিত্তদের স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করে যাচ্ছে আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন। রাজধানীর মগবাজাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল। যেখানে সব ধরনের সেবা মিলছে স্বল্পমূল্যে। সেবা নিতে আসা মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আদ্-দ্বীন হাসপাতালের প্রধান বৈশিষ্ট হচ্ছে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা। চিকিৎসক-নার্সদের সেবা দেয়ার মানসিকতা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্বল্পমূল্যে আরো সাধারণ মানুষদের কাছে স্বাস্থ্য সেবা পৌছে দেয়ার লক্ষ্যে আদ্-দ্বীন ব্যারিস্টার রফিকুল হক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। জানা গেছে , ৪০০ কোটি টাকার প্রকল্পে ১০ তলা ভবনের আপাতত দুটি ফ্লোরে প্রায় ৪০ হাজার বর্গফুটে ১০০ আসনের হাসপাতাল কার্যক্রম শুরু হয়েছে গত ২৭ মে। নির্মাণাধীন পুরো ভবনটিতে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে থাকবে অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। এমনকি রোগীদের সঙ্গে আসা স্বজনদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও থাকবে এখানে।
বর্তমানে হাসপাতালটিতে রয়েছে কোটি টাকা মুল্যের অত্যাধুনিক ফোর-ডি আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন। এমন মেশিন বাংলাদেশে মোট ৪-৫ টি রয়েছে বলেও জানা গেছে। রয়েছে ৪৬৪টি টেস্ট করতে সক্ষম আধুনিক প্যাথোলজি বিভাগ। হাসপাতালের ভেতরের বেড, একটি ক্যান্টিন, একটি ফুড কর্ণার, টয়লেট সব কিছুই করা হয়েছে ভাইভ স্টার হোটেলের আদলে বলে জানান পরিচালক আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর। এদিকে হাসপাতালে মাল্টি ক্যাজুয়ালিটি সার্ভিসসহ জরুরি সেবা নিশ্চিত করতে ভবনের ছাদে হেলিপ্যাডের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ঢাকার মধ্যে ২৪ ঘন্টা স্বল্প মূল্যে এ্যম্বুলেন্স সার্ভিসও চালু রয়েছে এই হাসপাতালের। এছাড়া পরবর্তীতে এই হাসপাতালকে একটি পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পানও রয়েছে বলে জানান হাসপাতাল প্রশাসন।
বর্তমানে গর্ভবতী মায়েদের সেবায় এই হাসপাতালে ২০ জন ডাক্তার, ৩৫ নার্স নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়া আগামী ঈদ-উল-আযহার আগে পরিপূর্ন সেবা দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে হাসপাতাল প্রশাসন। চিকিৎসা সেবার বাইরে হাসপাতালটিতে এমন কিছু সুবিধা রয়েছে যাতে রোগী বা তার পরিবারকে কোনো প্রয়োজনে বাইরে যেতে না হয়। হাসপাতালের ভেতরেই ‘উপমা’ নামের একটি শিশু কর্নার রয়েছে। সেখানে শিশুদের সব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ বড়দের পোষাক, শাড়ি, পাঞ্জাবি, নকশী কাঁথাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র বাইরের তুলনায় কম দামে পাওয়া যাবে। রয়েছে ‘উৎস’ নামে একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। যেখানে মাছ, মাংস, চাল, ডাল থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সব উপকরণ মিলবে সহনীয় দামে।
হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. জেসমিন ইয়াসমিন বলেন, জুরাইন এলাকায় বেশির ভাগ মানুষই নিম্নবিত্ত। এখানে উন্নত সেবা নিশ্চিত করার জন্য তেমন কোনো হাসপাতাল নেই। এখানকার মানুষের কথা চিন্তা করেই আমরা এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
হাসপাতালে স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে আসা স্থানীয় ঠিকাদার শহিদুল ইসলাম বলেন, ৫০শতাংশ ছাড়ে আমরা এখানে উন্নত চিকিৎসা নিতে পারছি। হাসপাতালে সকলের ব্যবহার খুবই ভালো। এত সুবিধা নিয়ে এমন হাসপাতাল আমরা এর আগে কখনো দেখিনি।
এদিকে গর্ভবতী মায়েদের স্বাভাবিক ডেলিভারি, সিজারিয়ান ও ডেলিভারী সংক্রান্ত অন্যান্য অপারেশনে ৫০ শতাংশ মূল্য ছাড় দিচ্ছে পোস্তগোলার আদ্-দ্বীন ব্যারিস্টার রফিক-উলহক হাসপাতাল। ২১ জুন থেকে শুরু হওয়া এই সেবামূল্য ছাড় চলবে আগামী ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত। সেবা কার্যক্রম শুরু উপলক্ষে ২৬ মে থেকে ২১ জুন পর্যন্ত গর্ভবতী মায়েদের স্বাভাবিক ডেলিভারি, সিজারিয়ান ও ডেলিভারী সংক্রান্ত অন্যান্য অপারেশন এবং গর্ভবর্তী মায়েদের সব ধরনের আলট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা বিনামূল্য করা হয়।
সেবা মাস চলাকালীন একজন রোগী মাত্র ৬০০ টাকায় ফোর-ডি আল্ট্রাসনো করাতে পারবেন যার নির্ধারিত সেবামূল্য ১২০০ টাকা। স্বাভাবিক ডেলিভারী ৫০ শতাংশ ছাড়ে ১৯৫০ টাকায়, সিজারিয়ান ডেলিভারী ৪৩০০ টাকায় করা যাবে। এছাড়া অন্যান্য সকল সুবিধাও পাওয়া যাবে ৫০শতাংশ ছাড়ে। এর আগে গত ২৭ মে থেকে ১মাস সম্পূর্ন বিনা মূল্যে গর্ভবতী মায়েদের এই চিকিৎসা সেবা প্রদান করে হাসপাতালটি।
হাসপাতালের পরিচালক আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর বলেন, গত এক মাসে আমাদের এখানে ১ হাজার ৭৪৩ জন রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছে। ল্যাব টেস্ট করেছেন ৭ হাজার ৯০৩ জন এবং অত্যাধুনিক ফোর-ডি আল্ট্রাসনোগ্রাফী করেছেন ৭৬৪জন। তাদের থেকে আমরা শুধুমাত্র রেজিষ্ট্রেশনের ১৬০ টাকা নিয়েছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ