বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
চট্টগ্রাম ব্যুরো : ‘স্যার আপনার ফোন ধরার সময় কই? এক এমপিকে লাইনে রেখে মন্ত্রীর সাথে কথা বলছি, এখন বলেন স্যার কেন ফোন দিয়েছেন।’ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) খুলশী থানার ওসি থাকাকালে পুলিশ পরিদর্শকের মাইনুল ইসলাম ভূইয়া সিএমপির তৎকালীন এক উপ-কমিশনারের (ডিসি) সাথে এভাবেই কথা বলেন। ওসির আচরণে বিব্রত ডিসি সাথে সাথে ফোনটি কেটে দেন। এরপর সিএমপি কমিশনারের কাছে আবেদন করে ওই জোন থেকে অন্য জোনে বদলি হয়ে যান ওই ডিসি।
‘ক্ষমতাধর’ ওই মাইনুল এখন কোন থানার ওসি নন। পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে দামপাড়া পুলিশ লাইনে সংযুক্ত আছেন তিনি। কিন্তু এরপরও তার দাপট কমেনি এতটুকু। একের পর এক কান্ড ঘটিয়েই চলেছেন তিনি। এতে বিব্রত সিএমপির কর্মকর্তারা। সর্বশেষ মদ্যপ অবস্থায় নগরীর একটি হোটেলে লঙ্কাকান্ড ঘটিয়েছেন তিনি। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্তে কি বেরিয়ে আসে আর কি ব্যবস্থাই বা নেয়া হবে ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তা দেখার অপেক্ষায় সবাই। এর আগেও একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে পার পেয়ে যান মাইনুল। তার বিরুদ্ধে কখনোই কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। চসিক নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে খুলশী থানার ওসি থেকে তাকে সরিয়ে ডিবিতে নেয়া হয়। নির্বাচন শেষ হওয়ার সাথে সাথে তাকে সদরঘাট থানার ওসি করা হয়। সেখানে তিনি যুবলীগের এক নেতাকে সস্ত্রীকে হোটেল থেকে তুলে এনে থানায় বেঁধে মারধর করে। এ ঘটনায় থানায় ভাঙচুর করে ছাত্রলীগ যুবলীগের কর্মীরা। তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়। এরপর আওয়ামী লীগ নেতাদের হাতে-পায়ে ধরে ওই মামলার আপোষ করেন তিনি। পরে তাকে ওই থানা থেকে প্রত্যাহার করে দামপাড়া পুলিশ লাইনে সংয্ক্তু করা হয়। জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত অভিজাত খুলশী এলাকার একটি বাড়িতে গেস্ট হাউসের নামে মদ ইয়াবার আসর থেকে অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকা অবস্থায় একদল তরুণ-তরুণীকে আটক করে। গেস্ট হাউসের নামে ওই মাদক আর যৌনতার আসর বাণিজ্যের নেপথ্যে ছিলেন মাইনুল ইসলাম। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, মাইনুল ইসলাম ওই গেস্ট হাউসের মালিক। ওই ঘটনায়ও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
সিএমপির কমিশনার ইকবাল বাহার বলছেন, নগরীর সেন্টমার্টিন হোটেলে যে ঘটনা ঘটেছে তা তদন্ত করতে তিন সদস্যের কমিটি হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাবেক ওসি মাইনুল ইসলাম ভূইয়ার বিরুদ্ধে মদ্যপ অবস্থায় আগ্রাবাদস্থ হোটেল সেন্টমার্টিনের রুম বয়কে মারধরের অভিযোগ উঠে। পুলিশ জানায়, ওই হোটেলের একটি কক্ষ ভাড়া করে মদপান করতে যান মাইনুল। মধ্যরাতে বিদেশী ব্রান্ডের একটি মদের অর্ডার দেন তিনি। সেটি দিতে না পারায় রুম বয়কে মারধর করেন মাইনুল। হোটেলের এক নিরাপত্তা কর্মীকেও মারধর করেন তিনি।
এরপর তিনি হোটেল থেকে বের হয়ে হোটেলের সামনে কর্তব্যরত ডবলমুরিং থানার এক এসআইকে মারধর করেন। ওই এসআইয়ের চাকরি খাওয়ারও হুমকি দেন তিনি। মারধরের শিকার এসআই সৈয়দ আলম ঘটনাটি ওই রাতেই সিএমপির ডিসিকে জানান। ডিসির নির্দেশে ডবলমুরিং থানার কর্মকর্তারা হোটেলে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পান। তারা হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেন।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে বুধবার সিএমপির পক্ষ থেকে অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পশ্চিম) নাজমুল হাসানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেন সিএমপির কমিশনার ইকবাল বাহার। কমিটিতে ডবলমুরিং জোনের সহকারী কমিশনার ও ডিবি পুলিশের একজন পরিদর্শককে সদস্য করা হয়। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। সিএমপি কর্মকর্তারা জানান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক এক নেতার পুত্র হওয়ার সুবাদে নিজেকে সরকারি দলের কাছে লোক দাবি করে একের পর এক দাপট চালিয়ে আসছেন মাইনুল ইসলাম। তার দাপটের কাছে পুলিশের সিনিয়র অনেক কর্মকর্তাও অসহায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।