বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ঈদে লক্ষাধিক যানবাহন ছাড়াও পৌনে ২ লাখ যাত্রী পরিবহন করেছে বিআইডবিøউটিসি
নাছিম উল আলম : এবারের ঈদের আগে-পরে রাষ্ট্রীয় জাহাজ চলাচল প্রতিষ্ঠান-বিআইডবিøউটিসি দেশের ৫টি ফেরি সেক্টরে লক্ষাধিক যানবাহনসহ দেড়লাখ যাত্রী পারাপার ছাড়াও দেশের অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় নৌযানগুলোতে আরো প্রায় ৩০ হাজার যাত্রী পরিবহন করেছে। এছাড়াও সংস্থাটির ইজারা দেয়া বিভিন্ন উপকূলীয় রুটের সী-ট্রাকগুলোতেও বিপুলসংখ্যক যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে। সংস্থাটির বিভিন্ন ধরনের ৫০টি ছোট-মাঝারী ও বড় ফেরির প্রায় ৯৫ ভাগই এবারের ঈদের আগে পরে সচল ছিল বলে দাবি দায়িত্বশীল মহলের। তবে রো-রো ফেরি ‘হজরত আমানত শাহ (রঃ) ভারী মেরামতে মঙ্গলবারে সংস্থার ডকইয়ার্ডে পাঠান হয়েছে।
এছাড়াও অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় নৌপথের সবগুলো যাত্রীবাহী নৌযানই এবার নির্বিঘেœ চলাচল করেছে এসব নৌযানে এবারের ঈদের সময় নিয়মিত ও বিশেষ ট্রিপে যাত্রী পরিবহনে সক্ষম হয়। সংস্থাটির শীর্ষ পর্যায়ের নিবিড় নজরদারীতে এবারের ঈদের আগে-পরে সবগুলো যাত্রীবাহী নৌযান ছাড়াও ফেরিগুলো সুষ্ঠুভাবে বাণিজ্যিক পরিচালনে ছিল। তবে কর্মস্থলমুখি যাত্রী ভিড় থাকার পরেও বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঈদ পরবর্তী বিশেষ সার্ভিস ১ জুলাই-এর পরে বন্ধ করে দেয়ায় সাধারণ মানুষের স্বাচ্ছন্দে ফেরা কিছুটা বিঘিœত হয়। এমনকি আষাঢ়ী বর্ষণের বিরূপ আবহাওয়ায় বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের কর্মস্থলমুখি যাত্রীদের বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে বেসরকারী নৌযানে ভ্রমণ করতে হচ্ছে এখনো।
রাষ্ট্রীয় এ নৌ-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানটি ফেরি সার্ভিসের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকা ও সন্নিহিত এলাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাথে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক পরিবহন ক্ষেত্রে এক ‘চলন্ত সিঁড়ি’র ভূমিকা পালন করে আসছে। এর মধ্যে আরিচা সেক্টরে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও মাওয়া সেক্টরের শিমুলিয়াÑকাঠালবাড়ী ফেরি রুট দুটিতে দেশের সর্বাধিক সংখ্যক যানবাহন পারাপার হয়ে থাকে। এ দুটি ফেরি সেক্টরের মাধ্যমেই রাজধানী এবং সন্নিহিত এলাকার সাথে বরিশাল ও খুলনা বিভাগসহ দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার পুরো সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা নির্ভরশীল। এমনকি দেশের প্রধান দুটি স্থলবন্দর-বেনাপোল ও ভোমড়া ছাড়াও দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলার সাথেও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা আরিচা ও মাওয়া ফেরি সেক্টরের ওপরই নির্ভরশীল।
এবারের ঈদের আগে গত ২৩ জুন থেকে ৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত বিআইডবিøউটিসি তার ৫টি ফেরি সেক্টরে প্রায় ১ লাখ ৪ হাজার যানবাহন পারাপার করে আয় করেছে ১০ কোটি ৭৭ লাখ ১১ হাজার টাকা। এরমধ্যে আরিচা সেক্টরের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে ১০টি রো-রোসহ ১৮টি ফেরির সাহায্যে প্রায় ৬১ হাজার যানবাহন পারাপার করা হয়। পাশাপাশি মাওয়া সেক্টরের শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ী রুটে প্রায় ৩৮ হাজার যানবাহন পারপার হয়। এ সেক্টেরে বর্তমানে ৪টি রো-রোসহ মোট ১৯টি ফেরি চলাচল করছে। আষাঢ়ের বর্ষার অমাবশ্যার ভড়া কোটালে পদ্মার প্রবল শ্রোত অতিক্রম করে সবগুলো ফেরি এত বিপুলসংখ্যক যানবাহন নির্বিঘেœ পারাপার সংস্থাটির জন্য একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ ছিল। সংস্থার শীর্ষ পর্যায়ের নিবিড় নজরদারীসহ মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করার ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন দাবি দায়িত্বশীল মহলের।
আরিচা ও মাওয়া সেক্টর ছাড়াও চাঁদপুর-শরিয়তপুর, ভোলা-ল²ীপুর ও ভোলা-বরিশালের মধ্যবর্তী লাহারহাট-ভেদুরিয়া রুটেও বিআইডবিøউটিসি’র ফেরিগুলো প্রায় সাড়ে ১২ হাজার যানবাহন পারাপার করে ঈদেও আগে-পরে। সংস্থাটির বহরে বর্তমানে ছোট বড় মিলিয়ে ফেরির সংখ্যা ৫০টি। এরমধ্যে ১৪টি রো-রো ফেরি, ১৪টি কে-টাইপ ও ৯টি স্বল্প পরিচালন ব্যয়ী ইউটিলিটি ফেরি ছাড়াও ১২টি মিডিয়াম ও ডাম্ব ফেরিসহ ছোট মাপের আরো ১টি ভিআইপি ফেরি রয়েছে সংস্থাটির বহরে।
তবে সংস্থাটির মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের আন্তরিকতা সত্তে¡ও এবারের ঈদেও কাঠালবাড়ী ও শিমুলিয়া এবং দৌলতদিয়া ঘাটে স্থানীয় কতিপয় রাজনৈতিক মাস্তানের কারণে সাধারণ যাত্রীরা কিছুটা হয়রানীর সম্মুখীন হন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতায় পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও তার পরিপূর্ণ সমাধান আসেনি। পাশাপাশি আষাঢ়ী বর্ষণেও যাত্রীদের কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। তবে আবহাওয়া প্রতিকূল থাকলেও যানবাহন পারপার ছিল সহনীয়।
এদিকে এবারের ঈদ উল ফিতরের আগে পরে বিআইডবিøউটিসি’র যাত্রীবাহী সেক্টরে ঢাকা-চাঁদপুর-বরিশাল-ঝালকাঠী-পিরোজপুর হয়ে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ এবং খুলনা পর্যন্ত নিয়মিত ও বিশেষ স্টিমার সার্ভিসে প্রায় ২০ হাজার যাত্রী পরিবহন করে ৪১ লাখ টাকা আয় করেছে। এছাড়া চট্টগ্রাম-স›দ্বীপÑহাতিয়া উপকূলীয় রুটেও সংস্থাটি আরো সাত সহস্রাধিক যাত্রী বহন করেছে। ঐ সেক্টরে আয় হয়েছে আরো প্রায় ২১ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে সংস্থাটি অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় যাত্রীবাহী সেক্টরে এবারের ঈদে প্রায় ২৬ হাজার যাত্রী বহন করে ৬৩ লাখ টাকা আয় করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও ভোলার ইলিশা থেকে ল²ীপুর, বরিশাল-ল²ীপুর, চট্টগ্রামের কুমিরা-গুপ্তছড়া, হাতিয়ার চরবাটা-চরচেঙ্গা ও ভোলার শশিগঞ্জ-মনপুরাসহ কয়েকটি উপকূলীয় নৌপথে সংস্থার ইজারা দেয়া সী-ট্রাকগুলো ঈদেও আগে-পরে বিপুলসংখ্যক যাত্রী পরিবহন করেছে।
এসব ব্যাপারে বিআইডবিøউটিসি’র চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড. জ্ঞান রঞ্জন শীল-এর সাথে সেল ফোনে আলাপ করা হলে তিনি জানান, আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি সীমিত সাধ্যের মধ্যেও আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে। ঈদের খুুশিতে যাত্রীদের নিরাপদে ঘরে পৌঁছে দিতে এবং ঈদের পরে কর্মস্থলে ফেরাতে চেষ্টার কোন ত্রæটি ছিল না। তিনি বলেন, সরকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা কখনো বিধি-বিধানের বাইরে নৌযান পরিচালনা করি না। লাভের চেয়ে নিরাপদে যাত্রী, পণ্য ও যানবাহন পারপারই রাষ্ট্রীয় জাহাজ চলাচল প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিআইডবিøউটিসি’র প্রধান লক্ষ বলেও জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।