পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : জাতিসংঘ ২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দশককে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস দশক হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ সংক্রান্ত নথিতে সইও করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু কমছে না সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি। বরং উদ্বেগজনক হারে তা বেড়েই চলছে। এমনকি দেশের অভ্যন্তরীণ রেকর্ড ভেঙে বাংলাদেশের সড়ক মহাসড়কগুলো এখন হয়ে উঠেছে এশিয়ায় অন্যতম প্রাণঘাতী। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব মতে, এবার ঈদুল ফিতরে দেশের সড়ক মহাসড়কে ২০৫ টি সড়ক দূর্ঘটনায় ২৭৪ জন নিহত ও ৮৪৮ জন আহত হয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌপথে সম্মিলিতভাবে ২৪০ টি দুর্ঘটনায় ৩১১ জন নিহত ও ৮৬২ জন আহত হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট (এআরআই)-এর হিসাব মতে, গত বছর ঈদুল আযহার আগে-পরে ১০ দিনে ৫৮টি দুর্ঘটনায় মারা গেছে ১৩১ জন। তবে বাংলাদেশে যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, ওই বছর প্রায় একশটি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে কমপক্ষে ২৫০ জন। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ সম্প্রতি মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজট নিরসনে ২৫ দফা নির্দেশনা প্রদান করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজট কমবে। একই সাথে কমবে প্রাণহানী ও মানুষের ভোগান্তি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানীর দিক থেকে এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। বাংলাদেশের উপরে আছে চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম। কিন্তু এই দেশগুলোতে যানবাহনের সংখ্যা বাংলাদেশের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। আর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানীর দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট, নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি ও ব্র্যাকের গবেষণায় সড়ক দুর্ঘটনার জন্য ১১টি কারণ ও চারটি অনুষঙ্গ চিহ্নিত করা হয়েছে। কারণগুলো হলো- বেপরোয়া গাড়ি চালানো, চালকের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের অভাব, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, একই সড়কে বিভিন্ন গতির যান চলাচল, সড়কের ধারে ঝুঁকিপূর্ণ কর্মকান্ড, সড়কের নকশায় ত্রুটি, ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ ও সড়ক-মহাসড়কে ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্ব পালনে উদাসীনতা, সড়ক নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতনতার অভাব, পথচারীর ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ, চালকের অন্যমনস্কতা, দুর্ঘটনা ঘটিয়ে চালকদের পার পেয়ে যাওয়ার সংস্কৃতি, অপ্রতুল শাস্তির বিধান, মোটরযান আইনের দুর্বলতা ও অনুপযুক্ত সড়ক। অনুষঙ্গ চারটি হলো- চালক, যানবাহন, সড়ক ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ।
বিআরটিএ-এর তথ্য অনুযায়ী, দেশে ভারী যানবাহনের প্রায় আড়াই লাখ চালক রয়েছেন। এর মধ্যে ১ লাখ ৯০ হাজার লাইসেন্স পেয়েছেন পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে। একইভাবে বাংলাদেশে নিবন্ধিত প্রায় ২৭ লাখ যানবাহনের মধ্যে অন্তত ৪ লাখের ফিটনেস সনদ নেই। সনদভুক্ত যানগুলোও সনদ পেয়েছে পরিদর্শন বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই। আর পারিপার্শ্বিক অবস্থার মধ্যে রয়েছে অসম গতির যান ও গ্রামীণ সড়ক হঠাৎ করে মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়াও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
মোটরযান আইন অনুযায়ী মহাসড়কে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিসীমা ৮০ কিলোমিটার নির্ধারণ করে দিয়েছে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল। শহর ও লোকালয়ের সড়কগুলোতে এ গতিসীমা সর্বোচ্চ ৪০ কিলোমিটার। এজন্য যানবাহনগুলোতে গতি নিয়ন্ত্রক যন্ত্র (স্পীড গভর্নর) রাখাও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিআরটিএ সূত্র জানায়, এ যন্ত্রের ওপর নির্ভর করেই মোটরযানের ফিটনেস সনদ দেওয়া হয়। এছাড়া, মহাসড়কে চলার সময় চালকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে ২৪৩টি বø্যাকস্পটে। চালকদের প্রশিক্ষণও দিতে বলা হয়েছে। এতোকিছুর পরে দুর্ঘটনার জন্য শাস্তির বিধানতো আছেই। কিন্তু অনেক মালিকই এসব নিয়মের তোয়াক্কা করেন না। বরং মালিককে খুশি করার জন্য চালকরা কার আগে কে যেতে পারে সে প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত থাকে। কিছুদিন আগে ঢাকার মহাখালী টার্মিনালে এনা পরিবহন লিমিটেডের এক সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে এনা পরিবহনের মালিক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ চালকদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, কোন চালক যদি অসুস্থবোধ করেন বা কোনো কারণে গাড়ি ধীরে চালান সেজন্য তাকে কোনো জবাবদিহি করতে হবে না। বরং ওভার স্পীডে কেউ সময়ের আগে গন্তব্যে পৌঁছালে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। তিনি চালকদেরকে নির্ধারিত গতির চেয়ে বেশি গতিতে গাড়ি না চালানোর জন্য হাতজোড় করে অনুরোধ করেন। এনা পরিবহনের মতো সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান অন্য কোন পরিবহন কোম্পানী করেছে কি না তা জানা যায় নি। তবে একটি মহল এনার বিরোধীতা করে ফেসবুকসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় বদনাম ছড়িয়ে চলেছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের গাড়িতে স্পীড গর্ভনেস সীল করা আছে। এটা করার পর থেকে দুর্ঘটনার হার অনেকাংশে কমে গেছে। তিনি বলেন, এবারের ঈদে সারাদেশে ২শ টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলেও আল্লাহর রহমতে এনা পরিবহনের কোনো গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়নি। তিনি জানান, কিছুদিন আগেও তিনি ১০ লাখ টাকা খরচ করে এনার দু’শ চালককে ব্র্যাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এ ছাড়া কিছুদিন পর পর চালকদেরকে নিয়ে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এনা। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের সড়ক-মহাসড়কের যে সক্ষমতা তাতে ৬০-৭০ কিলোমিটারের বেশি গতি তোলার কোন সুযোগই নেই। অথচ চালকেরা ১০০-১২০ পর্যন্ত গতিতে যাত্রীবাহী বাস চালায়। এটা ধরার জন্য হাইওয়ে পুলিশ স্পীড গান ব্যবহার করে থাকে। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, উন্নত দেশে আরও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। আমাদের হাইওয়ে পুলিশকেও সেইসব প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। তাহলে চালকদের খামখেয়ালি অনেকটাই কমে আসবে।
এদিকে, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজট নিরসনে ২৫ দফা নির্দেশনা প্রদান করেছে। নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজট অনেকটাই কমে আসবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। নির্দেশনাগুলো হলো : মহাসড়ক (নিরাপত্তা, সংরক্ষণ ও চলাচল) নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০০১ এর ৮(১) এর ধারা থেকে ‘অধিদপ্তরের লিখিত অনুরোধ ব্যতিত’ শব্দটি বাদ দিতে হবে। রাস্তা নির্মাণ/মেরামতের কাজে ব্যবহৃত সামগ্রী ব্যতিত অন্য কোন সামগ্রী রাস্তার ওপর বা বা পার্শে¦ রাখতে দেয়া যাবে না। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া মহাসড়কে বা তার ¯েøাপে বা কোন অংশে অস্থায়ী বা স্থায়ীভাবে নির্মিত হাটবাজার বা দোকান উচ্ছেদ করতে হবে। মহাসড়কের ১০ মিটারের মধ্যে কোন হাট, বাজার ও বাণিজ্যিক স্থাপনা তৈরির অনুমতি দেয়া যাবে না। যানবাহন চলাচল ছাড়া মহাসড়কে জনসভা বা অন্যকোনভাবে ব্যবহারের জন্য অনুমতি দেয়া যাবে না। রাস্তার পার্শ্বে পরিকল্পনা মাফিক বাস স্টপেজ স্থাপন করতে হবে। সড়ক মহাসড়কে ত্রæটিপূর্ণ যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে হবে। পর্যায়ক্রমে গবাদিপশু পরিবহণের কাজে ব্যবহৃত খোলা ট্রাক/লরি ছাড়া সকল প্রকার খোলা ট্রাক ও লরি চলাচল বন্ধ করতে হবে। মহাসড়কে গতিরোধক কমিয়ে আনতে হবে এবং গতিরোধকে নিয়মিতভাবে উপযুক্ত রং ব্যবহার করতে হবে। যানজট কমানোর জন্য মহাসড়কে স্থান নির্ধারণ করে ফ্লাইওভার ওভারব্রিজ, ভারপাস/আন্ডারপাস ও লেবেল ক্রসিং তৈরি করতে হবে। দূর্ঘটনার পর দ্রæত যানবাহন অপসারণের জন্য হাইওয়ে পুলিশকে আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে আরো কার্যক্ষম করতে হবে। মহাসড়কে পথচারী পারাপারের জন্য উপযুক্ত ক্রসিং নির্ধারণ করে আন্ডারপাস/ওভার পাস নির্মাণ করতে হবে। যত্রতত্র রাস্তা পারাপার বন্ধে উঁচু লোহার রেলিং দিতে হবে। মহাসড়কে রোড ডিভাইডার দিতে হবে এবং দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে গতিসীমা সীমিত রাখার জন্য রাস্তার পার্শ্বে সাইনবোর্ড লাগাতে হবে। মহাসড়কের ওপর চাপ কমানোর জন্য রেলপথ ও নৌপথের সুবিধা বাড়াতে হবে। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া গাড়ীর মূল কাঠামোর কোন পরিবর্তন করা যাবে না। মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ওজন মাপার যন্ত্র স্থাপন করতে হবে। সড়ক মহাসড়কে রাস্তার পার্শ্বে পর্যাপ্ত ¯েøাপ ও ড্রেন নির্মাণ করতে হবে। চালকদের দক্ষতা ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। ইলেক্ট্রনিক ও পয়েন্ট বেজড ড্রাইভিং লাইসেন্স চালু করতে এবং তার ডাটা বেজ তৈরি করতে হবে। প্রত্যেকটি দুর্ঘটনার বিস্তারিত তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে। মটরযান মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যক্রম মনিটরিং এর আওতায় আনতে হবে। স্কুলের পাঠ্যক্রমে ট্রাফিক রুল অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। জনগণকে সচেতন করতে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। যানজট ও দুর্ঘটনা হ্রাসের গাইড লাইন প্রস্তুত কমিটির সুপারিশ জাতীয় সংসদের গোচরে আনা যাতে সড়ক দুর্ঘটনারোধে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা যায়। এ নির্দেশনা পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহ বাস্তবায়নের কার্যক্রম গ্রহণ করবে।
উল্লেখ্য, হিউম্যান রাইটস্ এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ সড়ক ও মহাসড়কে ট্রাফিক জ্যাম ও দুর্ঘটনা রোধে নির্দেশনা চেয়ে ১৫৪৬/২০১১ নম্বর রিট পিটিশন সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে দায়ের করে। হাইকোর্ট বিভাগ শুনানি শেষে সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজট নিরসনে উক্ত ২৫ দফা নির্দেশনা প্রদান করে। ###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।