Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রামে চোর সিন্ডিকেটের ৫ সদস্য গ্রেফতার

অনলাইনে জমজমাট চোরাই মোটর সাইকেল ব্যবসা

| প্রকাশের সময় : ৭ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : মোটর সাইকেল চুরির পর তার ছবি দেয়া হয় ফেসবুকে। মোটর সাইকেলটি বিক্রি হবে এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতা খোঁজা হয়। দাম দর ঠিক হলে নির্ধারিত স্থানে ক্রেতার কাছে পৌঁছে যায় মোটর সাইকেল। চট্টগ্রামে এভাবে চোরাই মোটর সাইকেলের অনলাইনে জমজমাট বেচাকেনা চলছে। ছোট-বড় অন্তত দশটি সিন্ডিকেট অভিনব এ ব্যবসায় জড়িত রয়েছে। এসব সিন্ডিকেটে রয়েছে মুহূর্তে মোটর সাইকেল হাওয়া করে দেয়ার মত দক্ষ চোর। চোখের পলকেই তারা সড়ক-গ্যারেজ কিংবা বাড়ির সামনে রাখা মোটর সাইকেল হাতিয়ে নেয়। সংঘবদ্ধ মোটর সাইকেল চোরচক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতারের পর গতকাল (বুধবার) তাদের কাছ থেকে এসব তথ্য পেয়েছে পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এর আগে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে বিশেষ করে গ্রামের শো-রুমে বিক্রি হত চোরাই মোটর সাইকেল। তবে ফেসবুক বা অনলাইনে চোরাই মোটর সাইকেল বিক্রির তথ্য প্রথমবারের মত পাওয়া গেল।
চট্টগ্রাম মহানগরী এবং জেলায় প্রতিনিয়তই মোটর সাইকেলর চুরির ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় বেশিরভাগই থানায় মামলা হয়না। থানায় মামলা হওয়ার পর চোরাই মোটর সাইকেল উদ্ধার হয়েছে এমন ঘটনাও কম। আর এ কারণে অনেকে মোটর সাইকেল চুরির পর থানায় কোন অভিযোগ দেন না। আবার অনেক মোটর সাইকেলের বৈধ কাগজপত্র না থাকায় উল্টো হয়রানির ভয়ে চুরি হয়ে যাওয়ার পরও থানা-পুলিশের কাছে যায় না সংশ্লিষ্টরা। এরপরও মহানগরী ও জেলার প্রায় প্রতিটি থানায় অসংখ্য মোটর সাইকেল চুরির মামলা রেকর্ড হচ্ছে।
মহানগরীতে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি মোটর সাইকেল চুরির ঘটনা ঘটে এমন অভিযোগ পাওয়া পর চোর সিন্ডিকেটের সদস্যদের ধরতে মাঠে নামে নগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি বিশেষ টিম। গতকাল ভোর পর্যন্ত টানা ২৪ ঘণ্টার অভিযানে বন্দরনগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে চোরচক্রের পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় দামী আটটি মোটর সাইকেল ও মোটর সাইকেলের যন্ত্রাংশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো মোঃ আরিফ ওরফে গিরাবাজ আরিফ (২৬), মোঃ শাহেদ (২৩), মোঃ ইসমাইল (২৮), মোঃ আমানত উল্লাহ রাব্বী (২২), ও মোঃ ইউসুফ (৩৪)।
এই পাঁচজন মোটর সাইকেল চোরচক্রের সদস্য বলে জানান নগর গেয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পশ্চিম) হুমায়ন কবির। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে চুরি যাওয়া মোটর সাইকেল কেনা-বেচাসহ চুরির সাথে তারা জড়িত। পুলিশ কর্মকর্তা হুমায়ন জানান, গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল বায়েজিদ বোস্তামী এলাকা থেকে দুইটি মোটর সাইকেলসহ প্রথমে ইউসুফকে গ্রেফতার করে। পরে তাকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অন্যদের গ্রেফতার করে আরও ছয়টি মোটর সাইকেল ও একটি চেসিস উদ্ধার করে। উদ্ধার চেসিসটি যে মোটর সাইকেলের তার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করা হয়েছে।
ডিবি কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন বাড়ির গ্যারেজ ও সড়কের পাশে পার্কিং করা মোটর সাইকেল টার্গেট করে তারা। কিছু যন্ত্রপাতি নিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে তারা লক করা মোটর সাইকেল খুলে দ্রæত চালিয়ে নিয়ে যায়। তাদের সিন্ডিকেটে খুব দ্রæত সময়ে মোটর সাইকেল চুরির করার মত একাধিক দক্ষ সদস্য রয়েছে। মাত্র দুই মিনিটেও বাড়ির গ্যারেজ থেকে একটি মোটর সাইকেল চুরির করার অভিজ্ঞতাও রয়েছে এ চক্রের সদস্যদের। চুরির পর মোটর সাইকেল তাদের গোপন আস্তানায় লুকিয়ে রাখা হয়। এরপর মোবাইলে ছবি তুলে তা ফেসবুকে দেয়া হয়। মোটর সাইকেলটি বিক্রি হবে এমন বিজ্ঞাপন তারা নিজেদের ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। ফেসবুকে দেখে ক্রেতারা যোগাযোগ করে এবং দাম দর ঠিক করে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী তা ডেলিভারি দেয়া হয়।
এ চক্রের সদস্যদের প্রায় সকলের একাধিক ফেসবুক আইডি রয়েছে। তারা মূলত চোরাই মোটর সাইকেল বিক্রির জন্য এসব ফেসবুক ব্যবহার করে। ডিবি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, একসময় তারা মহানগরী থেকে চুরি করা মোটর সাইকেল উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন শো-রুমে বিক্রি করতো। পুলিশি অভিযানে কয়েকবার এ ধরনের মোটর সাইকেল ধরা পড়ে। এ কারণে তারা অধিক নিরাপত্তার জন্য অনলাইনে ব্যবসা শুরু করে। এতে মোটর সাইকেল লুকিয়ে রাখা যায় এবং গোপনেই ক্রেতাকে সরবরাহ দেয়া যায়।
ডিবি পুলিশ জানায়, ওই ৫ জন ছাড়াও এ চোরচক্রের সাথে আরও অন্তত ১০ জন জড়িত রয়েছে। তারা গত দুই বছরে অন্তত ৬০টি মোটর সাইকেল চুরি করে এভাবে অনলাইনে বিক্রি করেছে। এ চক্রের মত মহানগর ও জেলায় ছোট-বড় আরও অন্তত ১৫-২০টি মোটর সাইকেল চোর সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে বলে জানান ডিবি পুলিশের কর্মকর্তারা।
এ চক্রের কাছ থেকে উদ্ধারৃত প্রায় সব মোটর সাইকেলই নতুন এবং এগুলোর দাম গড়ে ২ লাখ টাকার বেশি। এদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ৮টি মোটর সাইকেলের মধ্যে রয়েছে একটি লাল, সাদা, গ্রে-কালার ও একটি নীল-সাদা রংয়ের ইয়ামাহা, একটি লাল রংয়ের সুজুকি, একটি লাল-কালো রংয়েল পালসার, একটি নীল-কালো রংয়েল ওয়ালটন ও একটি বাজাজ প্লাটিনা। এছাড়া অপর একটি ইয়ামাহা মোটর সাইকেলের যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করা অবস্থায় চ্যাসিসসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মোঃ আরিফ ওরফে গিরাবাজ আরিফ একটি পেশাদার এই মোটর সাইকেল চোর সিন্ডিকেটের হোতা। সে নিজে মোটর সাইকেল চুরি করে এবং চোরাই মোটর সাইকেল সংগ্রহ করে বিক্রয় করে থাকে। রাব্বি, শাহেদ, ইসমাইল, ইউসুফসহ অন্যরা ইউসুফের সাথে চোরাই মোটর সাইকেল সংগ্রহ করে অনলাইন ফেইসবুক পেইজে বিজ্ঞাপন দেওয়ার মাধ্যমে অন্যান্য এজেন্টদের সহায়তায় ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া, কক্সবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম এলাকায় বিক্রি করে।
তারা জানায়, ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে যে এলাকা থেকে মোটর সাইকেল চুরি করা হয় সে এলাকার ক্রেতাদের কাছে তা বিক্রি করা হয় না। চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে চুরি করা মোটর সাইকেল বিক্রি করা হয় চট্টগ্রাম জেলা বা দেশের অন্য জেলার ক্রেতাদের কাছে। আবার জেলা বিভিন্ন এলাকা থেকে চুরি করা মোটর সাইকেল বিক্রি করা হয় মহানগরীর ক্রেতাদের কাছে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে বায়েজীদ বোস্তামী থানায় নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মোটর সাইকেল চুরি এবং চোরাই মোটর সাইকেল বিক্রি সহজ হওয়ায় অনেকেই এ অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এর আগে চোরাই মোটর সাইকেলসহ নগরীতে বেশ কয়েকজন কলেজ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম অঞ্চলে চলাচলরত বেশিরভাগ মোটর সাইকেলের রেজিস্ট্রেশন বা বৈধ কাগজপত্র নেই। আর এ সুযোগে চোরাই মোটর সাইকেলও বিক্রি হচ্ছে অবাধে। সহজে বিক্রির সুযোগ থাকায় অপরাধীরাও মোটর সাইকেল চুরি করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ