Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

চরাঞ্চলের ২০ হাজার মানুষের ভরসা বাঁশের সাঁকো

| প্রকাশের সময় : ৮ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মহসিন আলী মঞ্জু, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) থেকে : কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কান্দাপাড়া এলাকায় বারোমাসিয়া নদীর ওপর স্থানীয়দের উদ্যোগে নির্মিত বাঁশের সাকোই ওপাড়ের ২০ হাজার মানুষের নদী পারাপারের একমাত্র ভরসা। প্রতিদিন এই নড়বড়ে সেতুর ওপর দিয়েই স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হলেও ব্রীজটি নির্মাণের উদ্যোগ গৃহীত হয়নি দীর্ঘ দিনেও। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে পারাপারের সময় অহরহ দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার পাশাপাশি চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এলাকাবাসী। জানা গেছে, স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে এলাকাবাসী কান্দাপাড়া এলাকায় বারোমাসিয়া নদীর ওপর একটি ব্রীজের দাবি করলেও দীর্ঘ সময়ে তা বাস্তবায়ন হয়নি। তাই বর্ষাকালে নৌকা আর শীতকালে নিজেদের উদ্যোগে তৈরী বাঁশের সাকোই তাদের পারাপারের একমাত্র অবলম্বন। দৈনন্দিন প্রয়োজনে ওই নড়বড়ে সাঁকোর ওপর দিয়েই চলাচল করে ঝাউকুটি, ঝামাকুটি, কান্দাপাড়া, কলাবাগান, কলিরচর, খোকারচর, দক্ষিণের চর ও চর গোড়কমন্ডল গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। ব্যবসা-বাণিজ্য, হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ এবং দৈনন্দিন কর্মসংস্থানের কারণে সাঁকো পেরিয়েই উপজেলা সদরসহ বালারহাটে আসেন তারা। সংশ্লিষ্ট গ্রামগুলোর কৃষকদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য বিক্রিসহ মরনাপন্ন রোগীর জরুরী চিকিৎসাও সারতে হয় ওই নড়বড়ে সাঁকোর উপর দিয়ে গিয়েই।
সাঁকোটির পশ্চিমে ৩ কিঃমিঃ দূরত্বে ধরলা নদী। ধরলা আর বারোমাসিয়ার মধ্যবর্তী চরাঞ্চলে বন্দীদশার মত বসবাস করছে গ্রামগুলোর প্রায় ২০ হাজার মানুষ। ওই চরে রয়েছে কান্দাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর গোরকমন্ডপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর গোরকমন্ডপ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও চর গোরকমন্ডপ সরকারি আবাসন প্রকল্প। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় এ এলাকার শিক্ষার্থীদেরকে লেখাপড়ার জন্য দূরবর্তী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। তাছাড়া সবসময় লোক চলাচল করায় বাঁশের সাঁকোটিও কিছুদিন যেতে না যেতেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এমতবস্থায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় এলাকাবাসীর। তাদের দাবি ওই নদীর উপর সেতু নির্মিত হলে পাল্টে যাবে নদীর অপর পারের চরাঞ্চলের ২০ হাজার মানুষের জীবন-যাত্রা। দাঁড়াতে পারবে নিজেদের পায়ের ওপর। সচ্ছল হবে শত শত পরিবার।
এ এলাকার বাসিন্দারা জানান, এলাকার প্রত্যেক বাড়ী থেকে ১/২টি করে বাঁশ সংগ্রহ করে সকলে মিলে প্রায় ১মাস কাজ করে এই সাকো তৈরী করেছেন গ্রামবাসীরা। তারা আরও জানান, নির্বাচন আসলে এই সেতু নিয়ে রাজনীতি শুরু হয়। পাতি নেতারা সাঁকোর উপর দাড়িয়ে বড় নেতাদের কাছে সেতুর দাবী জানিয়ে ফোন করেন। আমাদেরও কদর বাড়ে। প্রার্থীরা আসেন, সেতুটি তৈরীর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট নিয়ে যান। কিন্তু তারপর সেতুতো দূরের কথা এলাকাবাসীর কোনো খোঁজই রাখেন না তারা।
কান্দাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল মান্নান মুকুল জানান, ওই সাঁকো পারাপার হতে গিয়ে অনেক ছেলে-মেয়ে নিচে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে। অনেকেরই বই-পত্র পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। সেতুর জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এলাকাবাসীসহ অনেকবার আবেদন করা হয়েছে। শুধু প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে, কিন্তু কোন কাজ হয়নি। নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুসাব্বের আলী মুসা জানান, জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ওই স্থানে সেতু নির্মাণের জন্য বহুবার স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কোন সদুত্তোর পাওয়া যায়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ