Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসীর বহুল প্রতীক্ষিত গ্যাস আসা শুরু

ভেড়ামারায় গ্যাসে চলছে ৩৬০ মে: বিদ্যুৎ কেন্দ্র খুলনার কেন্দ্রে ২২৫ মে: প্রক্রিয়াধীন

| প্রকাশের সময় : ৭ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা, খুলনা : দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসীর বহুল প্রতিক্ষিত গ্যাস আসতে শুরু করেছে। হাটিকুমরুল- কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা-খুলনা গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন প্রকল্প চালু হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানে সরবরাহের লক্ষ্যে খুলনা মহানগরীর আড়ংঘাটা সিজিএস (চাপ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র) পর্যন্ত এসেছে গ্যাস। গ্যাস দিয়ে বর্তমানে চলছে ভেড়ামারার ৩৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এখন সংযোগ দেবার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে খুলনার ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। পর্যায়ক্রমে গ্যাসভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠানে তা সরবরাহ করা হবে। অন্যদিকে, খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ প্রকল্প বন্ধ হওয়ার কারণে ১৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা ২ থেকে ২০ ইঞ্চি পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাসের পাইপ খোলা আকাশের নিচে থেকে মরিচা পড়ছে।
সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি ও জিপিসিএল’র সূত্রে জানা যায়, কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই গত ৭ মার্চ খুলনার আড়ংঘাটা সিজিএস পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ করা হয়। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে খুলনার আড়ংঘাটা পর্যন্ত ১৬৫ কিলোমিটার পাইপলাইন কমিশনিং করা হয়। এই গ্যাস বাণিজ্যিকভাবে বিতরণ করবে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি । এ গ্যাস ভেড়ামারার ৩৬০ মেগাওয়াট একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সংযোগ দেয়া হয়েছে। এখানে প্রতিদিন প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে। তবে ভেড়ামারা থেকে আড়ংঘাটা সিজিএস পর্যন্ত পাইপলাইনে গ্যাস আনা হলেও চার মাসেও খুলনার কোন বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগ দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে নগরীর খালিশপুর এলাকায় অবস্থিত পিডিবি নিয়ন্ত্রিত নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেল কোম্পানি লিমিটেডের (এনডবিøউপিজিসিএল) ২২৫ মেগাওয়া ডুয়েল-ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেলিং বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সংযোগ দেয়ার কথা রয়েছে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে গ্যাস সংযোগ দেয়ার জন্য সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি টেন্ডার আহŸান করেও তা বাতিল করেছে। পুনরায় টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এ কেন্দ্রটিতে গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল একটি সূত্রে জানা যায়, গত মার্চে খুলনায় পাইপ লাইনে গ্যাস আসলেও সেটি ভেড়ামারা সিজিএস থেকে এখন সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। খুলনার কোন প্রতিষ্ঠানের এখনও গ্যাস সংযোগ দিতে না পারার কারণে এটি বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে এখানকার কোন প্রতিষ্ঠানে গ্যাস প্রয়োজন হলে ভেড়ামারা সিজিএস থেকে পুনরায় গ্যাস সরবরাহ করা হবে বলে তারা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস নেটওয়ার্ক প্রকল্পের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে পাইপগুলো কেনা হয়েছিল। প্রকল্পের আওতায় খুলনাসহ ৫টি শহরে গ্যাস বিতরণ নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য ৮৪৫কিলোমিটার পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহের কথা ছিল। এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এই প্রকল্পে অর্থায়ন করেছিলো। তখন এডিবির পরামর্শে দুই দফায় দরপত্র সংশোধন করা হয়। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে দরপত্র প্রক্রিয়া শেষে কাজ পায় চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লিওরিন নর্দান। তারা চীনেই পাইপগুলো তৈরি করে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে খুলনায় নিয়ে আসে। এতে ব্যয় হয় ১৪৭ কোটি টাকা। আবাসিকে গ্যাস সংযোগ প্রদানের পরিকল্পনা থেকে সরকার সরে আসায় ২০১৬ সালের ৩০জুন খুলনায় গ্যাস বিতরণ প্রকল্পটি বন্ধ করে দেয় জ্বালানি মন্ত্রণালয়। এসব পাইপ এখন খুলনার শিরোমনি এলাকায় ভাড়া নেয়া একটি জমিতে এসব পাইপগুলো খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়েছে। এখন এতে মরিচা পড়ছে।
জিপিসিএল’র ডেপুটি ম্যানেজার সুমন মল্লি¬ক বলেন, খুলনা এখন গ্যাস পৌঁছেছে। গত ৭ মার্চ ভেড়ামারা থেকে খুলনা পর্যন্ত প্রায় ১৬৫ কিলোমিটার পাইপ লাইনে গ্যাস কমিশনিং করা হয়েছে। সুন্দরবন সংলগ্ন এ অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস বিতরণ করবে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি। জিপিসিএল গ্যাস দেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
গ্যাস সংযোগের বিষয়ে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার খালিকুজ্জামান রতন জানান, খুলনায় গ্যাস এসেছে। প্রথম অবস্থায় এই গ্যাস শুধু বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে সংযোগ দেয়া হবে। এখন খালিশপুরে অবস্থিত ২২৫ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সংযোগ দেয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এ জন্য এক দফা টেন্ডার আহŸান করা হয়। তবে সেটি বাতিল করা হয়েছে। পুনরায় টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে এ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
প্রকল্পের পরিচালক ও পিডিবির সিনিয়র জেনালে ম্যানেজার এসএম রেজাউল ইসলাম বলেন, খুলনা পর্যন্ত পাইপ লাইনে গ্যাস পৌঁছেছে। এই গ্যাস বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বিতরণ করা হবে। ভেড়ামারার ৩৬০ মেগাওয়াট একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে। খুলনার ২২৫ মেগাওয়াট ডুয়েল-ফুয়েল কম্পাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আবাসিকে সংযোগ দেয়ার জন্যই পাইপগুলো কেনা হয়েছিল। তবে প্রকল্পটি বাতিল হওয়ার কারণে পাইপগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এসব পাইপের গুণগতমান নষ্ট হবে না। এগুলো বিক্রি করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ