Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বর্ষণে চট্টগ্রাম মহানগরীর সড়কে ক্ষতি ৫শ’ কোটি - চসিক মেয়র

| প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, সাম্প্রতিক বর্ষণে চট্টগ্রাম নগরীর ১১শ’ ৭৪ কি.মি. সড়কের মধ্যে সাড়ে ৩শ’ কি.মি. সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়ক ও রাস্তাঘাটের ক্ষতির পরিমাণ ৫শ’ কোটি টাকা। গতকাল (সোমবার) নগর ভবনের কে বি আবদুচ ছত্তার মিলনায়তনে নগরীর পানিবদ্ধতা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সড়ক সংস্কার বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মেয়র একথা বলেন।
সিটি মেয়র বলেন, এসব ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও রাস্তাঘাট জরুরী ভিত্তিতে মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। বর্তমানে বৃষ্টির সময় ব্রিক সলিং ও খোয়া দ্বারা মেরামত করা হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া ফিরে আসলে বিভাগীয় এ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট দ্বারা কার্পেটিং করে দেয়া হবে। আগামী এক বছরের মধ্যে মানসম্মত রাস্তা নির্মাণ করা হবে। জিওবি প্রকল্পের আওতায় আগামী মাসের প্রথমদিকে নতুন একটি এ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট বসানো হবে যাতে কর্পোরেশনের সড়কের মেরামত কাজ স্বল্প সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে। মেয়র নাছির বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে স্বল্পমেয়াদী পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে নগরীর অনেক এলাকায় পানিবদ্ধতা ৫০ শতাংশ কমে গেছে। তিনি বলেন, আমরা বসে নেই, পানিবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছি। মেয়র পানিবদ্ধতা নিয়ে ঘোলাপানিতে মাছ শিকার বা রাজনীতি না করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সবার সহযোগিতা পেলে চট্টগ্রাম নগরীর পানিবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব হবে।
বিটুমিন মেশানো পাথর গর্তের পানিতে ঢেলে সড়ক সংস্কার প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, সাধারণত মিক্সারের তাপমাত্রা ১শ’ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত বজায় থাকলে তা ব্যবহার উপযোগী হবে। তাপমাত্রা ১শ’ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড থেকে কমে গেলে তা ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তাই উক্ত হুইল ব্যারো মিক্সার একেবারে ফেলে না দিয়ে গর্তে ঢেলে দেয়া হয়। সিটি মেয়র বলেন, মহেশখালে বাঁধ নির্মাণের ফলে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় গত মাসে তা অপসারণ করা হয়। মহেশখাল, চাক্তাইখালসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খালে এস্কেভেটরের মাধ্যমে মাটি উত্তোলন ও অপসারণ কাজ চলমান রয়েছে। তা ছাড়াও মহেশখাল থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত একটি ড্রাইভারশান খাল খনন বিষয়ে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। যাতে বর্ষণজনিত কারণে সৃষ্ট পানি সহজে বঙ্গোপসাগরে চলে যেতে পারে। মেয়র বলেন, সিটি গভর্নেন্স প্রকল্পের আওতায় জাইকার অর্থায়নে ১শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে মহেশখাল, সুরভীখাল, ডাইভারশন খালে খাল সংলগ্ন রাস্তা ও রিটেইনিং ওয়ালের কাজ চলমান রয়েছে এবং প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮টি ব্রীজ নির্মাণ করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম নগরীর সংসদ সদস্যদের এলাকায় নির্ধারিত প্রকল্পে ডোমখালের উপর ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রীজ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।
আ জ ম নাছির বলেন, নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে অবস্থিত ১৪৪ কি.মি. খাল এবং প্রায় ৬শ’ কি.মি. নালা-নর্দমা পরিষ্কার করার জন্য ১৮ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু কাজ সমাপ্ত হয়েছে। কিছু কাজ চলমান রয়েছে এবং অবশিষ্ট কাজের কার্যাদেশ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়াও শ্রমিক নিয়োগ করে নিজস্ব ও ভাড়াকৃত এস্কেভেটরের মাধ্যমে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ খালসমূহে প্রতিনিয়ত মাটি উত্তোলনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, প্রতি বছর বর্ষাকালে পাহাড় থেকে নেমে আসা বালিতে নালা-নর্দমা ভরাট হয়ে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। ফলে ভরাটকৃত বালি ও ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করার জন্য প্রকল্প নেয়া হয়। গত অর্থবছরেও নালা-নর্দমা পরিষ্কার করার জন্য ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নালা-নর্দমা পরিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়াও বিমানবন্দর সড়কের সিমেন্ট ক্রসিং থেকে রুবি সিমেন্ট ফ্যাক্টরী পর্যন্ত রাস্তার অংশে পানিবদ্ধতা দূরীকরণের জন্য ৪ হাজার ৬শ’ ফুট ড্রেইন নির্মাণ কাজের জন্য ৬ কোটি ২৪ লাখ ৩২ হাজার টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। মেয়র বলেন, প্রায় ৩২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বহদ্দারহাট বারইপাড়া হয়ে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এ খাতে বর্তমানে ৬০ কোটি টাকা মন্ত্রণালয় থেকে ছাড় দেয়া হয়েছে। যা ভূমি অধিগ্রহনের জন্য ব্যয় হবে। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন বন্যা ও পানিবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাসমূহের উন্নয়ন এবং নালা, প্রতিরোধ দেয়াল, ব্রীজ ও কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পে ৭শ’ ১৬ কোটি ২৮ লাখ টাকার আওতায় ২৩৪টি রোড সংলগ্ন ড্রেইন, ৬৯টি ড্রেইন, ২২টি ব্রীজ, ৪টি কালভার্ট নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া চীনের সরকারী প্রতিষ্ঠান পাওয়ার চায়নার সাথে পানিবদ্ধতা নিরসনকল্পে ২৭টি ¯øুইচ গেইট, বড় খাল সমূহের দু’পাশে রিটেইনিং ওয়াল এবং খালসমূহের ড্রেজিংয়ের জন্য ৫ হাজার ৬শ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পটি পিডিপিপি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন হয়েছে এবং প্রকল্পটি জি টু জি এর মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য ইআরডি-তে প্রেরণ করা হয়েছে। বর্তমানে ডিপিপি প্রস্তুতির কাজ চলছে।
মহেশখালের কার্যক্রম এবং আগামী পরিকল্পনা বিষয়ে একটি ম্যাপ তুলে ধরে সিটি মেয়র বলেন, মহেশখালের পানি কর্ণফুলী নদীতে প্রবাহের পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরে প্রবাহের লক্ষ্যে ড্রাইভারশান খাল খনন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। নগরীর খালগুলোর জরিপ কাজ চলমান আছে। জরিপ শেষে খালের দু’পাড়ে রাস্তা নির্মাণ এবং অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। খালের পাড়ে কোন বসতি গড়ে তুলতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, পানিবদ্ধতা নানা কারণে সৃষ্টি হয়, তৎমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন, সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি, কাপ্তাই বাঁধের পানি ছাড়া, অতিবর্ষণ, পাহাড়ের বালি মাটি মিশ্রণ, খাল-নালা দখল, জলাধার ও জলাশয় কমে যাওয়া এবং খাল-নালার ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া। তিনি বলেন, জনস্বার্থে নগরীর জলাশয় আর জলাধার আর ভরাট করা যাবে না। কেউ পুকুর ভরাট করলে চসিককে জানানোর জন্য তিনি নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ জানান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর হাসান মুরাদ, নাজমুল হক ডিউক, এইচ এম সোহেল, মোঃ মোরশেদ, চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সামসুদ্দোহা প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ