Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পশ্চিমবঙ্গে গোষ্ঠিগত হামলার প্রভাব পড়েছে ভোমরা স্থলবন্দরে দুদিনে দু’কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত আতঙ্কিত পাসপোর্ট যাত্রীরা

| প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, সাতক্ষীরা থেকে : ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গোষ্ঠিগত হামলার প্রভাব পড়েছে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দরে। দুদিনে প্রায় দু কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার। ব্যবসায়ীদের দুঃচিন্তার পাশাপাশি ভয়ে আতংকিত হয়ে পড়েছেন পাসপোর্ট যাত্রীরা। ভোমরা বন্দরের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ফেইস বুকে একটি ছবি পোস্ট করাকে কেন্দ্র করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার বশিরহাট, দেগঙ্গা, বাদুড়িয়া ও স্বরুপনগর থানার বিভিন্ন গ্রামে গোষ্ঠিগত হামলা শুরু হয়েছে। গত সোমবার বিকালে এই হামলা ছোট আকারে শুরু হলেও মঙ্গলবার সকাল থেকে তা ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। বারাসাত থেকে বসিরহাট পর্যন্ত সকল ট্রেন, বাস, টেম্পু, অটোরিক্সা বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ থাকে অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল কলেজসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। দুদেশের পাসপোর্ট যাত্রীসহ সেদেশের নাগরিকা আটকে পড়েন। দফায় দফায় গোষ্ঠিগত হামল্-াভাংচুর ও জ্বালাও পোড়ার কারণে গত মঙ্গলবার কোন পণ্যবাহি ট্রাক ভারত থেকে ভোমরা বন্দরে প্রবেশ করতে পারেনি। এছাড়া, ভয়ে আতংকিত হয়ে ওই দিন কোন পাসপোর্ট যাত্রী দুদেশের মধ্যে আসা-যাওয়া করেননি। শত শত যাত্রী ভোমরা কাষ্টমস-–ই¤্রগিশন থেকে ফিরে এসেছেন।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে যেয়ে দেখা গেছে, কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনের চিত্র ছিলো অনেকটা মঙ্গলবারের দিনের মতো। যদিও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোন কোন পাসপোর্ট যাত্রী ভারতে যাচ্ছেন। আবার দু-একজন করে ভারত থেকে নিজ দেশে ফিরছেন। যারা যাচ্ছেন এবং ফিরছেন, তাদের চোখে মুখে রয়েছে একটা অজানা আতংকের ছাপ। আবার কেউ কেউ কাষ্টমস অফিসের সামনে থেকে ফিরেও আসছেন নিজ বাড়িতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারত থেকে আসা কয়েকজন পাসপোর্ট যাত্রী জানিয়েছেন, কোন রকমে জীবন নিয়ে দেশে ফিরে আসতে পেরেছি তার জন্য আল্লাহকে ধন্যবাদ। তারা জানান, সকালে কলকাতা থেকে ট্রেনে উঠি বশিরহাট আসার জন্য। ট্রেনটি বারাসাত আসার পর অবরোধের মুখে পড়ে সেখানেই থমকে দাঁড়ায়। নিরুপায় হয়ে বারাসাত থেকে বাসে উঠে পড়ি। কিন্তু বেড়াচাপা নামক স্থানে আসার পর গোষ্ঠিগত হামলার মুখে পড়ে বাসটি। যাত্রীরা প্রাণ ভয়ে বাস থেকে নেমে দৌড়ে আশে পাশের বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরে প্রশাসনের সহায়তায় ভ্যান যোগে বশিরহাট আসেন। সেখান থেকে ভ্যান যোগে ঘোজাডাঙ্গা দিয়ে ভোমরায় প্রবেশ করেন। তারা আরো বলেন, বশিরহাট বা অন্যান্য স্থানে যুবকদের হঠাৎ হঠাৎ আক্রমনের ফলে সাধারণ মানুষ পথে বের হচ্ছেন না। সেখানে স্কুল-কলেজ,দোকানপাট-ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান সব বন্ধ রয়েছে।
ভোমরা শুল্ক স্টেশনের এক কর্মকর্তা জানান, পশ্চিমবঙ্গের বশিরহাট, দেগঙ্গা, স্বরুপনগর ও বাদুড়িয়া থানার কয়েক গ্রামে গোষ্ঠিগত সংঘর্ষের প্রভাব পড়েছে বন্দরে। তিনি বলেন, মঙ্গলবার কোন পাসপোর্ট যাত্রী যাওয়া-আসা করেনি। আনেক যাত্রী ভয়ে এখান থেকে ফিরে গেছেন। তিনি বলেন, গতকাল বুধবার অল্প সংখ্যক যাত্রী যাওয়া-আসা করছেন। তিনি বলেন, শুধু যাত্রী অসুবিধা নয়, ব্যবসায়ীরা দুঃচিন্তায় পড়েছেন। মঙ্গলবার কোন পণ্যবাহি গাড়ি এদেশে আসেনি।
আর কোন গাড়ি ভারতেও ঢুকতে পারেনি। বুধবারও প্রায় একই আবস্থা। আগে থেকেই ঘোজাডাঙ্গায় থাকা কয়েকটি মাছ ও পেঁয়াজের গাড়ি ভোমরায় এসেছে। গাড়িতে থাকা মাছ ও পেয়াজে পচা গন্ধ বের হচ্ছে। তিনি বলেন, দু’দিনে প্রায় দুই কোটি টাকার রাজস্ব থেকে সরকার বঞ্চিত হয়েছেন। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ঈদের লম্বা ছুটি’র পর ভারতের সার্ভার সমস্যা এবং সেদেশের গোষ্ঠিগত সংঘর্ষে বন্দরের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। তিনি চান এর দ্রুত সমাধান হোক। আগের মতো বা তার চেয়ে ভালো ব্যবসা বন্দরে হোক। পাসপোর্ট যাত্রীরা নির্ভয়ে চলাচল করুক। রাজস্ব আয় বাড়তি হোক। দু’দেশের মানুষ শান্তিতে থাকুক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ