Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আমদানি শুল্ক ছাড় সুবিধা বাজারে নিম্নমানের চাল

| প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হাসান সোহেল : আমদানি শুল্ক ছাড়ের সুবিধা নিয়ে নিম্নমানের চাল আমদানি করার অভিযোগ উঠেছে। দেশে স্থিতিশীল খাদ্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখাসহ খাদ্য ঘাটতি পূরণে সরকার চলতি অর্থ বছরে বিদেশ থেকে ১০ থেকে ১৫ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এখন পর্যন্ত ভারত ও মিয়ানমার থেকে ৪০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া সরকারিভাবে চাল আমদানিতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল গতকাল বুধবার থাইল্যান্ড গেছেন। বিক্রেতারা বলছেন, আমদানি করা এ সব চালের চেয়ে, দেশি চালের প্রতিই আগ্রহ বেশি ক্রেতাদের। কৃষি বিশেষজ্ঞদের দাবি, বোরো মৌসুমে উৎপাদিত চাল দিয়ে কমপক্ষে ৬ মাস চলা সম্ভব ছিলো। তাই নিম্নমানের চালের আমদানি ঠেকাতে, কঠোর পদক্ষেপের পরামর্শ তাদের। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃষককে ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করতে, ন্যায্য মূল্য দেয়ার কোনো বিকল্প নেই। কেননা বিশ্বের উৎপাদিত চালের মাত্র ৯ ভাগ আন্তর্জাতিক বাজারে আসে, যা দিয়ে সব সময় ঘাটতি পূরণ সম্ভব নাও হতে পারে। তাই খাদ্য নিরাপত্তার কথা ভেবেই, খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনার পরামর্শ তাদের। দেশে বছরে মোট চালের চাহিদা তিন কোটি টনের কিছু বেশি।
এদিকে চাল আমদানি শুল্ক কমানোর সুফল মিলছে না বাজারে। ভারত থেকে কম শুল্কে চাল আমদানি হলেও তেমন প্রভাব পড়েনি দামে। পাইকারি পর্যায়ে চালের দাম কমেছে মাত্র ২/৩ টাকা। চাল আমদানিকারকদের অভিযোগ, বাংলাদেশে ঘাটতির সুযোগ নিয়ে চালের দাম টন প্রতি ৩৫ ডলার বাড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। ফলে আমদানি শুল্ক কমানোর সুফল মিলছে না বাজারে।
সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বলছেন, চাল আমদানিতে শুল্ক কমানো হলেও, আশঙ্কা রয়েছে তা অপব্যবহারের। তার মতে, এতে চালের দাম আর কমবে না, বরং নিম্নমানের চাল আমদানির মাধ্যমে লাভবান হবে ব্যবসায়ীরা। আর ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বাংলার কৃষক।
সূত্র মতে, প্রতিবছর বোরো মৌসুমের শুরুতে চালের দাম কমলেও, এবারের চিত্র উল্টো। কারণ হিসেবে এসেছে কম উৎপাদন, সেই সাথে সরকারের মুজত ঘাটতি। অথচ কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, এবার ২ কোটি টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে, চালের উৎপাদন ১ কোটি ৯০ লাখ টন। যা মৌসুমের মোট চাহিদার তুলনায়, প্রায় দ্বিগুন। কিন্তু বিস্ময়করভাবে গেল তিন মাসে প্রতি কেজিতে চালের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। যার প্রকৃত কারণ না খুঁজেই, সরকার ভরসা রেখেছে আমদানিতে। দেশের খোলাবাজারে চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে গত ২০ জুন চালের আমদানি শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ১০ শতাংশ। সেইসাথে ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক পুরোপুরি তুলে নেয়া হয়। এতে প্রতি কেজি চালের দাম ৬-৭ টাকা কমবে-এমনটা আশা প্রকাশ করা হয় সরকারের পক্ষ থেকে। তবে বাস্তবে চালের দাম কেজিতে কমেছে ২/৩ টাকা।
সূত্র মতে, এখন পর্যন্ত ভারত ও মিয়ানমার থেকে ৪০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আরও চাল আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। রাজধানীর মহাখালী, কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষিমার্কেটসহ বিভিন্ন চালের বাজারে মিলছে এসব চাল। এদিকে সরকারিভাবে চাল আমদানিতে গতকাল বুধবার থাইল্যান্ডে গেছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দুই সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলে আছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্তি সচিব মো. আতাউর রহমান এবং খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ বদরুল হাসান।
কারওয়ান বাজারের চাল ক্রয় করতে আসা ইসমাঈল হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, ভেবেছিলাম সরকার চাল আমদানি করলে চালের দাম কমবে। কিন্তু বাজারে মোটা চাল ছাড়া অন্য কোন চালের দামই কমেনি। তাও কেজি ২/৩ টাকা কমেছে। তবে আমদানিকৃত মোটা চাল খুবই নিম্নমানের বলে উল্রেখ করেন তিনি। কারওয়ান বাজারের চাটখিল রাইসের স্বত্তাধিকারী বিল্লাল হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, ভারত থেকে চাল আমদানিতে মোটা চালে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। ২/৩ টাকা দাম কমেছে। তিনি বলেন, মোটা স্বর্ণা চালটাই বাজারে বেশি প্রবেশ করেছে। তবে ভারত থেকে ভালো মানের চাল আসছে না। তিনি জানান, আমি নওগাঁ বর্ডার থেকে ভারতীয় ৩০ টন আতপ চাল এনেছি। এই চালের মধ্যে ৬ টন চালই বিক্রির অনুপযোগী। ওরা কিছু ভালো চালের মধ্যে নিম্নমানের চাল দিয়ে দিচ্ছে। এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন চালের বাজারের বিক্রেতারাও বলছেন, আমদানি করা চাল সিদ্ধ হতে সময় নেয়, তাই ক্রেতাদের আগ্রহ দেশি চালেই। এছাড়া কিছু নিম্নমানের চাল বাজারে প্রবেশ করেছে।
এক পাইকারি বিক্রেতা বলেন, সরকার আমাদের বললো যে, ৬ টাকা কেজিতে কমালাম কিন্তু ভারত এখন ৬ টাকা কেজিতে বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা আসলে খুবই বিব্রত অবস্থায় আছি। দেশীয় চাল আমদানিকারকদের অভিযোগ বাংলাদেশে চালের আমদানি শুল্ক কমিয়ে দেয়ার খবরে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে ভারতের ব্যবসায়ীরা। প্রতি টন চাল ৩৯০ ডলারের পরিবর্তে আমদানি করতে হচ্ছে ৪২৫ ডলারে। চালের আমদানি শুল্ক কমার পর হিলি স্থলবন্দর দিয়ে গত ৭ কর্ম দিবসে ভারত থেকে ২১ হাজার ২৮০ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে।
খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বদরুল হাসান বলেছেন, প্রাথমিকভাবে আমাদের ৬ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। তবে খাদ্য ঘাটতি পূরণে এই আমদানির পরিমাণ ১০ থেকে ১৫ মেট্রিক টনে বাড়তে পারে। বদরুল হাসান বলেন, এই পরিকল্পনার আওতায় ভিয়েতনাম থেকে সরকার টু সরকার ভিত্তিতে প্রতি টন চাল ৪৩০ থেকে ৪৭০ মার্কিন ডলার মূল্যে প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি করা হবে। তিনি বলেন, আগামী ১২ জুলাইয়ের মধ্যে আমদানির প্রথম চালানটি দেশে এসে পৌঁছবে। এছাড়াও আরো দেড় লাখ টন চাল আমদানির জন্য সরকার টেন্ডার আহ্বান করেছে উল্লেখ করেছেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চাল

১১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ