বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় খুশি ব্যবসায়ীরা
রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস চব্বিশ ঘণ্টা খোলা রাখার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্দেশনা পাওয়ার সাথে সাথে রাত-দিন চব্বিশ ঘণ্টা কার্যক্রম পরিচালনা করবে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠান। তবে সিংহভাগ রাজস্ব আদায়কারী চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস সার্বক্ষণিক চালু রাখার ক্ষেত্রে জনবলের তীব্র সংকট প্রধান বাধা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট। এর পাশাপাশি পুরোপুরি অটোমেশান না হওয়া এবং কাস্টম হাউসে অপ্রতুল অবকাঠামোকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখছেন কর্মকর্তারা। এরপরও সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সার্বক্ষণিক সেবা চালু রাখার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে।
রোববার সচিবদের সাথে সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বিক আমদানি-রফতানির সুবিধার্থে দেশের প্রধান রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার নির্দেশ দেন। ওই সভায় চট্টগ্রাম বন্দরে মালামাল আমদানি-রফতানির কাজে ২৪ ঘণ্টা কাস্টমস স্টেশন খোলা রাখার ব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রী অনুশাসন দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণায় খুশি দেশের আমদানি-রফতানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। তারা দীর্ঘদিন থেকে এমন দাবি করে আসছিলেন। আমদানি-রফতানি বাণিজ্য গতিশীল করার স্বার্থে ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে নাইট শিফট চালু তথা ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার দাবিও উঠে অনেকবার। সর্বশেষ চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছিলেন দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির স্বার্থে আমিও চাই চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম হাউস ২৪ ঘন্টাই খোলা থাকুক।
প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশনার পর আমদানি-রফতানিকারকসহ দেশের ব্যবসায়ীরা আশাবাদী হয়ে উঠেন। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে দ্রæত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা কার্যকরের তাগিদ দেয়া হয়। এ প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে সার্বক্ষণিক সেবা দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়। কাস্টম হাউসের কমিশনার এ এফ এম আবদুল্লাহ খান গতকাল মঙ্গলবার কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করে এবিষয়ে প্রস্তুতি নিতে বলেন। কর্মকর্তাদের মানসিকভাবে প্রস্তুতির পাশাপাশি যাবতীয় দাপ্তরিক প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন কমিশনার। তবে গতকাল পর্যন্ত এনবিআরের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে লিখিত কোন নির্দেশনা কাস্টম হাউসে আসেনি। কর্মকর্তারা আশা করছেন, খুব শিগগির এ বিষয়ে নির্দেশনা পাওয়া যাবে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার শওকত আলী সাদী ইনকিলাবকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে সার্বক্ষণিক কাস্টম হাউস খোলা রাখতে আমরা প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি। এনবিআর থেকে নির্দেশনা আসার সাথে সাথে আমরা যাতে কাজ শুরু করতে পারি সে লক্ষ্যে আমাদের প্রস্তুতি চলছে। আমাদের লোকবল সংকটসহ অনেক সংকট আছে। তবে আমরা আশাকরি এসব সংকট খুব শিগগির দূর হবে। আমাদের যতটুকু সামর্থ আছে তা নিয়ে আমরা কাজ শুরু করব। এদিকে এ মুহূর্তে সার্বক্ষণিক সেবা দিতে অপ্রতুল লোকবলকে প্রধান বাধা হিসাবে দেখছেন কর্মকর্তারা। অতিরিক্ত কমিশনার শওকত আলী সাদী স্বীকার করেন অনুমোদিত লোকবলের অর্ধেক পদই এখন শূণ্য। কাস্টম হাউস চব্বিশ ঘন্টা খোলা রাখতে হলে বর্তমানে যে লোকবল আছে তা অন্তত দ্বিগুণ করা জরুরী বলে মনে করেন কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে তীব্র লোকবল সংকট দীর্ঘদিন ধরে। রাজস্ব যোগানে মূল চালিকাশক্তি এ প্রতিষ্ঠানে রীতিমত ত্রাহি অবস্থা চলছে। চট্টগ্রাম কাস্টমসের মঞ্জুরিকৃত মোট পদের সংখ্যা ১২৪৮ জনের মধ্যে প্রায় অর্ধেক পদই রয়েছে খালি। ফল হিসেবে কাস্টমসের পুরো কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি স্তরে অসংখ্য পদ শূন্য। সবচেয়ে বেশি পদ শূন্য রয়েছে রাজস্ব কর্মকর্তার। জনবল সংকটের কারণে চট্টগ্রাম কাস্টমসে সময়ের কাজ সময়ে না হওয়ায় আমদানি-রফতানিকারক, সিএন্ডএফ এজেন্টসহ বন্দর ব্যবহারকারীরা দ্রæত সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
কাস্টমসের তীব্র লোকবল সংকট প্রসঙ্গে একজন কর্মকর্তা জানান, অনেক নিয়মিত ও অতিপ্রয়োজনীয় পদে লোক নেই। যার ফলে রাজস্ব আদায়ই শুধু নয়, ব্যাহত হচ্ছে নিয়মিত দাপ্তরিক কাজও। লোকবল সংকটের কারণে বিশেষ করে সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তার কয়েকশ পদ খালি থাকায় রাজস্ব আদায়ে চরম বিঘœ ঘটছে। সদ্য সমাপ্ত অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারার পেছনে লোকবল সংকটকে প্রধান কারণ বলে উল্লেখ করেন ওই কর্মকর্তা।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে আমদানি-রফতানিকারকদের হয়রানি কমাতে এবং সময় বাঁচাতে অটোমেশান চালু হলেও তার পুরো সুফল মিলছে না। এসাইকুডা প্লাস প্লাস সার্ভার স্টেশনটি ক্ষণে ক্ষণে বিকল হচ্ছে। এতে করে শুল্কায়ন কার্যক্রম প্রায়ই বিঘœ ঘটছে। ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সময়ে তৎকালীন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল হাসান নাসির ও বর্তমান ব্রিগেডিয়ার জেনারের তোফায়েল আহমদের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স অটোমেশান পদ্ধতির প্রক্রিয়া শুরু করে। একই সময়ে তারা রাজস্ব আদায়ে চট্টগ্রাম ইপিজেডের সাথে কাস্টম হাউসের সমন্বিত অটোমেশনেরও উদ্যোগ নেন।
তবে এখনও অটোমেশান প্রক্রিয়া পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। এখনও অনেক কার্যক্রম চলছে সনাতনি পদ্ধতিতে। এতে সময়ের অপচয় হচ্ছে, হয়রানির শিকার হচ্ছেন আমদানিকারকেরা। অপরদিকে চব্বিশ ঘণ্টা কাস্টম হাউস খোলা রাখার ক্ষেত্রে কাস্টম হাউসে অপ্রতুল অবকাঠামো সুবিধাকেও চ্যালেঞ্জ মনে করেন কর্মকর্তারা। বর্তমানে অর্ধেক লোকবল দিয়ে চলছে কাস্টম হাউসের কার্যক্রম। এ অবস্থায়ও কাস্টম হাউসে ঠাসা-ঠাসি করে বসছেন কর্মকর্তারা। লোকবল বাড়ানোর সাথে সাথে কাস্টম হাউস ভবনও স¤প্রসারণ করতে হবে বলে জানান কর্মকর্তারা।
সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই কাস্টম হাউস চব্বিশ ঘণ্টা খোলা থাকে। আমাদের অর্থনীতিও দিনে দিনে সমৃদ্ধ হওয়ায় আমদানি-রফতানি বাড়ছে। এর ফলে কাস্টম হাউস সার্বক্ষণিক খোলা রাখা জরুরী হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্ত যত দ্রæত বাস্তবায়ন হবে তত অর্থনীতির জন্য ভাল। এক্ষেত্রে সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশন পুরোপুরি প্রস্তুত বলেও জানান তিনি। কাস্টম হাউসের লোকবল সংকট ও অপ্রতুল অবকাঠামোর কারণে বর্তমানে ৮ ঘণ্টা কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের উচিত দ্রæত এসব সমস্যা সমাধান করা। তা না হলে সার্বক্ষণিক সেবা দেওয়া যাবেনা বলেও জানান তিনি।
দেশের জাতীয় রাজস্ব আয়ের ৩০ শতাংশেরও বেশি জোগান দেয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। সদ্য সমাপ্ত অর্থ বছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ৩৬ হাজার ৭শ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও রাজস্ব প্রবৃদ্ধির হার ১৭.৬৩ শতাংশ ছাড়িয়েছে। চব্বিশ ঘণ্টা কাস্টম হাউস খোলা থাকলে রাজস্ব আদায় দ্বিগুণ হবে এমন প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।