Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সুন্দরবন বিধ্বংসী প্রকল্পের বিরুদ্ধে বিএনপি -রিজভী

| প্রকাশের সময় : ৮ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : সুন্দরবন বিধ্বংসী রামপাল প্রকল্পের বিরুদ্ধে বিএনপি’র অবস্থানের কথা জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি বলেন, আমাদের যারা বিশেষজ্ঞ-বুদ্ধিজীবী আছেন তারা সুন্দরবন ধ্বংসকারী এই প্রকল্পের বিষয়ে হুঁশিয়ার করছেন, আন্দোলন করছেন। বিএনপি সেই আন্দোলনে সমর্থন করেছে। বিধ্বংসী এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে রয়েছে। গতকাল (শুক্রবার) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও সাবেক বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবেদিন ফারুকসহ সকল রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।
রামপাল বিষয়ে ইউনেস্কো অনাপত্তি জানিয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রেসনোটের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের পরিবেশবিদরা লিখছেন, বলছেন এবং এমনকি ভারতের অনেক পরিবেশবিদরা বলেছেন যে সুন্দরবনের কাছে কয়লা পুঁড়িয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করলে সুন্দরবন নষ্ট হবে; পরিবেশ, প্রতিবেশ, গাছ-মাছ-পানি ও মানুষ বিপন্ন হবে। আমাদের যারা বিশেষজ্ঞ-বুদ্ধিজীবী আছেন তারা এই বিষয়ে হুঁশিয়ার করছেন। রিজভী বলেন, আমাদের দেশের যারা পরিবেশবিদ, বিজ্ঞানী রয়েছেন তারা কি জ্ঞানী নন? তারা কি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেননি? তাদের গবেষণার কী কোনো ভিত্তি নেই? বিদেশি সংস্থা কী বলছে তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। আমরা রামপাল চাই না। আমরা আজো প্রতিবাদ করি- সুন্দরবনের কাছে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন অন্যায়, অবৈধ ও বাংলাদেশকে ধ্বংস করে দেবার শামিল। পোল্যান্ডে চলমান ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৪১তম অধিবেশনে রামপাল নিয়ে ইউনেস্কোর আপত্তি তুলে নেওয়া হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনকে ঝুঁকিতে থাকা প্রাকৃতিক নিদর্শনের তালিকাভুক্ত করার পদক্ষেপ থেকেও ইউনেস্কো সরে এসেছে বলে মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়। এদিকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের পাশে বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে আপত্তি জানিয়ে আসছে পরিবেশবাদীরা। তারা বলছেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পরিবেশ ও প্রতিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সঙ্কটে পড়বে সুন্দরবন। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সুন্দরবনের ক্ষতি না করেই এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে। নিজেদের ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য নিয়ে এই পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যে ইউনেস্কোর পক্ষ থেকেও রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে গত বছর চিঠি দেওয়া হয় সরকারকে। সরকার সেই চিঠির জবাবও দেয়।
পোল্যান্ডে হেরিটেজ কমিটির যে বৈঠকে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়, তাতে বাংলাদেশের সরকারি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। তারা বৈঠকে সুন্দরবন ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন।
ইউনেস্কোর আপত্তি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপি’র এই নেতা বলেন, আমার বাড়িতে আগুন লেগেছে, এই আগুনের তীব্রতা কতটুকু সেটা আমরাই বুঝতে পারব। সেখানে আমি বালতিতে করে পানি ঢালব না দমকল বাহিনী নিয়ে এসে আগুল নেভাব- সেটা আমরা ঠিক করব। তিনি বলেন, ভারত নিজেদের দেশে এ ধরনের প্রকল্প নির্মাণ করতে দেয় না। পরিকল্পিতভাবে সুন্দরবন ধ্বংস করতেই ভারত এই রামপাল প্রকল্প তৈরি করাচ্ছে। ভারতের অংশেও সুন্দরবন থাকার প্রসঙ্গ টেনে রিজভী দাবি করেন, সেখানে কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেখানে করেনি। হাসিনার মতো একজন দাসনি দাস, একটি গোলাম সরকারকে দিয়ে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসাচ্ছে। কারণ তারা সুন্দরবন নষ্ট করবে, বাংলাদেশের মানুষকে বিপন্ন করবে, আমাদের গাছ মাছ পানিকে বিপন্ন করবে- এই উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে।
জনগণের পার্লামেন্টের দুয়ার বন্ধ হয়ে গেছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, পার্লামেন্টে প্রকৃত বিরোধীদল নেই, এটি এখন বিচিত্রা অনুষ্ঠানের ক্লাবে পরিণত হয়েছে। প্রকৃত বিরোধীদলকে সরকার হত্যা- গুম করছে। সরকারের রোষানলে প্রতিটি মুহূর্তেই প্রতিবাদের মধ্যে থাকতে হচ্ছে বিএনপিকে। একটি গুমের সংবাদের পরেই আমরা মুহূর্তের মধ্যে শুনতে পাই অন্য কোথাও আমাদের সতীর্থকে হত্যা করে তার লাশ গুম করা হয়েছে, অপহরণ করা হয়েছে তার পরিবারের অন্য আরেক সদস্যকে।
বিএনপির এ নেতা বলেন, দুঃসময়েই মধ্যেই হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গুম-খুন ও হত্যার প্রতিবেদন দিয়েছে। তারা যে তথ্য দিয়েছে প্রকৃত তথ্য আরো কঠিন। আওয়ামী লীগ নেতারা প্রশ্ন তুলেছে এ তথ্য কোথায় পেল? আমি বলবো দেশের খেটে খাওয়া মানুষ রিকশা, বাস, ট্রাক চালককে জিজ্ঞাস করলে এসব তথ্য পেয়ে যাবেন। আরো তথ্য পাওয়া যাবে, সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুুম্মাম কাদের চৌধুরী, ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমের পরিবারকে জিজ্ঞাসা করলে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ তথ্য কোথায় পেল’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যে রিজভী বলেন, সিলেটের ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলমের পরিবারের সঙ্গে কথা বলুন তথ্য-উপাত্ত পেয়ে যাবেন।
এ সময় তিনি গাজীপুরের মেয়রকে ফের বরখাস্ত করার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, জনবিরোধী সরকার নিজেদের নেতাকর্মীদের আখের গোছানোর জন্য নির্বাচিত প্রতিনিধির ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। মানববন্ধনে ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য খালেদা ইয়াসমিন, স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলনের সভাপতি ড. মনিরুজ্জামান মনির প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ