Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার সকলের কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে -মির্জা ফখরুল

| প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচনকে নিরপেক্ষ, ইনক্লুসিভ এবং সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতেই আমরা নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের কথা বলেছি। খুব শিগগিরিই আমাদের নেত্রী (খালেদা জিয়া) সহায়ক সরকারের ব্যাপারে প্রস্তাব নিয়ে জনগণের কাছে আসবেন। নির্বাচনকালীন এই সহায়ক সরকারের প্রস্তাব সকলের কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। গতকাল (বুধবার) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি একথা বলেন। আগামী নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট সংকট সমঝোতার মাধ্যমেই ‘বরফ’ গলবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি কিন্তু আশাবাদী মানুষ। আমি প্রতিমুহুর্তে আশা করি যে, গুড খিংকস উইল কাম আউট, ভালো জিনিস আসবেই। বরফ তো গলানো একদিনে নাও হতে পারে, নাও গলতে পারে, গলতেও পারে। তবে আমি আশাবাদী যে বরফ গলতে হবে। তা না হলে এই ধরণের স্ট্যালমেন্ট থাকতে পারে না। এটা বিজ্ঞানও বলে না, রাষ্ট্রবিজ্ঞানও বলে না। আমি বিশ্বাস করি, শেষ পর্যন্ত শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। আলোচনার মধ্য দিয়ে একটা সমঝোতার রাস্তা বের হবে। সংকট উত্তরণ না ঘটলে এর দায় ক্ষমতাসীনদের নিতে হবে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সঙ্কটের উত্তোরণ না ঘটলে প্রাইজ পে করতে হবে তাদেরকে (সরকার), দায়টা তাদের ওপর বর্তাবে। সংকট উত্তরণে বিএনপির পক্ষ থেকে করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা তো অপজিশনে। তাও সংসদে নেই। আমরা যা যা করা দরকার বলে দিয়েছি। এখন আপনি সেটা গ্রহণ করবেন কিনা কতটুক গ্রহণ করবে, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টা ঠিক করুন।
এজন্য সংলাপের প্রয়োজন উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, আমরা তো বার বার সংলাপের কথা বলছি। আমরা বার বার বলছি যে সেভ দ্য কান্ট্রি, সেভ দ্য নেশন। এটা করতে হলে অবশ্যই বিরোধী দলের সাথে আলোচনা করতে হবে, বসতে হবে। আপনারা দেখতে চাইবেন না, উটপাখির মতো মরুভুমিতে ঝড় আসলে বালুর তলে ঢুকিয়ে দেবেন-এটাতে ঝড় যাবে না। অন্ধ হলে কী প্রলয় বন্ধ হবে? হবে না। এদেশের ইতিহাসে দেখবেন বহুবার আলোচনা হয়েছে। আলোচনা করেই সব ঠিক-ঠাক হয়েছে। আপনাদের নেতা আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খানের সাথে গোল টেবিল করে নাই। বহুদিন পর্যন্ত তখন আলোচনা হয়েছে। কেনো হবে না?
সহায়ক সরকারের প্রস্তাব আসছে
খুব শিগগিরিই সহায়ক সরকারের প্রস্তাব দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে জাতির সামনে প্রস্তাব তুলে ধরেছি, আমরা নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে প্রস্তাব দিয়েছি। নির্বাচনের সময়ে সেনা বাহিনীর ভুমিকা কী হওয়া উচিৎ, আমরা বলেছি। এখানে গোপন কিছু নেই। নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও ইনক্লুসিভ এবং সকল দল অংশগ্রহন করতে পারে তার জন্য নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের কথা বলে দিয়েছি। খুব শিগগিরিই আমাদের নেত্রী সহায়ক সরকারের ব্যাপারে প্রস্তাব নিয়ে জনগণের কাছে আসবেন। আমরা মনে করি, তা সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য হবে। মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশন যদি শক্তিশালী হয়ে যায় তাহলে কিন্তু এই সমস্যা থাকে না। আমরা বলেছি, কোন কোন মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের কাছে যাওয়া উচিত, কীভাবে দেশ পরিচালনা হবে- সেই জায়গাগুলো থেকে সরকার সরে গেছে। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তারা ক্ষমতায় ধরে রাখতে চায়। তারা বুঝে গেছেন স্বাভাবিক অবস্থায় নির্বাচন হলে তারা ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারবে না। না পারলে কী করতে হবে, তা তাদের সাধারণ সম্পাদকই (ওবায়দুল কাদের) বলেছেন।
দেশে এখন গণতন্ত্রের কোন জায়গা নাই জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে এখন গণতন্ত্র নাই, গণতান্ত্রিক কোনো স্পেসই নাই। ইচ্ছা করলে কী আমি সভা করতে পারবো, ইচ্ছা করলে কী আমি কথা বলতে পারবো, ইচ্ছা করলে কী আমি ত্রান দিতে যেতে পারবো, পারবো না। এই অবস্থাগুলো আপনারা কীভাবে দেখবেন? উনারা কী চান আমি বুঝতে পারি না, সরকার আসলে কী চায়? তারা কী এখানে একটা আফগানিস্তানের মতো হামিদ কারজাই মার্কা সরকার চালাতে চান, তারা কি এখানে একটা লিবিয়া, ইরাক বা সিরিয়ার মতো সরকার চালাতে চান। আমরা বলতে চাই, এটা বাংলাদেশে সম্ভব হবে না। কারণ এদেশের মানুষ ২শ বছর যাবত ডেমোক্রেটিক মাইন্ডের, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছে, মুক্তিযুদ্ধ করেছে। ইট ইজ নট পাকিস্তান, এটা আফগানিস্তানও না। এখানের মানুষ অত্যন্ত সচেতন, গণতন্ত্রের জন্য তারা যুদ্ধ করেছে। ’৭৯ এর নির্বাচনে বিজয়ের পর ‘শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রীত্ব দেয়া হয়নি, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা দেয়া হয়নি বলেই আমরা নেমে পড়েছি আমাদের অধিকার রক্ষার জন্য- এটা বাস্তবতা। গণতন্ত্রের জন্য আমরা করেছি’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার আফটার লিবারেশন ওই দলটি, ওই মানুষগুলো আমাদের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। কোথায় যাবো আমরা? এজন্য আমরা বুঝি লড়াই করতে হবে, যুদ্ধ করতে হবে যতদিন পর্যন্ত জয়ী না হওয়া যায় সেই যুদ্ধ চলতে থাকবে।
ষোড়শ সংশোধনী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের দেশের পলিটিক্যাল কালচার অনুযায়ী, আমাদের দেশের পলিটিক্যাল হিস্ট্রি অনুযায়ী এখন পর্য়ন্ত সংবিধানের অন্যান্য যে জায়গাগুলো আছে সব মিলিয়ে সংসদের হাতে যদি ক্ষমতা দেয়া হয় তাহলে নিসন্দেহে সেটা দলীয় ক্ষমতা চলে যাবে। সেখানে আপনি কোনো নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। সেই কারণে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পঞ্চম সংশোধনী নিয়ে আসলেন, একটা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল হবে, সেই কাউন্সিল দায়িত্বটা পালন করবেন। সেটা তো ছিলোই। এমনকি পঞ্চদশ সংশোধনীতেও এরা (আওয়ামী লীগ সরকার) বদলায়নি। সবাই এটা গ্রহণ করে নিয়েছিলো। তিনি বলেন, যখন ক্ষমতাসীনরা দেখলেন যে শক্ত হচ্ছে না বাঁধন, বাঁধন দিতে গিয়ে তারা এটা (ষোড়শ সংশোধনী) করলেন। কথা আছে না যে, ম্যান প্রপোজেস গড ডিসপোজেস। বাঁধন যত শক্ত হবে, ততই কিন্তু বাঁধন ছেঁড়ার প্রবনতা বাড়তে থাকবে। এটাই বাস্তবতা। ফখরুল বলেন, যখন এই ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতিদের অভিশংসনের বিষয়ে একতরফাভাবে দায়িত্ব দিলো সংসদকে, তখন আমরা আতঙ্কিত হয়ে উঠেছিলাম যে, বিচারকরা কেউ কিছু সাহস করে সঠিক জায়গায় আসতে পারবেন কিনা সন্দেহ থাকবে। সেদিক থেকে আমি মনে করি এই রায় ওয়ান স্ট্যাপ ফরওয়ার্ড। তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের বিষয়টা কিছুটা হয়ত আসলো কিন্তু নিম্ন আদালতে তো একই অবস্থা রয়ে গেছে। সুপ্রিম কোটের বিচারপতি চাচ্ছেন তোমরা নিম্ন আদালতের সিনিয়রিটি ও নিয়োগের বিষয়টা আমাদের কাছে নিয়ে আসছো না কেনো? কয়েকবছর হয়ে গেলো এখনো তা আনা হয়নি। আমরা যারা রাজনীতি করছি, তারা জানি সরকার কিভাবে নিম্ন আদালতের ওপর প্রভাব বিস্তার করছে। আজকেই আমি আদালতে গিয়েছিলাম। আমাকে বারের আইনজীবীরা বললেন, গত ১৫দিন ধরে যারা দল করে, দলের পদে আছেন তাদেরকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। এটা রিসেন্ট ডেভেলপমেন্ট। কি করবো, আর কী বাকী রয়েছেন। আমার বিরুদ্ধে ৮৬টা মামলায় ৩৬টার চার্জশিট হয়ে গেছে। আমাদের নেত্রীকে প্রতি সাপ্তাহে আদালতে যেতে হয়, কী অপরাধ তার? কার কাছে বলব, কোথায় যাবো?
ফরহাদ মজহারের অপহরণ অবিশ্বাস্য: ফরহাদ মজহারের অপহরণের ঘটনাকে অবিশ্বাস্য উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা কেউই কোনোদিন চিন্তাও করিনি যে, কবি ফরহাদ মজহারের মতো মানুষকে গুম করা হলো, অপহরণ করে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো- এটা একেবারে অবিশ্বাস্য একটা ব্যাপার। যখনই সরকারের বিরুদ্ধে কোনো ঘটনা ঘটেছে, ষোড়শ সংশোধনীর রায়টা যেদিন হলো তারপরেই কিন্তু এই অপহরণের ঘটনা ঘটলো। অর্থাৎ ডাইভারশন জনদৃষ্টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করা। এটা আমাদের ধারণা থেকে বলছি। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে এরকম ঘটনা ঘটছে। ফরহাদ মজহারের অপহরণের বিষয়ে পুলিশের দেয়া ভাষ্যকে ‘হাস্যকর’ বলে তার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ওই ঘটনার পুলিশ যেভাবে কথা বলছেন, তাতে করে মনে হচ্ছে যে, অপরাধটা মনে হয় ফরহাদ মজহারেরি। আজকে (গতকাল) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল খাঁন বলেছেন, ফরহাদ মজহারেরর কোনো দোষ আমরা এখনো খুঁজে পাইনি। ওয়াট ডাজ ইন মিন বাই দেট। যে মানুষটাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো এবং কতগুলো ঘন্টা তার সেই মৃত্যুর মুখোমুখি উনি দাঁড়িয়ে থাকলেন, কালো মাস্ক পরিয়ে তাকে আটকিয়ে রাখা হলো, বিভিন্ন জায়গা ঘুরানো হলো, তাকে দিয়ে বলানো হলো টাকা দাও, অমুক করো, তমুক করো। তারপর উনি (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী) বলছেন, এখন পর্যন্ত কোনো দোষ আমরা খুঁজে পাইনি। কী মিন করতে চান তিনি। এসময় দলের নেতা এম ইলিয়াস আলী, মহানগর নেতা চৌধুরী আলমসহ গত কয়েকবছরে দলের ৫‘শ নেতা-কর্মী নিখোঁজ হওয়ার কথাও তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। ২৩ জুন অস্ট্রেলিয়ার ক্ষমতাসীন দল লিবারেল পার্টির আমন্ত্রণে পার্টির ৫৯তম ফেডারেল কনভেনশনে যোগদানের পর গত সোমবার বিএনপি মহাসচিব ঢাকা ফেরেন। এরপর এটাই প্রথম মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ