Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মোংলা-ঘাশিয়াখালী চ্যানেল চালু হলো ৬ বছর পর

| প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : ছয় বছর পরে বিআইডব্লিউটিসি’র প্যাডেল জাহাজ ‘পিএস অষ্ট্রিচ’ নির্বিঘেœ ‘মোংলা-ঘাশিয়াখালী চ্যানেল’ অতিক্রম করে শুক্রবার রাত সোয়া ১০টায় খুলনায় পৌছেছে। ২০১১ সালের নভেম্বরের পরে প্রথমবারের মত রকেট ষ্টিমার সার্ভিসের কোন প্যডেল জাহাজ খুলনায় পৌছল। এর ফলে দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের একটি দাবী পুরন হল। এতেকরে সংস্থাটির ঢাকা-বরিশাল-খুলনা রকেট সার্ভিসের লোকশানের মাত্রাও এক-চতুর্থাংশে হ্রাস পাবে। পিএস অষ্ট্রিচ শণিবার রাত ৩টায় ফিরতি ট্রিপে খুলনা থেকে রওয়ানা হয়ে গতকাল সকালে মোংলা হয়ে সন্ধায় বরিশালে পৌছে। নৌযানটি বরিশাল থেকে যাত্রী নিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় চাঁদপুর-ঢাকার উদ্যেশ্যে যাত্রা করে আজ সকালে ঢাকায় পৌছার কথা। নাব্যতা সংকটের কারনে ২০১১-এর শুষ্ক মওশুমে মোংলা-ঘাশিয়াখালী চ্যানেল’টি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঐ বছরের নভেম্বরে ঢাকা-বরিশাল-খুলনা রকেট স্টিমার সার্ভিসটি বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ পর্যন্ত সিমিত করে বিআইডব্লিউটিসি।
তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রায় ২শ কোটি টাকা ব্যায়ে পুণঃ খনন করে ‘বাংলার সুয়েজ খাল’ খ্যাত ‘মোংলা-ঘাশিয়াখালী চ্যানেল’টি গত বছরের মধ্যভাগে চালু করে বিআইডব্লিউটিএ। নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে গত নভেম্বরে বিআইডব্লিউটিসি সপ্তাহে একদিন ঢাকা-বরিশাল-মোংলা-খুলনা নৌপথে তার যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিস পুনরায় চালু করে। কিন্তু ঐ রুটে ব্যায়বহুল স্ক্রু-হুইল নৌযান ‘এমভি মধুমতি’র সাহায্যে সার্ভিসটি চালু করায় প্রতিট্রিপেই ৩-৪লাখ টাকা পর্যন্ত লোকশান গুনতে হচ্ছিল সংস্থাটিকে। গত তিন বছরে সংগ্রহ করা এমভি মধুমতি ও এমভি বাঙালী নৌযান দুুটির প্রতি ঘন্টায় জ্বালানী ব্যায় প্রায় ২শ লিটার। পক্ষান্তরে প্যাডেল জাহাজগুলোর জ্বালানী ব্যায় ৮৬লিটার।
তবে গত জানুয়ারীর মধ্যে ব্যায় সাশ্রয়ী প্যাডেল-হুইল নৌযান ঐ রুটে যাত্রী পরিবহন করার কথা ছিল। কিন্তু পুণঃখননকৃত মোংলা-ঘাশিয়াখালী চ্যানেলটির প্রসস্ততা ও নাব্যতা সংকটের কথা বলে সংস্থাটি প্যাডেল জাহাজ পরিচালন থেকে বিরত থাকে। ফলে আড়াইগুন পরিচালন ব্যায়ের স্বেতহস্তি খ্যাত স্ক্রু-হুইল নৌযান ‘এমভি মধুমতি ও এমভি বাঙালী’ খুলনা পর্যন্ত পাঠাতে গিয়ে প্রতি ট্রিপেই লোকশানের মাত্রা বাড়ছিল। গত নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত এ রুটে ব্যায়বহুল দুটি স্ক্রু-হুইল নৌযান পরিচালনা করায় সংস্থাটিকে প্রায় কোটি টাকা লোকশান গুনতে হয়েছে।
বিআইডবিøউটসি’র মেরিন পরিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, মোংলা-ঘাশিয়াখালী চ্যানেলটির বাঁশতলী এলাকায় লুপ কাটিং করে সংক্ষিপ্ত চানেল তৈরী করায় সেখানের বাঁকটি প্যাডেল জাহাজের জন্য কিছুটা ঝুকিপূর্ণ। তাদের মতে, স্ক্রু-হুইল নৌযানগুলোর প্রসস্ততা ৪৮-৫৫ফুটের মধ্যে। কিন্তু প্যাডেল জাহাজগুলো ৬৫ফুট প্রসস্ত। প্যাডেল জাহাজগুলো বাঁক ঘুরতে বেশী জায়গা প্রয়োজন বিধায় বাঁশতলী এলাকা অতিক্রম কিছুটা ঝুকিপূর্ণ। তবে শুক্রবার বিআইডব্লিউটিসি’র মেরিন ও বানিজ্য বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তাগন সরেজমিনে পিএস অষ্ট্রিচ নিয়ে নির্বিঘেœ মোংলা-ঘাশিয়াখালী চ্যানেল অতিক্রম করেন। নৌযানটিতে ভ্রমনরত মেরিন বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা গতরাতে জানান, বর্তমানে ভড়া বর্ষা মওশুমে চানেলটিতে নাব্যতা সংকট নেই। তবে শুষ্ক মওশুমের আগে বাঁশখালী এলাকাটি ড্রেজিং করে আরো কিছুটা প্রসস্ত করলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।
উল্লেখ্য,১৯৭৭সালে ড্রেজিং করে মোংলা-ঘাশিয়াখালী চ্যানেলটি চালু করার ফলে,সারা দেশের সাথে মোংলা সমদ্র বন্দরসহ খুলনা ও নওয়াপাড়া নদী বন্দর দুটির নৌযোগাযোগ সহজতর হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন সংরক্ষন ড্রেজিং না করায় ২০১১-এর শুষ্ক মওশুমের শুরুতে নাব্যতা হারিয়ে চ্যানেলটি সম্পূর্ণভাবেই বন্ধ হয়ে যায়।
এমনকি ঐসময় ভড়া বর্ষা মওশুমে চ্যানেলটির গভিরতা পূর্ণ জোয়ারে ১.৩৭মিটার এবং বুড়িডাঙ্গা ও রামপাল শোলে সর্বনিম্ন গভিরতা ০.৪৬ মিটারে নেমে আসে।
পরবর্তিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রায় ২শ কোটি টাকা ব্যায়ে পুণঃ খনন করে ‘বাংলার সুয়েজ খাল’ খ্যাত ‘মোংলা-ঘাশিয়াখালী চ্যানেল’ চালু করা হয়। ‘দেশের গুরুত্বপূর্ণ ২৪নৌপথ খনন প্রকল্প’র আওতায় দেশী ও বিদেশী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বিঅইডব্লিউটিএ’র নিজস্ব ড্রেজারের সাহায্যে চ্যানেলটি থেকে প্রায় সোয়া ২কোটি ঘন মিটার পলি অপসারন করা হয়। তবে চ্যানেলটি সচল রাখতে এখানে নিয়মিত সংরক্ষন ড্রেজিং অব্যাহত রাখতে হবে বলে জানিয়েছেন নদী বিশেষজ্ঞগন। মোংলা-ঘাশিয়াখালী চ্যানেল’টির ওপর ভারত-বাংলাদেশ আšতঃনৌযোগাযোগ ব্যবস্থাও নির্ভরশীল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ