বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : শালিশী মিমাংসার পরও রায়পুরার দুর্গম চরাঞ্চলের অশান্ত জনপদ বাঁশগাড়ীতে শান্তি ফিরে আসছে না। ৭টি হত্যাকান্ডসহ ৪১টি মামলার জন্য আওয়ামী লীগের ২ লাঠিয়াল বাহিনীর দুই নেতাকে ১২ লাখ টাকা জরিমানা করলেও কেউই তাদের টাকা পরিশোধ করছে না। আওয়ামী লীগ নেতা সাহেদ সরকারের লাঠিয়ালদের বাধার মুখে বালুয়াকান্দী, বটতলীকান্দী ও চরমেঘনা গ্রামে ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল হক সরকারের সমর্থক কয়েকশত পরিবার গ্রামের ফিরতে পারছে না। সাহেদ সরকারের লাঠিয়ালদের বাধার মুখে ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল হক সরকার নিজ গ্রামে ঈদের নামাজ পড়তে পারেননি। লাঠিয়াল সর্দার জাবেদ মাস্টারের নেতৃত্বে সাহেদ সরকারের লাঠিয়ালরা এলাকায় ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে। সাহেদ সরকারের সমর্থক রুপমিয়া মেম্বার, আজিজুল হক, জাকির হোসেন, হাবিবুর রহমানকে ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত শালিশী দরবারের রায় কার্যকর হবে না বলে জানিয়েছে সাহেদ সরকারের লাঠিয়ালরা। আর এই ঘটনার পর থেকে বাশগাড়ীতে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। চেয়ারম্যান সিরাজুল হকের সমর্থকরা নতুন করে সংঘর্ষের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। এই অবস্থায় উভয় পক্ষের মধ্যে সাজ সাজ রব পরে গেছে। সেখানকার পরিস্থিতি আবারো অগ্নিগর্ভ আকার ধারণ করেছে।
জানা গেছে, বিগত ইউপি নির্বাচনে বাশগাড়ী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে তৎকালীন ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল হক ও আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজুর রহমান সাহেদ সরকারের মধ্যে দাঙ্গা হাঙ্গামা সৃষ্টি হয়। নির্বাচনের সময় আ’লীগ নেতা সাহেদ সরকারের সমর্থকরা ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল হক সরকারের সমর্থকদের উপর হামলা করার পর চেয়ারম্যান সিরাজুল হকের লাঠিয়ালা সাহেদ সরকারের সমর্থকদেরকে এলাকা ছাড়া করে দেয়। সে সময় এলাকায় একটি হত্যাকান্ডও সংঘটিত হয়। এই ঘটনার পর থেকে সাহেদ সরকারের সমর্থকরা দীর্ঘ প্রায় ১ বছর এলাকাছাড়া বস্থায় বিভিন্ন এলাকায় মানবেতর জীবনযাপন করে। পরে বিগত এপ্রিল মাসে সাহেদ সরকারের সমর্থকরা কয়েক দফা বন্ধুক ও টেটা যুদ্ধ করে এলাকায় ঠাই নিতে সমর্থ হয়। এরপর থেকে কয়েকটি রক্তক্ষয়ী বন্দুক ও টেটা যুদ্ধে উভয় পক্ষের আরো ৬ জন নিহত হয়। এরপরও এলাকায় ব্যাপক গোলাগুলি, বোমাবাজী, টেটা মারামারি অব্যাহত থাকায় গোটা বাশগাড়ীর ৮/৯টি গ্রামে এক অশান্ত জনপদে পরিনত হয়। রায়পুরা থানায় উভয় পক্ষে ৭টি হত্যাকান্ডসহ ৪১টি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলার আসামীদেরকে গ্রেফতার করার জন্য রায়পুরা থানা পুলিশ এলাকায় অভিযান চালাতে গেলে সাহেদ সরকারের লাঠিয়ালদের হাতে সংঘর্ষ ঘটে। পুলিশ সাহেদ সরকারের লাঠিয়াল সর্দার রুপ মিয়া মেম্বার, আজিজুল, জাকির ও হাবিবুর সহ ৯ জনকে গ্রেফতার করার পর সাহেদ সরকারের লাঠিয়ালরা পুলিশের উপর পাল্টা আক্রমন চালায়। পুলিশ আসামীদেরকে নিয়ে বাশগাড়ী পুলিশ ফাড়িতে আশ্রয় নিলে সাহেদ সরকারের লাঠিয়ালরা সেখানে হামলা চালিয়ে কয়েকজন আসামীকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এই ঘটনার পর রায়পুরা থানা পুলিশ কয়েকশত লোককে আসামী করে রায়পুরা থানায় একটি মামলা দায়ের করে। এই ঘটনার পর থেকে লাঠিয়াল সর্দার রুপ মিয়া মেম্বার, আজিজুল, জাকির ও হাবিবুর নামে ৪ লাঠিয়াল সর্দার রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যায়। সাহেদ সরকারের সমর্থকরা জানায়, পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। পক্ষান্তরে পুলিশ জানায় সাহেদ সরকারের সমর্থকরা তাদেরকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। এ ঘটনার পর থেকে রুপ মিয়া মেম্বারসহ ৪ জনের কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। এরই মধ্যে গত ২১ মে রায়পুরা এমপি ও সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু রায়পুরার রাজিউদ্দিন মিলনায়তনে বসে উভয় পক্ষকে ডেকে ঘটনার মিমাংসা করে দেন। তিনি সাহেদ সরকারকে ৭ লাখ এবং চেয়ারম্যান সিরাজুল হককে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেন। কিন্তু এই মিমাংসা এখনো কার্যকর করতে চাইছে না সাহেদ সরকার ও তার লাঠিয়াল বাহিনী। এইর্ অবস্থায় চেয়ারম্যান সিরাজুল হকের সমর্থকরা সাহেদ সরকারের সমর্থকরদেরকে থেকে হটিয়ে এলাকা দখল নেয়ার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। দুই পক্ষের লাঠিয়ালদের ব্যাপক প্রস্তুতির মুখে এলাকার শান্তিপ্রিয় জনগন সার্বক্ষণিক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। তারা আশংকা করছে যে কোন সময়ই ২ পক্ষের লাঠিয়ালদের মধ্যে আবারো বন্দুক যুদ্ধ বেধে যেতে পারে। এবারের বন্দুক যুদ্ধ হতে পারে অতীতের কয়েকটি বন্দুক যুদ্ধের চেয়ে আরো ভয়াবহ। ঘটতে পারে আরো ভয়াবহ প্রাণহানী, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।