Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাস পেরোলেও তদন্তে অগ্রগতি নেই : পিতার প্রশ্ন

| প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বগুড়ায় ম্যাটস ছাত্রী মুনের মৃত্যু রহস্য কি অনুদঘাটিত থাকবে ?
বিশেষ সংবাদদাতা, বগুড়া থেকে : এক মাস পার হয়ে গেলেও বগুড়া টিএমএসএস ম্যাটস এর শিক্ষার্থী ইসমত আরা পারভীন মুনের (২০) রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা অনুদঘাটিতই রয়ে গেল। উদ্ধার হলনা মৃত্যুর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত তার কাছে থাকা দুটি মোবাইল ফোন সেট।
এদিকে নিহত ম্যাটস ছাত্রী মুনের পিতা গাজিউর রহমানের ধারণা, তার মেয়ে আত্মহত্যা করেনি পরিকল্পিতভাবে তাকে করে হত্যা করা হয়েছে। তবে আত্মহত্যার প্ররোচনা হিসেবে মামলাটি গ্রহণ করে বগুড়া সদর থানা পুলিশ তদন্ত করছে। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে মুনের মৃত্যুর ঘটনায় মিজানুর রহমান মিজান নামে সন্দেহভাজন একব্যক্তির নাম শনাক্ত হবার হওয়ার পর থেকেই মামলার তদন্ত রহস্যজনকভাবে শ্লথ হয়ে পড়েছে। কারণ সন্দেহভাজন মিজান একটি প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। উল্লেখ্য বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার হলিদাবগা গ্রামের গাজিউল ইসলামের মেয়ে ইছমত আরা পারভীন মুন টিএমএস মেডিক্যাল এ্যাসিসেটেন্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) থেকে এবার চুড়ান্ত পর্বের (তৃতীয় বর্ষ) পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি টিএমএসএস ম্যাটস সংলগ্ন একটি ছাত্রী মেসে কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ থাকতেন। ৩০ মে রাত সাড়ে ১১ টার দিকে টিএমএস মেডিকেল কলেজ ও রফাতউল্লাহত কমিউনিটি হাসপাতালের নীচ তলায় পুর্বপার্শ্বের লিফটের জন্য নির্ধারিত স্থানে তার লাশ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ যখন ইসমত আরা মুনের লাশ উদ্ধার করে তখন তার সঙ্গে থাকা দুটি মোবাইল ফোন পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি। অথচ মৃত্যুর কিছু সময় আগে হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে তাকে তার কাছে রাখা দুটি মোবাইল ফোনের একটিতে কথা বলতে দেখা গেছে। তার ছাত্রী মেসের বান্ধবীরা জানিয়েছে, ২৯ মে ইসমত আরা মুন মেসে নিজ হাতে ইফতার তৈরী করলেও ইফতারের পুর্ব মুহুর্তে একটি ফোন কল পেয়ে ইফতার না খেয়েই তড়িঘড়ি করে মেস থেকে বের হয়ে যান। এরপর দীর্ঘসময় তিনি কোথায় ছিলেন জানা না গেলেও রাত ১১টা ৪ মিনিটের সময় তিনি টিএমএমএসএস হাসপাতালের ৪র্থ তলা ফ্লোর থেকে সিকিউরিটিদের বাধা উপেক্ষা করে ১৮ তলা ভবনের উপরের দিকে চলে যান। এর আধাঘন্টা পরেই ভবনের লিফটের নির্মিয়মান অংশের নিচে ভারি বস্তু পতনের শব্দ হয়। সেখানে লোকজন ছুটে গিয়ে দেখতে পায় মুনের মৃতদেহ। পরে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরী ও ময়না তদ›েতর জন্য লাশ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
১৮ তলার এই হাসপাতাল ভবনের কোনতলা থেকে ইসমত আরা নীচতলায় লিফটের জায়গায় পড়েছে বা তাকে কেউ জীবিত বা মৃত অবস্থায় ফেলে দিয়েছে কিনা পুলিশ এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি। ইসমত আরা মুনের মৃত্যুর ঘটনায় তার পিতা গাজিউল ইসলাম বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে বগুড়া সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় আত্মহত্যা প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগ এনে বলা হয়, ম্যাটস-এ লেখাপড়া করার সময় ইছমত আরার সঙ্গে বগুড়া শহরের মালতিনগর বকশিবাজার এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে রাহাতের প্রেমের সর্ম্পক ও পরে বিয়ে হয় কিন্তু এই বিয়ে রাহাতের পরিবার মেনে নিতে রাজী হয়নি। ইছমত আরার মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় রাহাত ও তার বাবা মাসহ মিজানুর হোসেন মিজান নামে অপর এক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। ঘটনার পর ম্যাটস শিক্ষার্থীরা এই হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে আন্দোলনও করেন। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, যে ফোন কল পেয়ে ইছমত আরা মেস থেকে বের হয়ে এসেছিলো তা ছিলো মিজানের আর ঘটনার দিনে মিজানের সঙ্গে ইসমত আরার ১৫/২০ বারে মোট প্রায় সাড়ে ৪ ঘন্টার মতো কথা হয়েছে। এছাড়া মিজানের সঙ্গে ইছমত আরার ঘনিষ্ট কিছু ছবিও পুলিশ পেয়েছে। তবে তাকে পুলিশ তাকে গ্রেফতারের আগেই সে আদালত থেকে জামিন নিয়েছে। পুলিশ সুত্র জানায়, ইসমত আরার স্বামী এসএম সায়েম রাহাতের সঙ্গে পারিবারিক বিরোধের সুযোগে মিজান ইসমত আরা মুনের ঘনিষ্ট হয়। বগুড়া সদর থানার ওসি এমদাদ হোসেন জানিয়েছেন, মিজান এই মামলার মুল কেন্দ্রবন্দিুতে থাকলেও বর্তমানে সে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। কোনো বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে পরিকলল্পনা করেই ইসমত আরার মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটনা হয়েছে। পারিপার্শ্বিক ঘটনা ও তথ্য প্রমান দেখে মামলাটি হত্যা মামলায় মোড় নিতে পারে বলেও ওসি জানান। এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টার আবুল কালাম আজাদ জানান, ঘটনার সঙ্গে মিজান ছাড়াও একাধিক প্রভাবশালী জড়িত। তাদের চিহ্নিত করাও হয়েছে। খুব দ্রæতই এর রহস্য উন্মোচন হবে। অপর দিকে মামলার বাদী ইসমত আরা পারভীনের বাবা গাজিউল ইসলাম জানান, তারা নিশ্চিত যে তাদের মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে তা আত্মহত্যার চেষ্টা বলে চালানোর চেষ্টা করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ